আলোর মুখ দেখছে না চাঞ্চল্যকর খুনের মামলাগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আলোর মুখ দেখছে না বরিশালে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর খুনের মামলাগুলো। এসব মামলার তদন্ত চললেও এখন পর্যন্ত বেশিরভাগই দেখেনি আলোর মুখ। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, পুলিশের অদক্ষতা ও অজ্ঞাত কারণে চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রহস্য অনুদ্ঘাটিত রয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার বিচার না পেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় জীবনযাপন করছে। এসব খুনের মামলার তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধ অর্থনৈতিক বাণিজ্যে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। সূত্র মতে, বরিশাল সদর উপজেলার ৫ নং চরমোনাই ইউনিয়নে প্রায় দেড়মাস আগে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন হয় দলিল লেখক রেজাউল করিম রিয়াজ। নিহতের স্ত্রী লিজার পরকিয়া প্রেমিক মাসুমের সহায়তায় দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে রিয়াজকে খাইয়ে দেয়। এরপর রিয়াজ ঘুমিয়ে পড়লে গভীর রাতে তারা দুজন ও হাইল্যা (ইদ্রিস) নামে অপর আরো একজন মিলে একে অপরের যোগসাজশে রিয়াজকে খুর ও দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। রিয়াজের স্ত্রী লিজাকে আসামী হিসেবে কোতয়ালী থানা পুলিশ আটক করে কোর্টে প্রেরণ করে। পরে ১৬৪ ধারায় লিজা আদালতে জবানবন্দী দেয়। জবানবন্দীতে নিজে এবং মাসুম ও হাইল্যা (ইদ্রিস)’র জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে। এদিকে মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বশির প্রায় চার মাস তদন্তের দ্বায়িত্বে থাকলেও হত্যার মূল আসামি মাসুমকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়। পাশপাশি আসামীদের থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ারও অভিযোগ উঠে তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এরপর তাকে সরিয়ে পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার দেয়া হয় এসআই ফিরোজ আল মামুনকে। তিনিও ইতিমধ্যে প্রায় নয় মাস অতিবাহিত করলেও মুল ঘাতক মাসুমকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়নি। পুলিশের এমন ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে চরমোনাইসহ গোটা বরিশালের সুধিজন। অপরদিকে প্রাণনাশের হুমকিতে রয়েছে মামলার বাদীর পরিবারসহ অন্যান্য স্বজনরা। এব্যাপারে নিহত’র ভাই ও মামলার বাদী, উষ্মা প্রকাশ করে বলে, প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই বশির প্রায় ৫লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামীকে আটক করেনি। এরপর বর্তমান এস আই মামুনও একই পন্থায় আসামীকে আটক করছে না। মামলার বাদি আরো জানায়, মামলায় সম্প্রতি রিয়াজের স্ত্রী জামিনে রয়েছে। আর অপর প্রধান আসামী মাসুমকে আটক করতে ব্যর্থ তদন্ত কর্মকর্তা। যেকারনে মামলাটির অগ্রগতি হচ্ছেনা। বাদী মনিরুল ইসলাম রিপন আরো বলে, মামলা করেছি ভাইকে ফেরত পাবার জন্য নয়, ভাইকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচারের জন্য। কিন্তু এখন দেখছি উল্টো মামলা কেন করেছি সেজন্য আসামী মাসুমের ভাই মনির ও তার ছেলে সাগরসহ একটি চক্র প্রায় হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের। তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগেও আমার ভাইয়ের হত্যাকারী মাসুমকে গ্রেফতারে এখনো ব্যর্থ পুলিশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, আসামি মাসুম একজন পেশাদার খুনি। এঘটনার আগেও সে হত্যা মামলার আসামি ছিলো। ঘাতক মাসুম লঞ্চে চাকুরীর সুবাধে বিভিন্ন পেশা শ্রেণীর লোকের সাথে সখ্যতা হয়। এরই সুত্র ধরে অপরাধ জগতের পদার্পন ঘটে। দলিল লেখক রিয়াজকে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যায় খুনী মাসুম। কিন্তু মাসুমের স্ত্রী সন্তান ও স্বজনরা বরিশাল ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে দিনের পর দিন দেখা করলেও শুধুমাত্র তদন্তকারী কর্মকর্তার চোখে পরছেনা। এমনকি চরমোনাই এলাকায় গভীর রাতে এলাকাবাসী দেখলেও তদন্ত কর্মকর্তা খুঁজে পাচ্ছে না। অপরদিকে নগরীর স্টীমারঘাট জামে মসজিদ সংলগ্ন ঔষধের দোকানী আলোচিত শিরিন হত্যাকান্ডের ঘটনায় পুলিশের ঘুষ বাণিজ্যের কারনে ঘাতকরা বেশ আয়েশে দিনযাপন করছে। আর আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও কোতয়ালি মডেল থানার এস আই মামুন। মামলার বাদী সুত্রে আরো জানা গেছে, শিরিন হত্যকান্ডের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাতজন আসামীর একজনও আটক কিংবা জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। অথচ আসামীরা স্টীমার ঘাট এলাকায় প্রকাশ্যে দিবালোকে নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যবসা পরিচালনা করছে। শুধু তাই নয়, মামলাটির আসামী মারুফ ও আলো গংরা বাদীকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য হুমকিসহ প্রলোভন দেখায়। এদিকে আসামী পাকড়াও না করার ব্যাপারে কোতয়ালি থানার এসআই মামুন বারবারই দাবি করে আসছে আসামীদের ধরার চেষ্টা চলছে। এরমধ্যে কোন কোন আসামী উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে আসলে তার মেয়াদও শেষ হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু এরপর আসামীরা বেশ খোলামেলাই ঘুরে বেড়ায়। সংশ্লিষ্ট স্থানীয়রা আসামীদের দেখলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখতে পাচ্ছেনা। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, এসআই মামুনের সাথে আসামী আলো গংদের পুর্ব সখ্যতা থাকার সুবাধে প্রত্যেক আসামী থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। উল্লেখ্য শিরিন হত্যাকান্ডে ফেইসবুক লাইভে আসামীর নাম পরিচয়সহ উল্লেখ থাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছিলো। এব্যাপারে স্টীমারঘাট এলাকার ব্যবসায়ীরা জানায়, এতবড়ো একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের হওয়ার পরও একজন আমাীকেও পুলিশ ধরেনি এমনকি জিজ্ঞাসাবাদও করেনি। অথচ উক্ত ঘটনার মাসের পর মাস পেরিয়ে গেছে। বরিশাল সদরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ড দুটির মামলায় কোন অগ্রগতি না থাকার ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খান বলেন, দলিল লেখক রিয়াজ হত্যাকান্ডের বাদীর যদি তদন্তকারী কর্মকর্তার ব্যাপারে কোন অভিযোগ থাকে তাহলে বিষয়টি অতিস্বত্ত্বর আমলে নেয়া হবে। আর অপর প্রধান আসামী মাসুমকে কেন ধরা হয়নি এবিষয়েও বিভাগীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া হবে। শিরিন হত্যাকান্ডে আসামী না ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, এ মামলাটিতে তদন্ত কার্যক্রম কিংবা চার্জশীট না দেয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা যাবে না। কারণ আসামী ধরা-না ধরা উভয়ই ন্যায় বিচার। সেক্ষেত্রে মামলাটিতে চার্জশীট দিলে তখন এ প্রশ্নের সমাধান বেরিয়ে আসবে।