যেভাবে তিলে তিলে শেষ করা হচ্ছে উইঘুরদের

কামরুন নাহার | ০৯:২৬, ফেব্রুয়ারি ১০ ২০২০ মিনিট

ঝিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের বর্বরতা সীমা ছাড়িয়ে গেছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়। ১০ লাখ উইঘুর নারী-পুরুষকে সুরক্ষিত শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। বেইজিং সরকারের দাবি এটা ‘চরিত্র সংশোধনাগার’। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে উইঘুর মুসলিমদের গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত মাসে প্রখ্যাত হুই মুসলিম কবি Kwe Cui Haoxin-কে গ্রেফতার করা হয়েছে এই বন্দীদের মুক্তি দাবি করে কবিতা লেখার ‘অপরাধে’। নির্যাতনের খবর যাতে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ শিথিল ও বাধগ্রস্ত করা হচ্ছে। বিদেশী সাংবাদিকদের জন্য ঝিনজিয়াং প্রদেশে ভ্রমণ নিষিদ্ধ। উইঘুর জনগোষ্ঠীর দাবি, তারা এই পর্যন্ত কোনো সহিংস পদক্ষেপ নেয়নি। অপর দিকে, চীনা কর্তৃপক্ষ উইঘুরদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি অন্যত্র সরিয়ে নিতে চায়। আন্তর্জাতিক কোনো সশস্ত্র বা জঙ্গি সংগঠনের সাথে উইঘুরদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মিলেনি। চীন সরকার সে দেশের মুসলমানদের জাতিসত্তা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্য মুছে ফেলার লক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে বলে অভিযোগ। প্রায় ৯০ লাখ মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলের নাম ছিল ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’। চীনা কর্তৃপক্ষ নাম দিয়েছে ঝিনজিয়াং (পশ্চিমের অংশ)। পুরনো মসজিদগুলো সংস্কারের অভাবে জীর্ণশীর্ণ হয়ে গেছে। নতুন মসজিদ তৈরি, সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের অনুমতি নেই। পুরনো মসজিদ সংস্কার করতে হলে বৌদ্ধমন্দিরের আদলে নাকি গড়তে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা নিতে হয় সংগোপনে। পবিত্র হজ পালনকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। হুই জেলার লিউ কাউলান ও কাশগড়ের প্রাচীনতম মসজিদে জুমার নামাজ আদায়ে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এসব মসজিদের প্রত্যেকটিতে এক হাজার মানুষ নামাজ আদায়কালে একশ’ জন পুলিশ অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে মসজিদের চারপাশে দণ্ডায়মান থাকে প্রতি জুমাবার। মসজিদের দরজায় পোস্টার লাগানো হয়েছে ‘নামাজ পড়ার জন্য ঘরে যাও’ ("Go home to pray")। ধর্মকর্ম পালনের অধিকার সীমিত হয়ে পড়েছে চীনে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ভূমিকা দায়সারা গোছের। সু সম্রাটের (৯৬০-১২৭৯) রাজত্বকালে মুসলমানরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে। মিং রাজত্বকাল (১৩৬৮-১৬৪৪) ছিল মুসলমানদের জন্য ‘স্বর্ণযুগ’। এ সময় মুসলমানরা নিজেদের সংস্কৃতিকে ধরে রেখে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়। চিং রাজত্বকালে (১৬৪৪-১৯১১) চীনের পরিস্থিতি নাটকীয় মোড় নিলে মুসলমানরা বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছিল। রাশিয়ার সৈন্যরা ১৮৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কিস্তানের পশ্চিমাংশ দখল করে নিয়ে পাঁচটি Republic এ বিভক্ত করে ফেলে। ১৮৮৪ খ্রিষ্টাব্দে চীনের মাঞ্চু সরকার তুর্কিস্তানের পূর্বাংশ দখলে নিয়ে এর নামকরণ করে ‘উইঘুর-ঝিনজিয়াং’। ঝিনজিয়াংয়ের অর্থ হচ্ছে ‘নতুন সীমান্ত’। চীনের পুরো ভূখণ্ডের পাঁচ ভাগের এক ভাগ নিয়ে গঠিত এই প্রদেশের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ। বেশির ভাগ মুসলমান যারা উইঘুর, হুই, তাজিক, কাজাখ, কিরগিজ, উজবেক, মঙ্গোলিয়া ও তুর্কি বংশোদ্ভূত। চীনা কমিউনিস্টরা ধর্ম, ভাষা ও জাতিগত বিশেষত্বের জন্য ঝিনজিয়াং প্রদেশকে ‘স্বায়ত্তশাসিত’ বললেও আসলে এটা আইওয়াশ মাত্র। সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে কঠোর নিগড়ে আবদ্ধ এ প্রদেশের জনগণ সরাসরি বেইজিং দ্বারা শাসিত ও পরিচালিত। পূর্ব তুর্কিস্তান হাজার বছর ধরে ছিল স্বাধীন রাষ্ট্র। এশিয়া মহাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্যপথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই পূর্ব তুর্কিস্তান। আন্তঃমহাদেশীয় পরিবহন ও সড়ক যোগাযোগের ভূ-কৌশলগত অংশ ছাড়াও তুর্কিস্তান মুসলিম বিশ্বের পূর্বাঞ্চলীয় ফ্রন্টের একটি ‘সুরক্ষিত দুর্গ’, যার প্রান্ত সীমায় রয়েছে বিস্তৃত মুসলিম জনপদ, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ উর্বরভূমি। কালের প্রবাহে মুসলিম বিশ্ব যখন আহত, ভঙ্গুর ও নির্বীর্য হয়ে পড়ে, তখন তুর্কিস্তান অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রের মতো বৈরী শক্তির অধীনে চলে যায়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে যেখানে ঝিনজিয়াং এ মুসলমানদের সংখ্যা ছিল ৮৫ শতাংশ, সেখানে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এসে দাঁড়ায় ৪৮ শতাংশে। এখন তা আরও কম।ঝিনজিয়াং দখলের পর থেকে চীনা কর্তৃপক্ষ এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের নানাবিধ হয়রানি করে আসছে, চালাচ্ছে নৃশংসতার স্টিমরোলার এবং হরণ করছে মৌলিক অধিকার। অভিযোগ হলো, নীলনকশার মাধ্যমে এ প্রদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও আর্থসামাজিক স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং ভাষাগত ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে কালান্তরে উইঘুররা তাদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হারিয়ে চীনের কমিউনিস্ট ও হান মূলস্রোতের সাথে মিশে যাবে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মতো, চীনা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন গ্রাম ও শহর থেকে ‘হান’ জাতিগোষ্ঠীর বৌদ্ধদের আগে তুর্কিস্তানে এনে বসতি গড়ে তোলার কাজে হাত দিয়েছে। নতুন বসতি স্থাপনকারীদের দেয়া হচ্ছে ব্যাপক আর্থিক সুবিধা। ফলে তুর্কিস্তানের জনমিতি পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। এখন পূর্ব তুর্কিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশ হচ্ছে নতুন বসতি স্থাপনকারী। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে বহিরাগত হানরা হয়ে যাবে ঝিনজিয়াংয়ের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। নিজ মাতৃভূমিতে উইঘুররা হয়ে পড়বে পরবাসী ও অপাঙ্ক্তেয়। উইঘুরদের ইসলামী পরিচয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ বিনষ্ট করে দেয়ার উদ্দেশ্যে আন্তঃধর্মীয় বিয়েকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। মুসলিম যুবকদের ৪০০ মার্কিন ডলার করে দেয়া হচ্ছে বৌদ্ধ মেয়েকে বিয়ে করার জন্য। ইসলামী পোশাক পরিধানে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে মুসলিম মেয়েদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিয়ে, তালাক, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত মুসলিম আইন ও বিধানের কার্যকারিতা সুকৌশলে মুছে ফেলার জন্য কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত তৎপর। মাদক দ্রব্যের অপব্যবহার, ধনী বৌদ্ধদের কাছে দরিদ্র মুসলিম বালিকাদের বিক্রয়, দরিদ্রতা, অশিক্ষা এবং বেকারত্ব ঝিনজিয়াংয়ের মানুষের জীবনসঙ্গী হয়ে আছে। মুসলমানদের জন্মহার একেবারে নিম্নপর্যায়ে যাতে নেমে যায়, তার জন্য জন্মশাসন ও বন্ধ্যাকরণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ প্রদেশের একটি শহরকে ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক বিস্ফোরণের জন্য বাছাই করা হয়েছে। ১৯৬৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪০টি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে এ অঞ্চলের জনগণ ও পরিবেশের ভারসাম্যের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে ‘সাংস্কৃতিক’ বিপ্লবের পর দেশত্যাগীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ঝিনজিয়াংয়ের ২৫ লাখ অধিবাসী পার্শ্ববর্তী দেশে অবস্থান করছে। উইঘুরদের মধ্যে বঞ্চনার বেদনা তীব্রতর হচ্ছে। ২০০১ সালে হুতান শহরে অভিযান চালিয়ে সেনাবাহিনী শায়খ আবদুল কাইউম নামক এক ধর্মীয় নেতাসহ বিপুল সংখ্যক মুসলমানকে গ্রেফতার করে এবং ২৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। প্রায় দশ শতাব্দী ধরে পূর্ব তুর্কিস্তানের জনগণ কৃষি ও কুটির শিল্প উৎপাদন, বিপণন, পুঁজি বিনিয়োগ এবং আমদানি-রফতানির মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করেছিলেন। চামড়া ও রেশমজাত দ্রব্য ও নকশাদার টুপির ব্যবসায়ে তাঁরা দক্ষতার পরিচয় দেন। ‘সাংস্কৃতিক’ বিপ্লবের পর কেন্দ্রীয় সরকারের বৈষম্য নীতির ফলে এ অঞ্চলের মুসলমানরা অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ব্যবসা তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। পূর্ব তুর্কিস্তান প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষত তেল, ইউরেনিয়াম, কয়লা এবং স্বর্ণে সমৃদ্ধ। তা সত্ত্বেও এটা হচ্ছে চীনের দরিদ্রতম প্রদেশ। কারণ চীনা কমিউনিস্টরা এ প্রদেশে জনগণকে বঞ্চিত করে তাদের প্রাকৃতির সম্পদ লুটে নিচ্ছে। উইঘুর-ঝিনজিয়াং প্রদেশের জনগণের গড়ে বার্ষিক মাথা পিছু আয় মাত্র ৪৫ মার্কিন ডলার। অনেকে অর্ধাহারে-অনাহারে ও বিনা চিকিৎসায় মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। চীনা কর্তৃপক্ষ ১৮ লাখ ২৮ হাজার ৪১২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ঝিনজিয়াংয়ের ৬০ শতাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে থাকে যদিও এ অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের নিয়মিত আহারও জুটে না। মুসলিম জাতিসত্তা মুছে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৯৫০ সালে Bin Tuan I XPCC সংগঠনের মাধ্যমে। চীনা কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে ঝিনজিয়াংয়ের আর্থ-রাজনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ সুকৌশলে নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। বর্তমানে ২০০ কৃষিজাত কোম্পানি, ১২টি কারখানা ও পুরো হোটেলব্যবসা ওই সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে। ১৯৮৯ সালে ঝিনজিয়াংয়ের তেলের খনিতে ২০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার এর মধ্যে একজনও মুসলমান নেই। এ অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষার সুযোগও অত্যন্ত সীমিত। মুসলিম তরুণ সম্প্রদায় যাতে করে তাদের ধর্ম, ভাষা, ঐতিহ্য ও ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে সে উদ্দেশ্যে সুকৌশলে তাদের অশিক্ষিত রাখা হচ্ছে। প্রদেশের রাজধানী উরুমকিতে অবস্থিত এ অঞ্চলে উচ্চতর শিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঝিনজিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলমান ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হাতেগোনা। ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি কমিউনিস্টরা একেবারে খড়গহস্ত। ১৯৯৬ সাল থেকেই প্রদেশের ৪০টি শহর ও গ্রামে অবস্থিত মাদরাসা ও হিফজখানার ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। ফলে এ শিশু-কিশোররা ধর্মীয় জ্ঞান ও কুরআনে পাক হিফজ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত। ১৮ বছরের নিচে, শিশু-কিশোরদের জন্য ধর্মীয়শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। চীনা কর্তৃপক্ষ ঝিনজিয়াংয়ের মুসলমানদের তুর্কি ভাষায় কথা বলায় এবং আরবি বর্ণমালা ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরওপ করেছে। ২০টি নতুন মসজিদ নির্মাণ স্থগিত এবং ৫০টি পুরনো মসজিদ তালাবদ্ধ করে দিয়েছে। জুমার খুতবা প্রদানে ইমামদের ওপর সেন্সরশিপ রয়েছে। প্রকাশ্যে ইসলামী শিক্ষা প্রদানে বিধিনিষেধ থাকায় অতি সঙ্গোপনে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়। তবুও তা তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হওয়ায় দ্রুত বিকাশ লাভ করছে শহরে ও গ্রামে। অতি সম্প্রতি মক্কাভিত্তিক রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে পবিত্র কুরআনের তিন লাখ কপি ঝিনজিয়াং প্রদেশের মুসলমানদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য পাঠিয়েছে। কিন্তু কমিউনিস্ট কর্তৃপক্ষ সব কপি বাজেয়াপ্ত করে ফেলেছে। পরে অবশ্য আন্তর্জাতিক মুসলিম সম্প্রদায়ের চাপে কিছু কপি ফেরত দেয়া হয়। মুসলমানদের প্রতি বেইজিং কর্তৃপক্ষের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা অযৌক্তিক ও ন্যক্কারজনক। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মাও সে তুংয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হয়। সে সময় ২৯ হাজার মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিছুদিন আগে ঝিনজিয়াং প্রদেশের মুসলমানরা যখন ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের জন্য প্রধান মসজিদে জমায়েত হয় তখন হাজার হাজার পুলিশ মসজিদ ঘেরাও করে রাখে এবং শ্রদ্ধেয় ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব খাজা মুহাম্মদ ইয়াকুবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। মুসলমানরা এ কারণে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। পুলিশ স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলি চালিয়ে ১০০ জনকে হত্যা করে এবং বিপুল সংখ্যক মুসলিমকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে জেলে আটকে রাখে। ঘটনার পরপরই পুরো শহর সিল করে দেয়া হয় এবং সাঁজোয়া যান টহল দিতে থাকে। বিগত পাঁচ বছরে এ রকম ঘটনায় মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতি যখনি আহত হয়েছে এবং তারা প্রতিবাদ করতে চেয়েছে, তখনি তাদের ওপর নেমে এসেছে নির্যাতনের খড়গকৃপাণ। চীনে মুসলমানদের ইতিহাস এক হাজার ৪৫৮ বছরের। জোর করে তাদের নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। চীনের মাটির গভীরে তাদের শেকড়। ইসলামের প্রাথমিক যুগে সাহাবা হজরত আবি ওয়াক্কাস রা:-এর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দাওয়াত নিয়ে চীনে পৌঁছেন। তখন থেকে ইসলামের যাত্রা শুরু। শত নির্যাতন ও নিপীড়নের মুখেও চীনের মুসলমানদের ঈমানি জজবা ও দেশপ্রেমে ভাটা পড়েনি। তারা তাদের মাতৃভূমি চীনকে ভালোবাসেন। উইঘুর মুসলমানরা তাদের প্রিয় ধর্ম ইসলাম নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। নজিরবিহীন দমন নীতি চালিয়েও তাদের মনোবল ভাঙা যায়নি। বরং জুলুম ও বৈষম্য তাদের শক্তি জোগাচ্ছে।