এই নেন ১৬ টাকা আমারে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেন, ইউএনওকে জবেদা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২০:১৪, মে ২৫ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ জ‌বেদা বেগম। শরীরের দিকে তাকালেই বয়সের ছাপ দেখা যায়। বয়স্ক ভাতার জন্য দীর্ঘ ১১ বছর ধরে ঘুরেও না পেয়ে অবশেষে এক হা‌তে ঝু‌লি অন‌্য হা‌তে লা‌ঠিতে ভর দি‌য়ে ইউএনওর কার্যালয়ে আসেন। ধীরস্থিরভা‌বে ঝু‌লি থে‌কে ১৬ টাকা বের ক‌রে টে‌বি‌লে রাখ‌লেন আর বললেন 'স্যার সবাই বয়স্ক ভাতা দেওয়ার জন্য টাকা চায়, এই নেন ১৬ টাকা, আমারে বয়স্ক ভাতার কার্ড দেন। ' বরগুনার তালতলী উপজেলার গোড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিধবা জবেদা বেগম (৭৩)। দুই ছেলের মধ্যে একজন প্রতিবন্ধী। কোনো কাজই করতে পারেন না তিনি। বিয়ে করে আরেক ছেলে থাকেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। খোঁজ নেন না বৃদ্ধা মায়ের। তাই এই বয়সেও অর্থাভাবে না খেয়ে দিন কাটাতে হয় তাকে। বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে গত ১১ বছর ধরে ঘুরেছেন জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে। হতদরিদ্র এই বৃদ্ধার কাছেও টাকা দাবি করেছেন জনপ্রতিনিধিরা। টাকা দিতে না পারায় বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম ওঠেনি বৃদ্ধ জবেদা বেগমের। পরে রোববার মাত্র দুই মিনিটে এই বৃদ্ধার নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় তুলে দিয়েছেন তালতলীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাওসার হোসেন। এ ঘটনা নিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন ইউএনও কাওসার হোসেন। মুহূর্তেই পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ায় প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ফেসবুক পোস্টে কাওসার হোসেন লেখেন, ‘জ‌বেদা বেগম গতকাল একহা‌তে ঝু‌লি অন‌্য হা‌তে লা‌ঠিতে ভর দি‌য়ে আমার কা‌ছে আস‌লেন। খুব ধীরস্থিরভা‌বে ঝু‌লি থে‌কে ১৬টি টাকা বের ক‌রে টে‌বি‌লে রাখ‌লেন। দাবি তার এক‌টি বয়স্ক ভাতার কার্ড চাই। মেম্বর-চেয়ারম‌্যান ৫/১০ হাজার টাকা চায়। দি‌তে পা‌রেন না, তাই গত ১১ বছর বি‌ভিন্ন জনের হা‌তে পা‌য়ে ধ‌রেও পান‌নি। আমি যা‌তে ১৬ টাকায় তার কার্ডটা ক‌রে দেই এই ওনার কামনা। খোঁজ নিয়ে দেখলাম বেচারী নিতান্ত গরিব, বিধবা, এক‌ ছে‌লে কর্ম অক্ষম, অন‌্য ছে‌লে বি‌য়ে ক‌রে অন‌্যত্র থা‌কেন, বয়স ৭৩, প্রায়ই নিরন্ন থা‌কেন, আজও না খে‌য়ে আস‌ছেন। ’ তিনি আরো লেখেন, ‘তাঁ‌কে সাম‌নে রে‌খেই উপ‌জেলা সমাজ‌সেবা অফিসার‌কে ফোন দি‌য়ে ওনার NID নম্বর ও জন্মতা‌রিখ দিলাম। ০২ মি‌নি‌টের ম‌ধ্যে ওনার নাম বয়স্ক ভাতার MIS কার্ডে প্রিন্ট হ‌লো। আজ আস‌লেন বয়স্ক ভাতার কার্ড নি‌তে। কার্ড হা‌তে পে‌য়ে হে‌সে‌ছেন আবার কেঁদে‌ছেন। দুঃখী‌ মানু‌ষের হা‌সি ম‌নে হয় সবচে‌য়ে সুন্দর হয়। আমার ম‌াথায় হাত বু‌লি‌য়ে এলো‌মে‌লো শ‌ব্দে দোয়া ক‌রে‌ছেন যেন আল্লাহ আমা‌কে আরো বড় ক‌রেন। তখন থে‌কে ভাব‌ছি ইশ য‌দি এই দোয়াটা না ক‌রে আমা‌কে আল্লাহ যেন ক্ষমা ক‌রে দেন এই দোয়াটা কর‌তেন। বড় হ‌য়ে কি লাভ? বড় হ‌তে চাই না, ক্ষমাপ্রাপ্ত হ‌তে চাই। ’ এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাওসার হোসেন  বলেন, ‘আমি আমার অফিসে উপজেলার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। তখন তিনি আমার কক্ষে প্রবেশ করে তার পুটলি থেকে ১৬ টাকা বের করে আমার টেবিলে রাখেন। এই টাকার বিনিময়ে তিনি আমাকে বয়স্ক ভাতায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করে দিতে বলেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, তিনি অত্যন্ত অসহায় মানুষ। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার তালিকায় তার নামটি আগে থাকার কথা। অথচ তার নামই নেই! এরপরই আমি আমার দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করি। বয়স্ক ভাতা পাওয়ার জন্য বৃদ্ধার একটি বিকাশ অ্যাকাউন্টও করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে বরগুনার সিনিয়র সাংবাদিক হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ইউএনও কাওসার হোসেন অত্যন্ত প্রসংশনীয় কাজ করেছেন। এরকম মানবিক ইউএনও না হলে ওই বৃদ্ধা হয়তো আরো ১১ বছর ঘুরেও বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম তুলতে পারতেন না। এ জন্য বরগুনার সব নাগরিকের পক্ষ থেকে ইউএনওকে ধন্যবাদ জানাই।