স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত, লঞ্চ বোঝাই যাত্রী গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া
দেশ জনপদ ডেস্ক|২২:৩৮, মে ২৪ ২০২১ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ৪৬ দিন পর চালু হয়েছে ঢাকা-বরিশাল সহ অভ্যন্তরীণ নৌরুট ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। গত রোববার আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকের পর লঞ্চ ও বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। নৌ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হলেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরন নিয়ে কারো তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বরিশাল নদী বন্দর সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নৌ বন্দর ও শতাধিক লঞ্চঘাট আবার প্রাণ ফিরে পেলেও করোনার এ মহাসংকটকালে স্বাস্থ্য বিধি মানা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চলাচলের শর্ত হিসেবে সরকারের নির্দেশনা ছিলো ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী বহন করা এবং সব যাত্রী ও স্টাফদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, লোকাল লঞ্চ নিয়ম অনুসারে চলাচল করলেও ঢাকার লঞ্চগুলো স্বাস্থ্যবিধিকে প্রথম দিনই বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি ভেঙেছে। মাস্ক পরতে অনেকেরই অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। অথচ করোনার স্বাস্থ্য বিধির অজুহাতে এ সকল নৌযানে ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ঢাকা-বরিশাল রুটে ডেকের ভাড়া দাঁড়াবে ৪শ’ টাকার কিছু বেশি। তবে প্রথম শ্রেণি ও কেবিনের ভাড়া বৃদ্ধি পায়নি। এছাড়া ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের প্রায় প্রতিটা লঞ্চে স্বাভাবিক সময়ে ২ থেকে ৩ হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিতে লঞ্চের ধারণক্ষমতা কমিয়ে সার্ভে করানো হয়েছে। যার কারণে দেড় হাজারের বেশি ধারণক্ষমতা নেই ঢাকা-বরিশাল রুটের কোনো লঞ্চের। আর সর্বনিম্ন রয়েছে ৭০০ জন। যার কারণে নির্দেশনা অনুযায়ী ৭০০ জনের বেশি যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না কোনো লঞ্চ কোম্পানি।
কিন্তু সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় লঞ্চেই সহগ্রাধিক যাত্রী নেয়া হয়েছে। যদিও লঞ্চ মালিকরা বলছেন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করানো হয়েছে। এদিকে এসব লঞ্চে যাত্রীদের মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করে মালিক-শ্রমিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল নদীবন্দর কর্মকর্তা ও বিআইডব্লিউটিএর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি জানান, আমরা এখন মাস্ক পরিধানের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করছি। নদীবন্দরে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে উৎসাহিত করতে কাজ করছি। ঢাকার লঞ্চ এমভি মানামীর মাস্টার আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, নির্দেশনা পাওয়ার পর লঞ্চ ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করছি আমরা। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী অর্ধেক যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করবে লঞ্চগুলো।
পূর্বে ডেকে জনপ্রতি ভাড়া ছিল ২০০ টাকা; যা বর্তমানে ৪০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তবে কেবিনের ভাড়া আগের মতোই থাকবে। বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে এমভি পারাবত ১০, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৯, কীর্তনখোলা ১০ এবং মানামী যাত্রী নিয়ে যাবে। সরকারি সক নির্দেশনা অনুসরণ করেই যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি শেখ আবুল হাশেম বলেন, সকাল থেকেই বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দীগঞ্জ, হিজলা, কালীগঞ্জ, লালমোহন, চরকলমি, বোরহানউদ্দিন, বাহেরচর রুটে লঞ্চ চলাচল করছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আজ যাত্রীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। যদি তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনিচ্ছুক হয় তাহলে প্রশাসনের সহায়তায় আমরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে কাজ করব।
বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সহ-সভাপতি ও সুন্দরবন নেভিগেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা যাত্রী পরিবহন করছি। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ডেকের যাত্রীদের ভাড়া হয় ৪১২ টাকা কিন্তু ৪শ’ টাকা নেয়া হচ্ছে; আর কেবিনের পূর্বের ভাড়াই নেওয়া হবে। স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে মাস্ক পরিধান নিশ্চিতের পাশাপাশি ডেকের যাত্রীদের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও মিনিবাস টার্মিনাল থেকে যেসব স্থানীয় ও দুরপাল্লার বাসগুলো সোমবার সকাল থেকে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করেছে। তার সিংহভাগেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই ছিলনা। শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় বিআরটিসি’র বাস ছাড়া কোন বাসেই অর্ধেক আসন খালি রেখে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা যায়নি। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তরফ থেকেও সোমবার প্রথম দিনে তেমন কোন নজরদারী লক্ষনীয় ছিল না। তবে জেলা প্রশাসন আজ মঙ্গলবার থেকে এ লক্ষ্যে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহনের কথা জানিয়েছেন।