বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি… প্রতিবছর পাচার হচ্ছে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা

কামরুন নাহার | ০১:৫৭, ফেব্রুয়ারি ১০ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ বাংলাদেশ থেকে বৈধ-অবৈধভাবে প্রতিবছর ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রাচার হচ্ছে। সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এসব টাকা পাচার হচ্ছে। এমনই এক তথ্য তথ্য প্রকাশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা টিআইবি। দুর্নীতি বিরোধী বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর মতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১৫০০ কোটি ডলার বা ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা পাচার হচ্ছে। অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে তা দেশের কোন কাজে না লাগিয়ে বা দেশে বিনিয়োগ না করে বিদেশে পাচার করছে কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তারা। সম্প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডে অর্থ পাচারের অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। অবৈধভাবে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। অর্থ পাচারের সাথে জড়িতদের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আনার ব্যাপারেও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। বাংলাদেশ থেকে হংকংয়ে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর সেই অর্থ সেখানকার আদালতের মাধ্যমে জব্দ করে রেখেছে দুদক। এই অর্থের ব্যাপারে আরও তদন্ত করা হচ্ছে। দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমরা ইদানিং কিছু তথ্য পাচ্ছি যে, যারা এভাবে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে তা পাচার করেছে বিভিন্ন জায়গায়। বিশেষ করে সিঙ্গাপুর, হংকং, মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ড-এই চারটি জায়গার মধ্যে আমরা দু’টো জায়গা থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি। আর বাকি দেশগুলোর তথ্যের অপেক্ষায় আছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের আদালতের আদেশ নিয়ে হংকংয়ের আদালতে আবেদন করে অর্থ জব্দ করে রেখেছি। কত মিলিয়ন ডলার, সেটা আমরা এখন বলবো না। আর সিঙ্গাপুরে আমরা তথ্য পেয়েছি, অনেকগুলো ফ্ল্যাট এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের এইগুলো নিয়ে আরও তথ্য জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্রাচারকৃত অর্থ যে সকল দেশে যাচ্ছে তদন্তের স্বার্থে দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ওই দেশগুলোতে পাঠানো হতে পারে। দুদক বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে তা থেকে জানা যায়, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের পর সেই অর্থ ক্যানাডাসহ বিভিন্ন দেশে যারা পাচার করেছেন বা করছেন তাদের কিছু লোককে চিহ্নিত করে তাদের অবস্থান জানতে পেরেছে। দুদকের পক্ষ থেকে যখন এসব উদ্যোগের কথা বলা হলো, তখন গত বুধবার টিআইবি এক গবেষণায় বলেছে, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে কর্মরত বিদেশী কর্মীরা বছরে অবৈধভাবে ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করছে। এ প্রসঙ্গে দুদকের কর্মকর্তারা জানায়, বিদেশী কর্মীদের বিষয়টি দুদকের এখতিয়ারে নয়, এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সহ সরকারের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিচ্ছে। টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ১০ বছর ধরে বাংলাদেশিদের অনেকের অর্থপাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে এবং পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় গেছে বলে তারা মনে করেন। আন্তর্জাতিকভাবে যারা ব্যবসা করে, তাদের কেউ কেউ ডকুমেন্টে তথ্য হেরফের করে অর্থ পাচার করছে। হুন্ডির মাধ্যমেও বড় অংকের অর্থ পাচার হচ্ছে। এটা উদ্বেগজনক অবস্থায় ঠেকেছে। বছরে ১৫০০কোটি ডলার পাচার হচ্ছে- এটা নি:সন্দেহে বলা যায়।