শেবচিম হাসপাতালে রোগী ভর্তিতে নেয়া বাড়তি টাকা ব্রাদারদের পকেটে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:২২, মে ২৩ ২০২১ মিনিট

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে দুটি সাইনবোর্ড। তাতে লেখা ‘রোগীর টিকিট মূল্য ১০ টাকা। রোগীর ভর্তি ফি ১৫ টাকা। উপরোক্ত টাকার বেশি দিবেন না। দাবি করলে কর্তৃপক্ষকে জানান।’ কিন্তু এখানে অহরহই নেয়া হয় বাড়তি টাকা। হাসপাতালে জরুরি সেবা নিতে গিয়ে এ বাড়তি টাকা নেয়ার ব্যাপারে কেউ কর্তৃপক্ষকেও জানান না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোগীর ভর্তি ফি ১৫ টাকার বদলে নেয়া হয় ২০ টাকা। তবে টিকিটের মূল্য নির্ধারিত ১০ টাকার বেশি নেয়া হয় না। রোগীর ভর্তি ফি ১৫ টাকার ক্ষেত্রে খুচরা নেই জানিয়ে টিকিট প্রতি পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হয়। এ টাকা দায়িত্বরত ইনচার্জ ও ব্রাদাররাই সমানভাবে ভাগ করে নেন। তারা কখনও কখনও ভর্তি ফি ২০ টাকারও বেশি নিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে জরুরি বিভাগের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অন্তত ১৫ জন রোগীকে ভর্তির ক্ষেত্রে তাদের বাড়তি টাকা আদায়ের চিত্র দেখা যায়। এর মধ্যে পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া রোগী বেতাগী উপজেলার ফেরদৌস, আমতলীর আব্দুল হান্নান ও নলছিটি উপজেলার ফিরোজ আলমের স্বজনদের কাছ থেকে ১৫ টাকার ভর্তি ফরমের জন্য ২০ টাকা নিতে দেখা গেছে। রোগীর যেসব স্বজন ভর্তি ফরম সংগ্রহ করছিলেন তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অথচ ভর্তি ফরমের ওপরেও লেখা আছে এর মূল্য ১৫ টাকা। শেবাচিম হাসপাতালে কোনো রোগীকে ভর্তি করতে হলে তার জন্য দুইবার টিকিট কাউন্টারে যেতে হয়। রোগীকে আনার পর প্রথমে ১০ টাকার একটি টিকিট নিয়ে রোগীকে জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে দেখাতে হয়। এরপর তিনি যদি রোগীকে ভর্তি করানোর প্রয়োজন বোধ করেন তাহলে তার জন্য এবার ভর্তি ফরম কেনার প্রয়োজন পড়ে। প্রথমবার টিকিটের দাম ১০ টাকা রাখা হলেও পরেরবার নেয়া হয় পাঁচ টাকা বেশি। তবে কেউ ১৫ টাকা দিলে বাড়তি টাকা চেয়ে নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু কেউ ফরমের দাম জানতে চাইলে ২০ টাকা বলতে দেখা গেছে। মূল্য ১৫ টাকা লেখা থাকার বিষয়ে রোগীর স্বজন জানতে চাইলে কাউন্টার থেকে জানানো হয়- তাহলে খুচরা ১৫ টাকা দিন। অর্থ্যাৎ রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে কালক্ষেপন করা হয়। তবে জরুরি সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা পাঁচ টাকার জন্য বাগবিতন্ডায় জড়ান না। ২০ টাকা দিয়ে তারা ফরম নিয়ে ছোটেন। দক্ষিণবঙ্গের বৃহৎ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ১০০০ জন রোগী ভর্তি হন। প্রতিটি ভর্তি ফরমের জন্য পাঁচ টাকা বেশি নেয়া হলেও তা পাঁচ হাজারে দাঁড়ায়। বাড়তি নেয়া এই টাকা জরুরি বিভাগে ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা শহিদুল ইসলাম ও সাবেক ইনচার্জ হরে কৃষ্ণ শিকদারসহ অন্য ব্রাদাররা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। ফরমের মূল্য বেশি নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইনচার্জ সহিদুল ইসলাম তা স্বীকার করেন। ইনচার্জ সহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুচরা পাঁচ টাকা ও দুই টাকার নোট এনে কাউন্টারে রাখি। যেন কেউ টাকা বেশি নিতে না পারে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্রাদার দাবি করেন, অনেক সময় অজ্ঞাত রোগী নিয়ে আসা হয় জরুরি বিভাগে। হাসপাতালে তার কোনো স্বজন থাকে না। কিন্তু তার ক্ষেত্রেও ২৫ টাকার দুটি টিকিটের প্রয়োজন হয়। তখন অন্যদের কাছ থেকে নেয়া অতিরিক্ত পাঁচ টাকা এই রোগীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে শেবাচিম হাসপাতালের ডা: এস.এম. মনিরুজ্জামান(প্রশাসন) বলেন, কাউন্টারে টিকিটের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার নেওয়ার ক্ষেত্রে কারও নামে যদি অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক্ষেত্রে লিখিত অভিযোগও দিতে হবে।