বরিশালে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব: এক মাসের ব্যবধানে নিহত ৪, আহত অর্ধশতাধিক

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৮:০৯, মে ২৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রাজনৈতিক সংঘর্ষে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে বরিশাল জেলার একমাত্র দ্বীপ মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়নে। ইউপি নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন চার জন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এছাড়াও বাড়ি-ঘর ভাঙচুর হয়েছে অন্তত ২০ থেকে ২৫টি। দুই গ্রুপের হামলা, সংঘর্ষ ও মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এই উপজেলার শতাধিক মানুষ। এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হলেও শান্তি ফিরছে না। গত ২০ মে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের সলদি গ্রামে আব্দুর রব ঢালীর বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠানে কালাম বেপারীর সমর্থকরা হামলা চালালে নিহত হন আব্দুস সাত্তার ঢালী ও সিদ্দিকুর রহমান। আহত আরও ১৫ থেকে ২০ জন। স্থানীয়রা জানান, গত ধুলখোলা ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জামাল ঢালী ও বিদ্রোহী প্রার্থী কালাম বেপারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দুজনই পরাজিত হন। জিতে যায় বিএনপির প্রার্থী। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলছেই। এরই পরিণতিতে বিয়ে বাড়িতে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। গত ১১ এপ্রিল মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়নের সুলতানি গ্রামে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিলন চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী রুমা চৌধুরীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় রুমা বেগমের সমর্থক সাইফুল সরদার এবং মিলন চৌধুরীর চাচাত ভাই সাইদ চৌধুরী নিহত হন। গত ৪ ডিসেম্বর মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এই দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হয়। গত ৭ ডিসেম্বর উত্তর উলানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে অন্তত চার জন আহত হয়। দুটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত থাকলেও থেমে নেই হামলা-সংঘর্ষ। এই উপজেলার এই চার হত্যাকাণ্ডে হওয়া মামলায় আসামি শতাধিক বলে জানিয়েছেন মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম। তিনি জানান, চারদিকে নদী বেষ্টিত এই উপজেলায় একসময় ডাকাতি প্রধান সমস্যা থাকলেও এখন রাজনৈতিক সংঘর্ষ সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ এসব দ্বন্দ্বে প্রশ্রয় দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস নির্বাচনের সময় বক্তব্য দেওয়ার পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি সেখানকার স্থানীয় রাজনীতিতে নেই। একের পর এক হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ প্রকাশ করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. মনসুর আহম্মেদ বলেন, ‘এখানে মানুষ শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করতে চায়। এটা যেকোনো ভাবে নিশ্চিত করতে হবে।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মেহেন্দীগঞ্জ) বলেন, ‘এখানে রাজনৈতিক সংঘর্ষ একের পর এক চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হলেও অবস্থা নিরসনে রাজনৈতিক তৎপরতা জরুরি। ইতোমধ্যে আমরা লিখিতভাবে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’ পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করার আছে তার সবই করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুই ইউনিয়নে দুটি পুলিশ ক্যাম্প বসানো হয়েছে। মামলার ৪০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এখানে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।’