মেহেন্দিগঞ্জে বিয়ে বাড়িতে হামলা দুই জনকে কুপিয়ে হত্যা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৩৮, মে ২০ ২০২১ মিনিট

মেহেন্দিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥ মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার উত্তর উলানিয়া ইউনিয়নের সলদি গ্রামে দিনে দুপুরে বিয়ের অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। সংঘর্ষে পন্ড হয়েছে বিয়ের অনুষ্ঠান। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সলদি গ্রামের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আ: রব ঢালীর জামাই কামাল রাঢ়ীর বাড়িতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হিজলা উপজেলা ধুলখোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কালাম বেপারীর ভাইদের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে বলে দাবী করেছে হামলায় শিকার হওয়া পরিবারের লোকজন। তবে তারাও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। তারা দাবী করেছেন, তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ বিরোধী গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকায় পংকজ নাথের অনুসারী কালাম বেপারীর লোকজন এ হামলা করেছে। নিহত দু’জন হচ্ছেন রব ঢালীর বড় ভাই আব্দুস সাত্তার ঢালী (৫৫) ও প্রতিবেশী সিদ্দিকুর রহমান (২৮)। উত্তর উলানিয়ার ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আঃ রব ঢালী জানান, গতকাল দুপুরে তার মেয়ের ঘরের নাতি সাথি আক্তারের বিয়ে অনুষ্ঠান ছিল। দুপুরে বরযাত্রী আসার কথা ছিল। বেলা ১১টার দিকে ৫০-৬০ জন লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হামলা করে। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি বসতঘরগুলো কোপাতে থাকে এবং যাকে সামনে পায় তার ওপর হামলা চালায়। সিদ্দিকুর রহমানকে ঘটনাস্থলেই কুপিয়ে হত্যা করা হয়। গুরুতর আহত দু’জনকে ছাত্তার ঢালী ও ইসমাইল ঢালীকে স্পীডবোটযোগে বরিশালে আনার পথে একজন মারা গেছেন। নিহত সাত্তার ঢালীর আরেক ভাই হিজলা উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক জামাল হোসেন ঢালী জানান, দলের স্থানীয় বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলার ভয়ে তার পরিবারের বেশীরভাগ পুরুষ এলাকায় থাকতে পারছেন না। তারা বরিশাল নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে থাকছেন। নাতনি’র বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য সকলে বাড়িতে থাকবেন এটা নিশ্চিত হয়ে ধুলখোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কালাম বেপারীর ভাইদের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন বিয়ে বাড়িতে হামলা করেছে। তিনি জানান, হামলা করার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়ায় আনা হয়েছে। ধুলখোলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক কালাম বেপারী বলেন, গত মাসে দক্ষিণ উলানিয়ায় সংঘর্ষে দু’জন নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় তিনিও আসামী। তাই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয় অপর একটি গ্রুপ জানান, গত তিন দিন পূর্বে জামাল ঢালীর বাড়ির পাশের বাড়িতে তার বোনের বাড়িতে কালাম বেপারীর লোকজন আসলে সেখানে একজনকে আটকে রাখা হয়। ঘটনাক্রমে ওই বাড়িতেই জামালের বোনের মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান ছিল। এ ঘটনার জের এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের পর পন্ড হয়ে গেছে বিয়ের অনুষ্ঠান। মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম জানিয়েছেন, স্থানীয় প্রভাব বিস্তার ও স্থগিত ঘোষিত ইউপি নির্বাচন নিয়েই এ সংঘাত। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। নিহতদের মরদেহের ময়না তদন্তের প্রক্রিয়া গ্রহন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যববস্থা নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ই্উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামাল ঢালী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং কালাম বেপারী নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। নির্বাচনে তারা দুইজনই পরাজিত হন। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হয়। সেই থেকে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। তাছাড়া সম্প্রতি পুরোনো উলানিয়া ইউনিয়নকে বিভক্ত করে উত্তর ও দক্ষিণ উলানিয়া নামে দুটি পৃথক ইউনিয়ন গঠন করা হয়। এরপর নবগঠিত এই দুই ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান ও সদস্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা প্রায় শেষ করে এনেছিলেন। গত বছরের ১০ ডিসেম্বর নবগঠিত এই দুই ইউপিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওই দুই ইউনিয়নের সীমানা-জটিলতার কথা বলে স্থানীয় এক ব্যক্তি আদালতে মামলা করেন। ফলে গত ৬ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকেই এই দুই ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ-খুনোখুনি অব্যাহত রয়েছে।