জগদ্বীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুব্ধ শিক্ষকরা পেটালেন দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষককে

কামরুন নাহার | ০০:৩৫, ফেব্রুয়ারি ১০ ২০২০ মিনিট

  নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দুর্নীতিগ্রস্থ প্রধান শিক্ষক শাহআলমের বিরুদ্ধে পুঞ্জিভুত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে অন্যান্য শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত (মারধর) হওয়ার মধ্য দিয়ে। গতকাল বরিশাল নগরীর ঐতিহ্যবাহী সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে ঘটনাটি ঘটে বলে সুত্রে জানা গেছে। একাধিকবার দুর্নীতিতে ফেঁসে যাওয়ার বিষয়টি কয়েকদফা তদন্তে স্পষ্ট হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির মধ্যে ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে থাকে। এনিয়ে ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলটির সহকারী শিক্ষক মো: জাহাঙ্গীর হোসেন, মো: কাওসার হোসেন, রোজিনা মমতাজ নুপুর, এমদাদুল্লাহ সহ একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা জানায়, বিগত বছরে স্কুলের প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছে। এরপর চলতি বছরের স্কুলের আয়ের প্রায় ২০লাখ টাকা তিনি পকেটস্থ করেছেন। অথচ এ টাকা নিয়মানুযায়ী স্কুলের ব্যাংকে হিসেবে গচ্ছিত থাকতে হবে। আর এহেন কর্মকান্ডের কারনে স্কুলের ক্লাস পরিচালনা, বেতন, শিক্ষার্র্থীদের দৈনিক টিফিনসহ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতাও হচ্ছেনা। ইত্যকার বিষয়াদি নিয়ে শিক্ষকমন্ডলীরা বারংবার প্রধান শিক্ষকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরার পরও কোন সুরাহা না হওয়ায় এক পর্যায়ে তার সাথে শিক্ষকদের বাক-বিতন্ডায় গতকাল লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটে। এ ব্যাপারে স্বারস্বত স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহআলম অভিযোগ করে বলেন, আমাকে মারধর করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার কারন জানতে চাইলে বলেন, ক্লাস চলাকালীন সময়ে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করাসহ ইচ্ছা মাফিক ক্লাস রুটিন তৈরী করে নিয়ম বহির্ভূত কার্যক্রম করার প্রতিবাদ করায় সহকারী প্রধান শিক্ষক কাওসার হোসেনসহ কয়েকজন কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষক আমাকে মারধর করেছে। তিনি আরো জানায়, আমি ১৭ সালের ১লা আগস্ট এই স্কুলে যোগদান করার পর থেকেই দেখতে পাই এখানে শিক্ষকদের স্কুলে আসা-যাওয়ার কোন নিয়মনীতি নেই। নেই কোন স্কুলে শৃঙ্খলা। এসব কাজে বাঁধা প্রদান করার পর থেইে কয়েকজন শিক্ষক শিক্ষিকারা একজোট হয়ে আমাকে প্রায় সময় অপদস্থ করে যাচ্ছে। তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী করাসহ শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান ও সাবেক কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এদিকে হামলাকারী সহকারী শিক্ষক কাওসার হোসেন বলেন, আমি প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তুলিনি তবে তার সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এসময় কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। স্কুলের কিছু হিসাব নিকাশ নিয়ে প্রধান শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা সঠিক হয়নি। এদিকে সূত্রে জানা যায়, স্কুলে প্রধান শিক্ষক শাহ আলম ও চারজন খন্ডকালীন শিক্ষকসহ আরো একুশজন শিক্ষক উক্ত স্কুলে কর্মরত রয়েছে। এরা সকলেই বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় থেকে স্কুলের নিয়ম ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গল দেখিয়ে ৩য় শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীদেরকে চাপ প্রয়োগ করে স্কুলের ভিতরে কোচিং বাণিজ্য খুলে বসেছে। এদের ভিতর কয়েকজন শিক্ষক প্রতিদিন শতাধিক শিক্ষার্থীদেরকে ফেল করার ভয় দেখিয়ে বাধ্যতামূলক কোচিং করিয়ে প্রতিমাসে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এবিষয়ে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসন ও সাবেক স্কুল কমিটির কাছে অভিযোগ দিয়েও তারা কোন সুফল পায়নি। অপরদিকে প্রধান শিক্ষক শাহআলমের দুর্নীতি অনুসন্ধানে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের নির্দেশে গত বছর অক্টোবর মাসে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটি প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ তুলে ধরে প্রতিবেদন দাখিল করে। আর এ তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি বরিশাল বোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রশাসক দপ্তরে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, এবছরের শুরুতেও শিক্ষা অধিদপ্তরের নিরীক্ষা দপ্তর প্রধান শিক্ষক শাহআলমের দুর্নীতির তদন্ত শেষে করে। চলতি সপ্তাহে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানা যায়। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সুত্র আরো জানায়, অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক এইচএম জাহাঙ্গীর আলমের নিকট প্রতিষ্ঠানের ক্যাশ বুক, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, খরচের অনুমোদিত ভাউচারসহ অন্যান্য খরচের কোন রেজুলেশন উপস্থাপন করতে পারেনি প্রধান শিক্ষক শাহআলম। এহেন কর্মকান্ডের কারনে উক্ত কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এনিয়ে শিক্ষা পরিদর্শক এইচ এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অচিরেই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে এবং এ বিষয়টিও আমাদের আমলে রয়েছে। উল্লেখ্য, গত দু-বছর ধরে স্বারস্বত স্কুলের চলমান এ দুর্নীতির বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ায় একাধিকবার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, সারস্বত স্কুলের শিক্ষকদের মধ্যে গতকাল যে অপ্রীতিকর ঘটনা হয়েছে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে এ ধরনের বিরূপ আচরন উচিত নয়। আর প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। অপরদিকে স্কুলটির মেয়াদহীন এডহক কমিটির সভাপতি রাবেয়া খাতুন বিনা বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি প্রধান শিক্ষককে মারধর করা হয়েছে এবং সাংবাদিকরাও উপস্থিত হয়েছিলেন। এসময় তিনি আরো বলেন, মুলত স্কুলটি একটি কমিটিবিহীন অবস্থায় চলছে, দ্রুত একটি শক্তিশালী কমিটি গঠিত হওয়া দরকার। কিন্তু উক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে তদন্ত হয়েছে তা তো প্রমাণিত হয়েছে সেক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, কমিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত কিছুই করা যাচ্ছে না। এছাড়াও এডহক কমিটি কোন শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নিতে পারেনা। যেকারণে তার দুর্ণীতির লাগাম টেনে ধরাও সম্ভব হচ্ছেনা। আর এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছর অক্টোবর মাসেই। এককথায় একটি কমিটি না থাকায় স্কুলটির কার্যক্রমেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।