বেতাগী -কচুয়া খেয়াঘাটে যাত্রীদের জিম্মি করে দশগুন ভাড়া আদায়!

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৬:৪২, মে ১১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মগের মুল্লুক পাইছে ওরা। মুই ভিক্ষা কইরা পাইছি ৬০ ট্যাহা পাইছি, হের ৪০ ট্যাহাই দেওয়া লাগছে খেওয়ায়। তোগো উপার আল্লাহ’র গজব পড়বে। আল্লাহ সইবো না।’ তিনি বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাট থেকে পারাপারের সময় অতি দুঃখে কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলো ষাটোর্দ্ধ অন্ধ ভিখারী। তিনি আরো বলেন, বাবা মোগো কথা লেখ্য্ইয়া কি অইবো? মোগো নাম লেইখো না। বেতাগী-কচুয়া খেয়াঘাটে বিষখালী নদী পারাপারে পাঁচ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও যাত্রী হয়রানি, যাত্রীদের সঙ্গে অসদাচারণ, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক, অপর্যাপ্ত ও ত্রুটিযুক্ত ট্রলার দিয়ে নদী পারাপারসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছে যাত্রীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজারাদার সরকারের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতো খেয়া পরিচালনা করছেন। খেয়া পারাপারের জন্য যাত্রীরা নির্ধারিত ভাড়া দিতে চাইলে টোল আদায়কারীরা খারাপ ব্যবহার করছেন এবং লাঞ্ছিত করছেন। ঘাট ইজারাদার রুস্তুম আলী হাওলাদার ও নুরুল হক কচুয়ার স্থানীয় লোক হওয়ায় যাত্রীদের জিম্মি করে বিষখালী নদীর কচুয়ার পাড় থেকে ভাড়া আদায় করছেন। প্রতিদিন ভাড়া আদায় নিয়ে আদায়কারীরা সাধারণ যাত্রীদের সাথে তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া ও মারধরের ঘটনা ঘটছে। বেতাগী উপজেলা যুবলীগ নেতা জুয়েল জানায়, ‘ যাত্রীদের জিম্মি ও জুলুম করে টাকা আদায় করছে এর প্রতিকার হওয়া দরকার।’ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বরগুনা জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নাহিদ মাহমুদ লিটু গত ৪ আগস্ট ২০২০ খ্রি. উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন এর নিকট লিখিত অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়া একাধিক ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারণকৃত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া এবং এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার জন্য প্রতিকার দাবী করেছেন। বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা দিলিপ হাওলাদার জানায়, ‘ গরিবদের কাছ থেকে আদায়কারীরা দুর্ব্যবহার করে ৪০ টাকা আদায় করছে। এতে আওয়ামী লীগ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে। এর একটা প্রতিকার হওয়া দরকার।’ স্থানীয়রা জানান, সাধারণ যাত্রী পারাপারে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পাঁচ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ঈদের সময় ৪০ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের ফ্রি পারাপারের নিয়ম থাকলেও একই পরিমাণে টাকা আদায় করা হয়। সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করা থাকলেও তা মানছে না আদায়কারীরা। ঈদের সময় যাত্রীদের কাছ থেকে মোটরসাইকেল পারাপারে ১০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, বাইসাইকেল ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, আসবাবপত্র ১০ টাকার পরিবর্তে ৫০০ টাকা ও হালকা যানবাহনের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়। ভোর ৫ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পারাপারের নিয়ম, কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার পরেই ওই বিষখালী নদী থেকে পার হতে হলে চাইলে তাঁর কাছ থেকে রিজার্ভ ৫০০-৮০০ টাকা আদায় করা হয়। একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেন, মাত্র দুইটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার যাত্রী পারাপার করে। এতে বেশির ভাগ সময় চাকরিজীবী অফিসে আসতে বিলম্ব হচ্ছে। এতেও ভোগান্তি ও হয়রানি বাড়ছে। এ বিষয় জানতে চাইলে টোল আদায়কারী মো. রুস্তুম আলী জানান, ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় এবং অনেকে ভাড়াও দেয় না। মোটরসাইকেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা আদায়ের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। শৌলজালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মাহমুদ হোসেন রিপন জানান, বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিকারের জন্য উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার দাবি করেছি। বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ‘সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি শুনেছি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’