জিনের অস্তিত্ব ও জিন তাড়ানো

কামরুন নাহার | ২০:৫৮, ফেব্রুয়ারি ০৩ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ ঘটনাটি ঘটিয়াছে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে। এই গ্রামে কালাম মৃধা নামের এক ব্যক্তিকে পানিতে চুবাইয়া হত্যা করিবার অভিযোগ উঠিয়াছে কথিত ফকির রিয়াজের বিরুদ্ধে। জিন তাড়ানোর নামে পুকুরে চুবানো ও এক ধরনের নির্যাতনের প্রতি গ্রামবাসীর সায় যে ছিল তাহা এই সংক্রান্ত খবরের আদ্যোপান্ত পড়িয়া স্পষ্টত বোঝা যায়। আমাদের দেশে জিনে ধরা ও ইহার পরিপ্রেক্ষিতে কবিরাজি চিকিত্সার শরণাপন্ন হইবার ঘটনা নূতন নহে। অনেক সময় ভণ্ড ফকিরদের প্রতারণার কারণেও একজন মানসিক রোগীকে জিনে ধরিয়াছে বলিয়া চালাইয়া দেওয়া হয়। কিন্তু মানসিক রোগ ও জিনে ধরিবার লক্ষণের মধ্যে পার্থক্য অনেক সময় আমরা করিতে পারি না। মানুষের উপর জিন ভর করা বা মানুষের জাদুগ্রস্ত হওয়াকে সাধারণত আরবিতে ‘সাহর’ বলে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ মানসিক ভারসাম্য হারাইয়া ফেলে, স্মৃতিবিভ্রম ঘটে এমনকি এই অবস্থায় তাহাদের মুখ দিয়া জিনেরা কথাও বলিতে থাকে। মূলত শারীরিক ও মানসিক কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে আমাদের আগে ডাক্তারের শরণাপন্ন হইতে হইবে। প্রথমেই কবিরাজ-ফকিরের নিকট যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নহে। ইসলাম ধর্মে গায়েব বা অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জিন এই অদৃশ্য বিষয়গুলিরই একটি। কোরআন শরিফে সুরা জিন নামে একটি স্বতন্ত্র সুরা রহিয়াছে। মানুষ ও জিনকে আল্লাহ তায়ালা তাহার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করিয়াছেন। মানুষের মতো জিনের মধ্যেও ভালোমন্দ, নারী-পুরুষ রহিয়াছে। আদম মাটি, ফেরেশতারা আলো আর জিনরা আগুনের স্ফুলিঙ্গ দ্বারা তৈরি। শয়তান জিনদেরই অন্তর্ভুক্ত। সূরা নাসে জিন ও মানুষের অনিষ্টতা হইতে পরিত্রাণ লাভের কথা বলা হইয়াছে। সূরা জিনের ৬ নম্বর আয়াতে বলা হইয়াছে, ‘আর মানুষের মধ্যের কিছু লোক জিন জাতির কিছু লোকের আশ্রয় নিত, ফলে তাহারা তাহাদের পাপাচার বাড়াইয়া দিত।’ এই আয়াত হইতে জিনে ধরার বিষয়টিও সত্য। আমরা তিন ধরনের জিনের কথা জানি- পাখার মাধ্যমে বাতাসে উড়ে, সাপ ও মাকড়সার আকারে থাকে এবং সাধারণভাবে চলাফেরা করে। মানুষের পরিত্যক্ত স্থান ও লোকালয় হইতে দূরে নীরবে থাকিতে পছন্দ করিলেও কিছু জিন মানুষের সহিত লোকালয়েই থাকে। মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্ট ও ফেলিয়া দেওয়া মাংসের হাড় ও গোবর তাহাদের প্রিয় খাবার। জিন দ্বারা মানুষ যাহাতে আক্রান্ত না হয়, এইজন্য ওয়াশরুম ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা, খাবার ঢাকিয়া রাখা, পানির পাত্রের মুখ বন্ধ রাখা, সন্ধ্যার শুরুতে (অন্তত এক ঘণ্টা) সন্তানদের বাহিরে যাইতে বারণ করা ইত্যাদি নিয়মকানুন মানিয়া চলিতে হয়। জিনেরা মানুষসহ যে কোনো প্রাণীর রূপ ধারণ করিতে পারে। এইজন্য আয়াতুল কুরসিসহ বিভিন্ন দোয়া রহিয়াছে, যাহা পড়িলে অনিষ্টকারী জিনেরা মানুষের ধারেকাছেও আসিতে পারিবে না। সুতরাং কাহাকেও জিনে ধরিলে তিনি কোনো ভালো আলেমের দ্বারস্থ হইতে পারেন। কিছু আমলের মাধ্যমে সুস্থতা লাভ করিতে পারেন। আর জিন নিয়া ভণ্ডামি অবশ্যই বন্ধ করিতে হইবে এবং এই ব্যাপারে মানুষকে হইতে হইবে সচেতন।