ববি’র খেলার মাঠ পরিস্কার করতে পোড়ানো হল শত শত বৃক্ষ, শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ

কামরুন নাহার | ২৩:৩০, ফেব্রুয়ারি ০২ ২০২০ মিনিট

মোঃ ইলিয়াস,ববি প্রতিনিধি ॥ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ পরিস্কার করতে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলা হয়েছে মাঠের আশেপাশের অনেকগুলো গাছ। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আগামী ৩রা ফেব্র“য়ারী অনুষ্ঠিতব্য মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২০ আয়োজন করার উদ্দেশ্যে ঘাস হতে বিষাক্ত সাপ পোকামাকড় নিধনের নামে গাছগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। গত শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন সকাল সাড়ে ১১ টায় মাঠ পরিষ্কার কর্মসূচির নাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর মো: নুর ইসলামের নেতৃত্বে একদল কর্মচারী কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোনে আগুন দেয়। এতে শহীদ মিনারের আশে-পাশে ও মুক্তমঞ্চের পাশে লাগানো প্রায় অর্ধ-শতাধিক চারাগাছ পুড়ে যায়। ঘাস কাটার নামে গাছ পোড়ানোর বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী এস্টেট অফিসার মো: সাইদুজ্জামান বলেন, “ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর আমাকে এই ব্যাপারে কিছু জানায় নি। তিনি নিজ উদ্যোগে আগুন দিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।” অভিযুক্ত ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টর মো: নুর ইসলাম বলেন, “খেলার মাঠের ওই অংশে ঝোপঝাড় ছিল। পরিস্কার করতে গিয়ে আমাদের কর্মচারীরা ওখানে সাপ দেখতে পায়। তাই আগুন লাগিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। আমি একটি ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করতে গিয়ে খারাপ হয়ে গেছে। কিছু চারাগাছ পুড়ে গেছে। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তিনি আরো বলেন, ঝোপঝাড়ের মাঝে বল আনতে গিয়ে যদি সাপে কামড় খেত, তাহলে সেই দায় কে নিত? ৫, ১০,৫০ টাকার গাছ কি একটি জীবনের চেয়ে বড়?” ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিও দেখা যায়, তিনি স্বীকার করছেন নিজ দ্বায়িত্বে কারো আদেশ ছাড়াই গাছে আগুন দিয়েছে। একপর্যায়ে বলতে শোনা যায়, ৫০ হাজার এক লাখ টাকা কোন সমস্যাই না তার কাছে। দরকারে গাছ লাগিয়ে দিবে। এদিকে বিতর্কিত নুরুর বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক অভিযোগ। নুরু এর আগেও নারী কেলেঙ্কারির জন্য সমালোচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তার দপ্তরে গেলে তাকে ঠিকমত পাওয়া যায় না। উল্লেখ্য, মালীর কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত ৮ জন ব্যক্তি থাকলেও এস্টেট অফিসারের দপ্তরে মাত্র ৩ জন আছে এবং বাকি ৫ জন কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য দপ্তরে। এর মধ্যে ২ জন মাননীয় উপাচার্যের দপ্তরে, ২ জন সিকিউরিটি শাখায়, ১ জন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে কর্মরত। এস্টেট শাখা দপ্তর কর্তৃক জানা যায়, কর্মরত যে ৩ জন রয়েছে, তারাও ঠিকমত কাজ করে না। উপাচার্য মহোদয়ের আদেশ পেলেই তারা কাজের জন্য সোচ্চার হয়। এছাড়া এর আগেও তারা মাঠে ঘাস মারার বিষ প্রয়োগ করে সমালোচনার তৈরী করেছিলেন। এদিকে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুহৃদ সমাবেশের সভাপতি , মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, "আমরা সমকাল সুহৃদ সমাবেশ, ববি শাখা থেকে এই স্থানকে কেন্দ্র করে বকুলতলা করার লক্ষ্যে নিয়মিত গাছ রোপন ও পরিচর্যা করে আসছিলাম গত দুবছর ধরে। কিন্তু আমাদের দুই বছরের পরিশ্রমকে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানাই। এবং অতিসত্ত্বর যতগাছ পোড়ানো হয়েছে তার দ্বিগুন গাছ যেন লাগানো হয় ও দোষীকে শাস্তির আওতায় আনা হয় তার জোর দাবি জানাই।"এহেন কর্মকান্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা চলছে। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা আগুন দেয়ার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন।