স্বতন্ত্র ও নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে গুলি-ককটেল বিস্ফোরণ, আটক ২০

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৬:৫০, এপ্রিল ০১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরগুনার বামনায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে। উভয় পক্ষের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ককটেল নিক্ষেপ ও গুলির ছোড়ার ঘটনা ঘটে। বুধবার দুপুর ২টার দিকে সংঘর্ষ শুরু হয়, সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় পুলিশ। এ ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে পুলিশ একটি বিদেশি পিস্তল, গুলি, ককটেল ও ককটেল তৈরি সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। সুত্র জানায়, বামনা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. কামরুজ্জামান সগীর। ওই ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক সোহেল সিকদার ঘোড়া প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঘটনার সময় উপস্থিত কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার দুপুর ১টার দিকে দক্ষিণ আমতলী গ্রামে রহিম হাওলাদারের বাড়ির সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে বেলা ২টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী সমর্থক ও বামনা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরিদর্শনে যান। পরিদর্শন শেষে ফেরার পথে সোনাখালী বাজারে মহাসড়ক এলাকায় পৌছালে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি কার্যালয় ভবনের দোতালা থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে হৃদয় দাশ (২০) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার ডান হাতে গুরুতর জখম হয়। এ খবর শুনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী অ্যাড. কামরুজ্জামান সগীর নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর সোহেলের নির্বাচনি কার্যালয়ে জড়ো হন। এসময় নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকদের লক্ষ্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভবনের দোতালা থেকে বেশ কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। নৌকা সমর্থকরাও ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভবন থেকে পিস্তলের গুলি ছোড়া হয়। খবর পেয়ে বামনা থানা পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হন। কিন্ত তাদের উপস্থিতিতেও ককটেল নিক্ষেপ অব্যাহত রাখে সোহেল সমর্থকরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাওয়ায় এক পর্যায়ে বিকাল ৫টার দিকে বরগুনা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর নেতৃত্বে রিজার্ভ ফোর্স ও গোয়েন্দা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাঠিচার্জ শুরু করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে ওই ভবনটিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জাম, বেশ কয়েকটি অবিস্ফোরিত ককটেল, ধারালো চাকু, একটি পিস্তল ও এক ম্যাগাজিন গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। ভবনটির ভেতরে অবস্থানরত দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ ২০ জনকে আটক করা হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অন্তত ৯ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম সাব্বির ফেরদৌস তালুকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন মোল্লা, দফতর সম্পাদক কৃষ্ণকান্ত কর্মকার, মানিক কুমার পঙ্কজ, ছাত্রলীগ নেতা হৃদয় দাস, জেলা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি রাজিব হোসেন আব্দুল্লাহ, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মোর্শ্বেদ শাহরিয়া গোলদার ও সংবাদকর্মী ফয়সাল সিকদার। সংঘর্ষের ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া) সোহেল সিকদার, যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী(মটরসাইকেল) তরিকুজ্জামান সোহাগ, ছাত্রলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক রাফান জোমাদ্দার আকাশ, রাজ্জাক মল্লিক, সিদ্দিক ভুইয়া, শাওন, নিরু মল্লিক, শাহজাহান মল্লিক, আলমগীর, ইমরান, সোহাগ, সাগর ও অজ্ঞাত কয়েকজনসহ ২০ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সগির বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদের ওপর ককটেল নিক্ষেপের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে হতবাক হয়ে গেছি। আমাকে লক্ষ্য করেও বেশ কয়েকবার ককটেল ছোড়া হয়েছিল। আমি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’ বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ভবনটি থেকে বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সারঞ্জাম ও পিস্তলসহ বেশ কয়েকটি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ভবনটি থেকে আটক করা হয়েছে ২০ জনকে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুটি চলছে।‘ বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলী বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বরগুনার বামনা উপজেলার সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা শুনে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা শোনা গেলেও কেউই তেমন মারাত্মক জখম হননি। ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল ও গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এছাড়াও ককটেল ও অন্যন্য আলামতও জব্দ করা হয়েছে। হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।’