রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি

কামরুন নাহার | ২০:৫২, ফেব্রুয়ারি ০১ ২০২০ মিনিট

অনলাইন ডেস্ক :: ভোট কারচুপির অভিযোগে রাজধানীতে রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এর আগে, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ‘নির্বাচনের নামে তামাশা’ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনের নামে আরেক তামাশা অনুষ্ঠিত হয়েছে যা আপনারা সবাই দেখেছেন। আমরা মনে করি যে, এটা (নির্বাচন) এতটুকু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি- এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই। সিইসি কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে সাথে সাক্ষাৎ শেষে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের নামে জাতির সাথে প্রতারণা ও তামাশা করেছে। ইভিএম মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি করেছে। সারাদিন আওয়ামী লীগের বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ভোটার এবং সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশেনের ২ হাজার ৪৬৮টি ভোট কেন্দ্রে এদিন ভোট হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে, যা নিয়ে বিএনপি শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছিল।উত্তরে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, আর দক্ষিণে ঢাকা সিটির সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। এর বিপরীতে উত্তরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আগের মেয়র আতিকুল ইসলাম এবং দক্ষিণে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসা শেখ ফজলে নূর তাপস। বিএনপির অভিযোগ, দুই সিটির বেশিরভাগ কেন্দ্রে তাদের পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেয়া হয়নি অথবা বের করে দেওয়া হয়েছে। তাদের এ অভিযোগকে মিথ্যাচার আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের একজন নেতা। বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা অফিসে থেকে এই নির্বাচনকে পর্যবেক্ষণ করেছি। আজকে সকালে শুরু হয়েছে একটা বড় রকমের বিধি লঙ্ঘনের মধ্য দিয়ে। সেটি হচ্ছে যে, প্রধানমন্ত্রী সিটি কলেজে ভোট দিতে গিয়ে তিনি যে বক্তব্য রেখেছেন তা সরাসরিভাবে নির্বাচনের হস্তক্ষেপের শামিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট প্রদান করে সকালে গণমাধ্যমে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান, যা নির্বাচনী বিধির মধ্যে পড়ে না এবং যা আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তার এই আহ্বানে দলীয় সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র দখল এবং বিএনপি দলীয় এজেন্টদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে অনেককে; সমস্যা হয়েছে খোদ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) ক্ষেত্রেও। শনিবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়। এবারই প্রথম সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হয়। এবারের সিটি নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। কাউন্সিলর পদে ২৫১ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৭৭ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উত্তর সিটিতে ওয়ার্ড ছিলো ৫৪টি। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদের জন্য লড়ছেন ৭ জন। কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী প্রার্থী হয়েছিলেন ৮২ জন। দক্ষিণে ওয়ার্ড ছিলো ৭৫টি। ঢাকায় ভোটার সংখ্যা ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪৬৭ জন। ঢাকা উত্তর সিটির ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোট কক্ষের সংখ্যা ছিলো ৭ হাজার ৮৪৬টি। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোট কক্ষ ছিলো ৬ হাজার ৫৮৮টি। এবার ঢাকা উত্তরে ৮২৬ আর দক্ষিণে ৭২১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করা হয়েছিলো। এই কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও নজরদারি ছিলো প্রশাসনের।ভোটকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে ছিলো কড়া নিরাপত্তা। যানবাহন চলাচলেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিলো। ৩০ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়া ৩১ জানুয়ারি (শুক্রবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল সীমিত করা হয়। সদরঘাটে নৌ চলাচলও শুক্রবার রাত ১২টা থেকে ২৪ ঘণ্টা বন্ধ ছিলো। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, আনসার ছিলো ভোটের নিরাপত্তায়। সিটি নির্বাচন এবার নানান দিক থেকে ছিলো আলোচিত। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা সমানতালে প্রচার চালিয়েছেন। ব্যাপক ধরনের ধরপাকড়, হামলার অভিযোগ অন্যবারের চেয়ে কম ছিলো। বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে হামলার ঘটনা ছাড়া বিএনপি থেকেও বড় কোনো অভিযোগ ছিলো না। দুই দলের কর্মীদের মধ্যেই উৎসবের আমেজ ছিলো। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও বলেছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের বড় পাওয়া সবাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারা। প্রধান চার প্রতিদ্বন্দ্বী আতিকুল ইসলাম, তাবিথ আউয়াল, শেখ ফজলে নূর তাপস, ইশরাক হোসেন তাদের প্রচারে অকপটে স্বীকার করেছেন, ঢাকার অবস্থা খুব ভালো নয়। তারা ঢাকাকে বাঁচাতে চান। এছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু রোগের ভয়াবহতা নিয়ে চারজনই কথা বলেছেন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে তারা মশা নিধনের কার্যক্রমকে নিজেদের ইশতেহারে প্রাধান্য দিয়েছেন।