বরিশালে ৮০ শতাংশই গ্রাহকই পাচ্ছেনা গৃহঋণ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:৩০, মার্চ ২৪ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে ৮০ শতাংশ আবেদনকারীকে গৃহঋণ দিতে পারছেনা বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন। সরকারি খাতের হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন পুরোপুরি গৃহায়ণ সেবায় নিয়োজিত। এ প্রতিষ্ঠানটি শহরের পাশাপাশি জেলা ও উপজেলায়ও ঋণ দিচ্ছে। মানুষের বসতবাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত আর্থিক জটিলতা সমাধানে হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন থেকে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার কথা থাকলেও বরিশালে দেখা গেছে এর উল্টো চিত্র। জমির দাগ সংক্রান্ত জটিলতায় আশি শতাংশই গ্রাহক ঋনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। যে কারণে গত বছর মাত্র দশ কোটি টাকা গ্রাহকদের মাঝে ঋন প্রদান করা হয়েছে। যেখানে তার আগের বছর প্রদান করা হয়েছিল ত্রিশ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, গত বছর গ্রাহকদের মাঝে ঋন দিতে না পারায় প্রায় সাত কোটি টাকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফলে অর্জিত হচ্ছেনা বরিশাল হাউজ বিল্ডিং দপ্তরটির বার্ষিক ঋণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা। তাই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক অনেকটাই হতাশা নিয়ে ঋণ বিতরণে তাদের অক্ষমতা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। এদিকে ঋণ বিতরণে স্থিতিশীলতা নিয়ে অনুসন্ধানে হাউজ বিল্ডিং দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দলিলে জমির একাধিক দাগের কথা উল্লেখ থাকলেও ভোগদখলের ক্ষেত্রে অনেক সময় একটি কিংবা দুটি দাগের কথা বলা হয়। কিন্তু জমির মিউটেশনে কেবলমাত্র ভোগদখলের ওই একটি কিংবা দুটি দাগের কথা উল্লেখ থাকে না। সেখানে দলিলে উল্লেখিত সবগুলো দাগের কথা উল্লেখ করে মোট জমির পরিমান নির্ধারিত হয়। আর তখনই তৈরী হয় জটিলতা। অর্থাৎ ভোগদখলের জন্য দলিলে একটি দাগ নিদিষ্ট করা হলেও ওই দাগ থেকে জমির পুরো অংশ নিতে পারবে না জমির মালিক। ফলে জমির মালিকরা বাড়ি করার জন্য ঋণের আবেদন করলে তা প্রাথমিকভাবে বাতিল হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বরিশাল হাউজ বিল্ডিং দপ্তরের ব্যবস্থাপক মো: আলামিন বলেন, কেন্দ্রিয় অফিস থেকে নির্দেশনা রয়েছে যে, একাধিক দাগে ভোগদখলীয়দের ঋণ সুবিধা দেয়া যাবেনা। যদি ভোগ দখলে থাকা দাগের জমি ঋণ সুবিধা পাওয়ার মতো পরিমাণে থাকে তাহলে আবেদনকারী ঋণ পাবে। কিন্তু কেউ যদি পাঁচ শতাংশ জমি পাঁচটি দাগ থেকে কিনে এবং ভোগদখলে পাঁচটি দাগের যে কোন একটি দাগ থাকে তাহলে ঋণ দিতে সমস্যা কোথায়? কারণ প্রতিটি দাগের মালিকতো জমির দাতাই। এসময় তিনি আরো বলেন, পাঁচটি দাগ থেকে যে কেউ পাঁচ শতাংশ জমির মালিক হতে পারে এতে সমস্যা নেই। কিন্তু যে দাগ থেকে জমির ক্রেতা ভোগ দখলে রয়েছে উক্ত দাগে হাউজ বিল্ডিং থেকে ঋণের বিপরীতে চাহিদামতো জমি থাকতে হবে। অন্যথায় ভোগদখলীয় দাগ থেকে সে ঋণ সুবিধা পাবেনা। কারণ ভোগদখলীয় জমিকেই দাতা বা ক্রেতার মালিকানা বলে মনে করে হাউজবিল্ডিং কর্পোরেশন। আর এখনতো বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) চলছে। তাই যদি কোন মৌজার বিএস প্রিন্ট হয় সেখানে জমির একাধিক দাগগুলো মিলিয়ে একটি দাগ করে মোট জমির পরিমান উল্লেখ করা হলে তখন ঋণ দিতে দাগ সংক্রান্ত জটিলতা থাকবেনা। এছাড়াও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন থেকে বাড়ির নকশা অনুমোদন কম দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া নকশা যাতে কঠোরভাবে মেনে বাড়ি করা হয় সে ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশন থেকে নজরদাড়ি থাকার কারণে বাড়ি করতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেনা জমির মালিকরা। অনুমোদিত নকশার রাস্তা ও সাইড স্পেসের সাথে বাস্তব রাস্তা ও সাইড স্পেসের বাস্তবতা ঝুঁকিপূর্ণ, ওয়ারিশগণের মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃত স্কেচ বন্টননামা না থাকাসহ জটিলতায় ঋণ সুবিধা দেয়া যাচ্ছেনা আবদেনকারীকে। যে কারণে ঋণ মঞ্জুরি ও ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রাও অর্জিত হচ্ছেনা। এদিকে ঋণ আবেদনকারী ভুক্তভুগী হুমায়ুন কবির বলেন, যে দাগ সংক্রান্ত জটিলতার দোহাই তারা দিচ্ছে এটা যৌক্তিকতা কতটুকু এনিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ একই পজেশনের জমিতে ব্যাংকতো ঋণ দিচ্ছে। ব্যাংকেরতো সমস্যা হচ্ছেনা তাহলে হাউজ বিল্ডিয়ের সমস্যা থাকবে কেনো? এসময় ভুক্তভুগী সূত্র আরো জানায়, ব্যাংকে তো জমি বন্ধক রেখেই ঋণ নিতে হয়। একজন ক্রেতা যখন জমি ক্রয় করে তখন দাতা তাকে হয়তো কয়েকটি দাগের সমন্বয়েই জমি বুঝিয়ে দিয়ে থাকে। আর ক্রেতাও তার সুবিধা মতো ভোগ দখল বুঝে নেয়। কারণ একটি দাগ থেকে চাহিদা মতো জমি পাওয়াতো দুস্কর বা অসম্ভব। কেউ দশ শতাংশ জমি শহরের মধ্যে কিনে থাকলে হয়তো সে পাঁচটি দাগ থেকে উক্ত জমি ভোগদখলে নেয়। এরমধ্যে হয়তো ক্রয়কৃত জমির মালিক পাঁচটি দাগের যে কোন একটিতে বাড়ি করে সেক্ষেত্রে কি সে অন্যান্য দাগের মালিক নয়। যদি তাই হয়, তাহলে সে জমি রেজিস্ট্রি করে ক্রয় করলো কিভাবে এবং রেজিস্ট্রি অফিস থেকেও কিভাবে জমির দলিল সম্পন্ন হলো। এমন জিজ্ঞেসার উত্তর জানতে নগরীর হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপকের কাছে পুনরায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, খেলাপী ঋণ গ্রহীতাদের বাড়ি নিলামে তুলে হাউজ বিল্ডিংয়ের টাকা তুলতে গেলে অনেক জায়গায় দাগ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে নিলাম ডাকা সম্ভব হয়নি। কারণ হলো ভোগদখলীয় দাগের জমিসহ অন্যান্য দাগ মিলিয়ে জমি আমাদের কাছে বন্দক রাখলেও পরবর্তীতে জমির দাতা অন্য দাগ অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেয় এবং অন্য দাগ নিয়ে আবার মামলাও হয় পরবর্তীতে। যেকারণে ভোগদখলকারীর জমি সংকট তৈরী হয় তাই নিলাম ডাকা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। এহেন পরিস্থিতিতে আমাদের কেন্দ্রিয় অফিসের সিন্ধান্ত হলো একাধিক দাগের জমির মালিকের প্রিন্ট বিএস থাকতে হবে। কিন্তু বিএস প্রিন্ট হতে তো অনেক সময় লাগে এখনোতো বিএসের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম চলছে অনেক মৌজায়ই। এসময় তিনি আরো বলেন, একাধিক দাগ থাকলেও সমস্যা নেই যদি ভোগদখলীয় দাগের জমি ঋণের জন্য উপযুক্ত পরিমাণে হয় তাহলে ঋণ দিতে সমস্যা নেই।