নিত্যপণ্যের লাগাতর মূল্যবৃদ্ধিতে উৎকন্ঠায় নগরবাসী

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:০২, মার্চ ২০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ রমজান ঘিরে এবারও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট নতুন করে ফাঁদ পেতেছে। রমজান শুরুর দুই মাস আগ থেকে নিত্যপণ্যের দাম নীরবে পরিকল্পিতভাবে বাড়ানো হচ্ছে। যাতে রমজানে পণ্যের দাম বেড়েছে এমন অভিযোগ না ওঠে। এবার শবেবরাতের অনেক আগেই নিত্যপণ্যের লাগাতর মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারন পরিবারগুলোর সংসারে অচলবস্থার সাথে দূর্ভোগও ক্রমশ বাড়ছে। গত প্রায় ৪ মাস ধরে চালের বাজারে উর্ধমুখি প্রবনতার মধ্যেই ডাল, ভোজ্য তেল ও চিনির মূল্য বৃদ্ধিতে অনেক পরিবারই চলছে যথেষ্ঠ টানাপোড়েনে। এরসাথে রান্নার গ্যাসের দাম প্রায় ২৫ ভাগ বেড়ে এখন হাজার টাকার ওপরে। ফলে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সংসারে অচলবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সামনের রমজানে কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে সাধারন মানুষের উৎকন্ঠা ক্রমশ বাড়ছে। গত একমাসে দক্ষিণাঞ্চলের পাইকারী বাজারে চালের দাম বেড়েছে প্রকারভেদে ৩ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত। আগের ৩ মাসেও কেজি প্রতি ৫ টাকা দাম বেড়েছে চালের। এখন নিম্ন-মধ্য মানের ‘বিআর-২৮’ বা ‘আঠাশ বালাম’ চাল বিক্রী হচ্ছে ৪৬-৪৮ টাকা কেজি। আর মধ্যম মানের মিনিকেট চালের কেজি ইতোমধ্যে ৬৫ টাকায় উঠেছে। বিগত আমন মৌসুমে চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে ছিলনা। বোরো ধান কৃষকের ঘরে ওঠা অত্যাসন্ন হলেও চালের বাজার কতটা নিম্নমুখি হবে, তা বলতে পারছে না খাদ্য বিভাগ। দক্ষিণাঞ্চলে ভাল মানের সয়াবিন তেলের লিটার এখন ১৪০-১৫০ টাকা। চিনির কেজি সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছে খুচরা পর্যায়ে ৭২Ñ৭৫ টাকা কেজিতে বিক্রী হচ্ছে। মুগ ডালের কেজি ১৩৫-১৪০টাকা। মুসুর ডাল ১১০-১২৫ টাকা কেজি। এদিকে আমদানীকৃত পেয়াঁজের দামও ইতোমধ্যে ৪০ টাকা পৌঁছেছে। দেশী পেয়াঁজ আবার ৪৫ টাকার ওপরে। রসুন ও আদার দাম আগের অবস্থানেই ভোক্তাদের ক্রয়সীমার মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে গত দুমাসে এলপি গ্যাসের দাম সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডার প্রতি আড়াইশ থেকে ৩শ টাকা বেড়ে এখন হাজার ৫০ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থা-টিসিবি আমদানীকৃত পেয়াঁজের বোঝা নিয়ে বিপাকে থাকলেও এতদিন তাদের ভান্ডার চিনি, ডাল ও সয়াবিন তেল শূণ্য হয়ে পড়ায় বিক্রী প্রায় বন্ধ। তবে শণিবার থেকে বরিশাল মহানগীতে ৫টি ও অন্য জেলা সদরে দুটি করে ট্রাকে ভোজ্য তেল, চিনি ও মুসুর ডাল বিক্রী শুরু হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি জেলার ১টি করে উপজেলাতেও টিসিবি এসব পণ্য বিক্রী করবে বলে জানা গেছে। নিত্যপণ্যের উর্ধগতি রোধে রাষট্রীয় এ বাণিজ্য সংস্থাটির কার্যক্রম প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারনের তাগিদ দিয়েছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন। টিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, রমজানের আগেই তারা পেয়াঁজের পাশাপাশি বাজারে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল ও ছোলাবুট বিক্রী কার্যক্রম অঅরো জোরদার করবেন। এতে করে এসব নিত্যপণ্যের দাম রমজনে নিয়ন্ত্রনে থাকবে বলে আশা করছে টিসিবি’র দায়িত্বশীল মহল। তবে ঠিক কবে নাগাদ টিসিবি তার পণ্য বিক্রী কার্যক্রম আরো গনমুখি করবে, তা বলতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এদিকে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির রেশ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বাজারে ব্রয়লার মুরগীর দাম প্রতি কেজিতে ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গরু ও খাশীর গোসতের দামও কেজিপ্রতি বেড়েছে ৪০ ৫০ টাকা। একই সাথে বেড়েছে মাছের দামও। তবে মেঘনা ও তার কয়েকটি শাখা নদÑনদীতে দু মাসের জন্য সব ধরনের মৎস্য আহরনে নিষেধাজ্ঞার কারণে বাজারে মাছের সরবারহও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দামও বাড়ছে। বরিশাল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহ শোয়াইব মিয়া বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে। রমজান ঘিরেও তদারকি শুরু হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া অধিদপ্তরের টিমের সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তদারকি সদস্যরা কাজ করছেন। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। দরকার হলে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। এদিকে নিত্যপণ্যের লাগাতর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রনে রাখতে জেলা প্রশাসকের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মো: মারুফ দস্তগীর বলেন, এতোদিন আমরা করোনা নিয়ে মাঠে বেশী কাজ করেছি তবে শীঘ্রই নিত্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই রোজার আগে বাজারের দিকে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি নিত্যপন্যের দাম নিয়ন্ত্রনে রাখতে নগরীতে প্রতিদিন অভিযান অব্যাহত থাকবে।