বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে মরদেহ জিম্মি করে টাকা আদায় করছে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:১০, মার্চ ২০ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবামেক) হাসপাতালে মরদেহ বহনকারী কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস সুবিধা নেই। যে কারণে একটি সিন্ডিকেট লাশ বা রোগী আনা নেয়ার কাজে মাইক্রোবাস বা অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা দিয়ে হাসপাতাল ও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছে। চাঁদা আদায় বা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকে সিন্ডিকেটটি। চাঁদা বা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যদের অবস্থা এখন পোয়াবারো। সম্প্রতি অ্যাম্বুলেন্সে অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়ে চালকদের মধ্যে মারামরির ঘটনাও ঘটেছে। জানা গেছে, দুঃস্থ, নিম্নবিত্ত পরিবারকে চাহিদা মোতাবেক বা জোর করে অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস সুবিধা দিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে তারা। সম্প্রতি চালক কবির ও সহিদুল এক রোগীর মরদেহ বহন নিয়ে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্তি অর্থ আদায়ের পর মূল বিষয়টি সামনে আসে। এরা বরিশাল মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। তাছাড়া অন্য জেলা থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স চালকরা সল্প খরচে মরদেহ পৌঁছে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও তাদের বাঁধা দেন অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যরা। শেবামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহিউদ্দিন নামে গৌরনদীর এক ব্যক্তি মারা যান। স্বজনরা নিজস্ব গাড়িতে করে মরদেহটি নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যরা তাদের বাঁধা দেন। তারা ওই মরদেহ আটকিয়ে চাঁদা দাবি করে বলেন, এখান থেকে কোনো মরদেহ নিজ এলাকায় নিয়ে যেতে হলে তাদের মাইক্রোবাসে করেই নিয়ে যেতে হবে। তা না হলে মরদেহ বহনকারী মাইক্রোটির জন্য স্থানীয় সমিতিকে ২ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। এভাবে তারা মরদেহ আটকে রাখেন। পরে বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা অ্যাম্বুলেন্স বা মাইক্রোবাস মালিকদের সিন্ডিকেটটির সদস্যদের অতিরিক্ত টাকা ভাড়া দিয়ে গ্রামের বাড়ি পৌঁছয়। অন্যদিকে বরিশালের বাহির থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্স রোগী না নিয়ে চলে যায়। চলতি মাসের ২২ ফেব্র“য়ারী স্ট্রোক করার কারণে শেবামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয় আলতাফ তালুকদার। চিকিৎসকরা আলতাফকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকা হাসপাতালে প্রেরন করেন। এসময় শেবামেক হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির কাছে রোগীর স্বজনরা জিম্মি হয় বলে জানা গেছে। রোগীর ছেলে রুম্মান তালুকদার বলেন, অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের সিন্ডিকেটটির কাছে জিম্মি অবস্থায় ৮ হাজার টাকা ভাড়ায় আমরা অ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা হাসপাতালে রওয়ানা হই। কিন্তু সিন্ডিকেটটির দাবী করা অতিরিক্ত টাকা না দেয়ায় ও কালক্ষেপণ করার কারনে আমার বাবা ঢাকা যাওয়ার পথে মারা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল শেবামেক হাসপাতালে লাশবহনকারী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। এই সুযোগে লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। এমনকি বাহির থেকে যদি কেউ লাশ বহনকারী গাড়ি নিয়ে আসে সেক্ষেত্রে তারা মৃত ব্যক্তির স্বজনদের থেকে চাঁদা আদায় করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা হাসপাতালের কতিপয় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে মাসোয়ারা দিয়ে রোগী বা লাশ বহন করছি। এ বিষয়ে শেবামেক হাসপাতালের ডাঃ এস.এম মনিরুজ্জামান (প্রশাসন) বলেন, ‘সরকার আমাদেরকে লাশবাহী সরকারি কোনো অ্যাম্বুলেন্স দেয়নি। লাশবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও আমাদের নেই। হাসপাতাল চত্ত্বরেই এসব অ্যাম্বুলেন্স অবস্থান করে তারপরও ব্যবস্থা নেননি কনে-এমন প্রশ্নের জবাবে ডাঃ এস. এম মনিরুজ্জামান বলেন অ্যাম্বুলেন্স চালকরা আমাদের কথা শোনে না।