ইন্দো-বাংলা ফার্মার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:৪৯, মার্চ ২০ ২০২১ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ পুঁজি বাজারের তারিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমপি) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেই সঙ্গে কোম্পানির চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে তারা কোম্পানিটি’র ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন বলে অভিযোগ করেছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আপন বড় ভাই সানোয়ারুল হক সগীর। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ‘কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া এবং ক্ষতিকারক ওষুধ বাজারজাত করে আসছে। পাশাপাশি আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অভিযুক্তা দুর্নীতি করে আসছেন বলে এক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছেন সগীর। সাম্প্রতি এ অভিযোগের বিষয় নিয়ে ঢাকার পত্রিকায় সংবাদও প্রকাশিত হয়। চিঠিতে তিনি অভিযোগ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, ‘কোম্পানির প্রতিষ্ঠাকালে একক মালিক ছিলেন অভিযোগকারী সনোয়ারুল হক সগীর। পরে সম্পাদ ভাগাভাগির পরে তারা দুই ভাই কোম্পানির মালিক হন। পরবর্তী সময়ে সম্পূর্ণ কোম্পানি সানোয়ারুলের বোন মিলে দুর্নীতি করে তার সবকিছু দখল করে। এরপওে ৩২ মাস জেলহাজতে থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে তার সবকিছু ফিরে পেতে এখনোও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সানোয়ারুল হক সগীর ইন্দো-বাংলার এমডি ও পরিচালকদের বিরুদ্ধে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। তবে এখনো কোম্পানির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি কোন প্রতিষ্ঠান। গত ১৪ ডিসেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে দেয়া অভিযোগে সানোয়ারুল হক জানান, ‘ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল দীর্ঘদিন ধরে অধীনস্ত অধিদপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তার সহযোগিতায় অনুমোদন বিহিন এবং মান-বহির্ভুত, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও উচ্চ আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধকৃত পণ্য উৎপাদন ও বাজারজা করে আসছে। এছাড়া ওষুধ আইনের পরিপন্থি বিভিন্ন পণের মোড়কসামগ্রী অধিদপ্তরের অনুমোদন ব্যতিরেকে অন্য নামীয় কোম্পানির মোড়কসামগ্রীর ডিজাইন হুবহু নকল করে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। আবার একই পণ্যেও অধিদপ্তরের অনুমোদন ব্যতিরেকে অসৎ উদ্দেশ্যে কয়েকটি ডিজাইনের মোড়কসামগী ব্যবহার কওে উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এছাড়া অধিদপ্তরের অনুমোদিত পণ্যের ট্রেড নাম ব্যবহার না করে অসৎ উদ্দেশ্যে অন্য ট্রেড নামে পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালসের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ.এফ.এম আনোয়ারুল হক সাব্বির ওষুধ প্রশাসন অধিপ্তরের কতিপয় কর্মকর্তাকে মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন যাবৎ এসব অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অভিযোগ করা হলেও তার বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলেও উল্লেখ করেন চিঠিতে। এর আগে, গত বছরের ১ নভেম্বর বিএসইসির কাছে সানোয়ারুল জানান, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কসের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ধাংশের মালিক এএফএম সানোয়ারুল হকের সগীর ব্যবসার অংশ বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএফএম আনোয়ারুল হক সাব্বির জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে উক্ত প্রতিষ্ঠানের কতিপয় নামধারী পরিচালকের যোগসাজশে আত্মসাৎ করে, প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে সাধারণ জনগণের টাকা আত্মসাৎ করছে। এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানের অর্ধাংশের মালিক এএফএম সানোয়ারুল হক সগীর বাদী হয়ে বরিশাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে একটি মামলা করেছেন, যার নম্বর-২৭৬/২০২০। বিএসইসির কাছে অভিযোগে মিজানুর রহমান নামে একজন জানান, ‘ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস সামস লিমিটেডের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। উক্ত বিষয়সংক্রান্ত বর্তমান পরিচালনাকারী এএফএম আনোয়ারুল হক সাব্বির ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি লিভ টু আপিল পিটিশন করেছি, যা শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ আছে। অতএব বিষয়টি বিএসইসির চেয়ারম্যানের সদয় বিবেচনার জন্য অবহিত করা হলো।’ ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) কাছে সানোয়ারুল অভিযোগ করেন, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল একটি একক মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ১৯৯৯ হতে আমি এএফএম সানোয়ারুল হক সগীর পরিচালনা করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২ জুলাই ওয়ারিশ বণ্টননামা করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি এএফএম সানোয়ারুল হক সগীর ও তার ভাই এএফএম আনোয়ারুল হক সাব্বির যৌথভাবে পরিচালনা করে আসতে ছিলেন। ২০১৩ সালে ব্যবসায়িক বিভিন্ন কারণে উক্ত কোম্পানিটি লোকসানের সম্মুখীন হয় এবং ব্যাংক, বিভিন্ন আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ সময়ে আমার ভাই এএফএম আনোয়ারুল হক (সাব্বির) উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনার দায়িত্ব এককভাবে গ্রহণ করে। বিগত সেপ্টেম্বর ২০১৩ হইতে আনোয়ারুল আমার পরিবারের কতিপয় সদস্যের যোগসাজশে কিছু অবৈধ, বেআইনি, ভুয়া দলিল ও কাগজপত্র জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃষ্টি করে উক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে একক অধিপত্য বিস্তারের পাঁয়তারা করিয়া আসিতেছে এবং আমি অসুস্থ থাকার সুযোগে প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে পরিচালনা করছে ও সর্বত্র সে একক মালিক বলে প্রচার করে আসছে। এছাড়া অভিযোগে আরও জানানো হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানটির বেশকিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণ রয়েছে। যার মালিক হিসেবে সানোয়ারুলের নাম এবং জামিনদার হিসেবে আনোয়ারুল হকের নামে বিবাদী করে মামলা করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ইন্দো-বাংলা ফার্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তবে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। প্রসঙ্গত, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস পুঁজিবাজারে ২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১১ কোটি ১৫ লাখ সাত হাজার।