বির্তক আর ইউএনও মুনিবুর যেন সমান্তরাল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:৪৪, মার্চ ১৮ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ ব্যয় বাবদ মোট ১ কোটি ১১ লাখ টাকা কলাপাড়ার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমানের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঠিকাদার ওই বিল তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান বরিশাল সদর উপজেলায় এসে ফের বিতর্কের তৈরী করেছেন এক জমির মালিককে জেল হাজতে প্রেরণের হুমকি সহ অপর এক দোকান কর্মচারীকে বেধড়ক মারধর করে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী জমির মালিক বরিশাল জেলা প্রশাসক দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অস্বীকার করলেও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার। ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, সরকারি জমি উদ্ধারে গিয়ে আইন হাতে তুলে নিয়ে এক দোকানের কর্মচারীকে বেধড়ক পিটুনি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। পাশাপাশি সরকারি ওই জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকা সত্বেও সরকারি জমি লিখে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়াসহ জমির মালিককে জেল হাজতে প্রেরণের হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বরিশাল জেলা প্রশাসকের নিকট অভিযোগের পর এবার দারস্থ হয়েছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে। চলতি মাসের ১১ মার্চ ভুক্তভোগী এনামুল হক বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, বরিশাল সদর উপজেলাধীন ২৫ নং তৌজির ৫৬ নং রুপাতলী মৌজার এসএ ১৮৫০ খতিয়ানে ১১৪৬ নং দাগের ৭২ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৬৫ শতাংশ সম্পত্তি মিউটেশন আপীল ২০/২০১৮ নং মোকদ্দমায় অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) সকল পক্ষের কাগজপত্রাদি যাচাই, সংশ্লিষ্ট ভিপি কেস নথি, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন তালিকা 'ক' ও 'খ' তালিকা পর্যালোচনা পূর্বক গত বছর ৩০ ডিসেম্বর তারিখে এক আদেশে সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর আদালতে কেস নথি প্রেরণের নির্দেশ দেন। পরে উক্ত ভূমি আদালতে প্রেরিত হয়ে চলতি বছরের ১৬ মার্চ কেসের দিন ধার্য্য করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে গত ৪ মার্চ তারিখে কোন নোটিশ প্রদান না করেই দুপুর আনুমানিক ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে ওই জমিতে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান। জমির পাশে অবস্থিত মেসার্স আসমা স্টীল কারখানার কর্মচারী আমিনের কাছে জমির মালিকের মোবাইল নম্বর চান। কিন্তু মোবাইল নম্বর দিতে ব্যর্থ হলে স্টীল কারখানার কর্মচারীকে বেধরক চর থাপ্পর ও কিলঘুসি মারেন তিনি। বিষয়টি জানতে পেরে বিরোধীয় জমির মালিক এনামুল হক ঘটনাস্থলে আসলে ইউএনও তাকেও জেল হাজতে প্রেরণের হুমকি ও অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে আসমা স্টীল কারখানার ভূমিসহ পাশের বিরোধীয় ভূমিতে লাল নিশান ও “ইহা সরকার নিয়ন্ত্রিত সম্পত্তি” সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এমতবস্থায় বরিশাল সদর উপজেলা ইউএনও কর্তৃক অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আদালতের গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের আদেশ অগ্রাহ্য করে ৭২ শতাংশ ভূমির মধ্যে ৬৫ শতাংশ ভূমিতে লাল নিশান ও সাইনবোর্ড লাগানো হয় এবং অন্যায়ভাবে পাশের জমির দোকান কর্মচারী আমিনকে মারধর এবং জমির মালিক এনামুল হককে জেল হাজতে প্রেরণের হুমকিসহ অশালীন আচরণ করার অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের বরাবর আবেদন জানান। এদিকে মারধরের শিকার দোকান কর্মচারী আমিন জানান, আমি আসমা স্টীলের দোকানে নতুন যোগদান করেছি। চলতি মাসের ৪ তারিখ দুপুরের দিকে বরিশালের সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান স্যার আমাদের কারখানায় এসে পাশের জমির মালিক এনামুল হকের খোঁজ করেন এবং আমার কাছে তার মোবাইল নাম্বার চান। এনামুল হকের নাম্বার আমার কাছে নেই বলে তাকে জানাই। কিন্তু ইউএনও স্যার নাম্বারের জন্য বারবার চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তিনি আমার গালে কয়েকটি থাপ্পর দেয়। এ ব্যাপারে আসমা স্টীল এর স্বত্তাধীকারী আজিউল্লাহ বলেন, আমার অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে দোকান কর্মচারী আমিন মোবাইলে জানায়, ইউএনও স্যার তাকে বিনা কারনে মারধর করেছে। বিষয়টি জেনে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। ইউএনও স্যার পাশের জমির মালিক এনামুল হকের নাম্বার চেয়েছিল কিন্তু আমার কর্মচারীর কাছে ছিল না। তিনি আরো বলেন, পাশের জমির মালিকের মোবাইল নাম্বার না থাকাটি কি দোষের? তাহলে কেন আমার কর্মচারীকে চড়-থাপ্পর দেয়া হলো? সরকারের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার কাছ থেকে এ ধরনের ব্যবহার আশা করা যায়না। এদিকে পার্শ্ববর্তী জমির মালিক অভিযোগকারী এনামুল হক জানান, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান আমাদের জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকা সত্বেও “সরকার নিয়ন্ত্রিত সম্পত্তির'” নিশানা টানিয়েছে। আমার সাথে দুর্ব্যবহারসহ হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি আমার জমির পাশে স্টীল কারখানার কর্মচারী আমিনকে চর-থাপ্পর মেরেছেন। বিষয়টির বিচার চেয়ে আমি বরিশাল জেলা প্রশাসকের পর এবার বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মুনিবুর রহমান জানান, ২০১৭ সালে (১৫০) ভূমি অফিস থেকে রায়টি এডিসি রেভিনিউ কোর্ট স্থগিত করে দিয়েছে। রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এতদিন ব্যবস্থা নেয়া না গেলেও আমরা গত বৃহস্পতিবার সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারে নিশানা উড়িয়েছি। এছাড়া অন্য কোন রায়ের কপি আমাদের কাছে আসেনি বা আমাদের জানা নেই। এদিকে দোকান কর্মচারী আমিনকে মারধরের বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, আমি আমিনকে চিনিইনা।