হিজলার ধুলখোলা ও মেহেন্দীগঞ্জের কালিগঞ্জে মৎস্য নিধন অব্যাহত

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৫:২৯, মার্চ ১৬ ২০২১ মিনিট

এ এইচ মাহমুদ ॥ দেশের মৎস্য সম্পদ সুরক্ষায় সরকার ঘোষিত দুই মাস ব্যাপী স্থানভেদে মৎস্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করলেও থেমে নেই হিজলা উপজেলার ধুলখোলা ও মেহেন্দীগঞ্জের কালিগঞ্জে মাছ ধরা। গত ০১/০৩/২০২১ ইং তারিখ থেকে শুরু হয় অভয়াশ্রমে মৎস্য নিধন বন্ধ কার্যকম। অথচ ঘোষিত এলাকা মেঘনা উপত্যকায় প্রতিদিন চলছে মৎস্য নিধন। গত ১৫ দিনের মধ্যে একদিনের জন্যও থেমে নেই ধুলখোলা ও কালিগঞ্জের জেলেদের মাছ ধরা। আর থামবেই কিভাবে জেলেদের মাছ ধরার পেছনে উৎসাহ যোগানদাতারা যথেষ্ট প্রভাবশালী। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, হিজলার ধুলখোলা ইউনিয়নে যে সমস্ত মাছের ঘাট রয়েছে সবগুলোই নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকার দলীয় প্রভাবশালী কালাম বেপারী। আর মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়া ও কালিগঞ্জ এলাকার মাছঘাট নিয়ন্ত্রণ করেন ওই এলাকার প্রভাবশালী তারেক সরদার। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে তারেক সরদার ও কালাম বেপারী দু’জনেই স্থানীয় সাংসদ এর আশির্বাদ পুষ্ট। এদিকে গত ১১/০৩/২০২১ ইং তারিখে মেহেন্দীগঞ্জের জনৈক সচেতন নাগরিক সরকার ঘোষিত অভয়াশ্রমকে অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষায় মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক ও জেলা মৎস্য অফিসার বরাবরে দরখাস্ত পেশ করেন। পরে “দৈনিক দেশ জনপদ” পত্রিকায় গত ১৫/০৩/২০২১ ইং তারিখে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা প্রদান করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দরখাস্ত পেশকারী ওই ব্যক্তি মৎস্য নিধনের এলাকাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের নাম পরিচয় উল্লেখ করে তার আবেদন জমা দেয়ার পরেও বন্ধ হয়নি মৎস্য নিধন। উপরন্তু বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য যে, মৎস্য নিধনের সময়, বিক্রির স্থান ও মাছঘাটের সুনির্দিষ্ট এলাকার পরিস্থিতি জানিয়ে স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসার, স্থানীয় নৌপুলিশ কর্তৃপক্ষ ও কোস্টগার্ড এর পেটি অফিসারদের মৌখিকভাবে অবহিত করার পরেও যথাসময়ে কেউ উল্লেখিত স্থানে গিয়ে কোন প্রকার আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্নের সঞ্চার হয়েছে। এই বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা মৎস্য অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, হিজলা ও মেহেন্দিগঞ্জের দুই মৎস্য কর্মকর্তা প্রায় প্রতিদিনই নদীতে গিয়ে জেলেদের ধরে আনছেন এবং আইনের আওতায় এনে জেল জরিমানা করতেছেন। নির্ধারিত সময়ে মাছঘাটে গিয়ে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর অভিযান চালানো তাদের পক্ষে অসম্ভব। পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এদিকে প্রভাবশালী তারেক সরদার ও কালাম বেপারীর বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর মেলেনি। স্থানীয়রা জানায়, মাসতুতো ভাই সম্পর্কে অবৈধভাবে তারা এ ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। মৎস্য অফিসাররা অভিযানের নামে কয়েকজন জেলে আটক করলেও মূলহোতারা থাকে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তারা অরো জানায়, ধুলখোলা ও কালিগঞ্জের মাছঘাটে মাছ কেনাবেচা শুরু হয় সকাল ৭ টা থেকে ৯ টা পযর্ন্ত এবং সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা। এ সময়ে কখনোই কোন আইশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায় না। মাঝে-মাঝে নির্দিষ্ট ওই সময়ে অভিযান পরিচালিত হলে মৎস্য নিধন অনেকটা কমে যেত। এ ব্যাপারে কালিগঞ্জ নৌ পুলিশের ইন্সপেক্টর বেলাল হোসেন বলেন, পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে তিনি সঠিকভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারছেন না। মাছ কেনাবেচার সময়ে মাছের ঘাটে গিয়ে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্সপেক্টর বেলাল প্রসঙ্গ পরিবর্তনের চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীকালে সময়মতো অভিযান করবেন বলে জানান। উল্লেখ্য, হিজলা উপজেলায় প্রায় ২২০০০ হাজার জেলে এবং মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায় ২৫০০০ হাজার জেলে পেশাগতভাবে মাছ ধরার সাথে সম্পৃক্ত।