রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ ছিল সোমবার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিন। এই দিনেও শান্তিপূর্ণ সভা-শোভাযাত্রা ও সরকারি, আধা-সরকারি অফিস-আদালত বর্জনের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। শাসক ইয়াহিয়া এদিন ঢাকায় আসেন। প্রচলিত রীতি ভেঙে বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। সফরসূচিতেও ছিল গোপনীয়তা।
পরের দিনের ইত্তেফাকের সংবাদে বলা হয়, এইদিনে বঙ্গবন্ধুর নতুন নির্দেশ দেন। ভুট্টোর দুই পার্টি সমাধানে পশ্চিম পাকিস্তানেই ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়। সর্বমহলে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ। ভুট্টোর সমাধানকে অগণতান্ত্রিক বলে উল্লেখ করেন পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে সকল কাজে বাংলা প্রচলনের সিদ্ধান্ত হয়। স্থানীয় শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের এক সভায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের গণবিরোধী ভূমিকার নিন্দা করা হয়। বেতার কেন্দ্রে সংগ্রাম কমিটি গঠন।
সাংস্কৃতিক আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপ পায়
সমঝোতার নাটক করতে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে আসলেও মুক্তিকামী বাঙালী তাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখে। দেশবাসীকে অধিকার বঞ্চিত করার প্রতিবাদস্বরূপ শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা তাদের খেতাব বর্জন এইদিনেও অব্যাহত রাখেন। চারদিকে শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যায়।
শিল্পাচার্য জয়নুলের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে সাংবাদিক-সাহিত্যিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এবং অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী তাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জন করেন। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে এ খেতাব বর্জনের বিষয়টি ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এদিন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সব শিল্পী, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীকে রাষ্ট্রীয় খেতাব বর্জনের আহ্বান জানায়। দেশবাসী বেশি উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেয়ে নিজেদের সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করতে থাকে। এ দিনে ঢাকা শহরে শিল্পী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক সবার সভা-সমাবেশ চলতেই থাকে।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ছাড়া সব উপেক্ষিত
১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় একাত্তরের মার্চের ধারাবাহিক বর্ণনা প্রকাশ করা হতো। সেখানে ১৫ মার্চের পত্রিকায় বলা হয়, অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টম দিনে এসে প্রতিরোধ আরও বেড়েছে। এ সময়ে দেশ পরিচালিত হতো বঙ্গবন্ধুর দেওয়া নির্দেশনার ওপর। মাঝে মাঝে তাজউদ্দীন আহমেদ ব্যাখ্যা দিতেন নির্দেশাবলীর। পাকিস্তানের সামরিক আইন জনতার বলিষ্ঠ সংগ্রামের মুখে পড়েছিল। দেশের মানুষ সেসময় সব একেবারেই অচল করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাড়া আর সবকিছুই তারা উপেক্ষা করতো। এই দিনে স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান বাঙালিদের প্রতি। মহিলা পরিষদ এক বিক্ষোভ মিছিল করে।