পটুয়াখালীতে চাল জুটছেনা প্রকৃত জেলেদের ভাগ্যে

দেশ জনপদ ডেস্ক | ১৯:০৪, মার্চ ১৫ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক॥ জাটকা সংরক্ষণ কর্মসূচির আওতায় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ৪০ কেজি করে বরাদ্দ ৮ মাসের খাদ্য সহায়তা পায়নি অধিকাংশ উপকূলীয় জেলেরা। এদিকে ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন জাটকা নিধন বন্ধে দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মৎস অধিদপ্তর। মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কর্মসূচি বাস্তবায়নে অসচ্ছল জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ২ কিস্তিতে জেলেরা এ চাল পাবেন বলা হলেও অধিকাংশ জেলেরা চাল পায়নি। ফলে জেলেরা রাতের আধারে মৎস শিকার করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। পটুয়াখালী জেলার সদর, কলাপাড়া, বাউফল, গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, মির্জাগঞ্জ, দশমিনা ও দুমকি উপজেলার ৭০ ভাগ প্রকৃত জেলেদের নাম তালিকায় নেই বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে বরিশাল বিভাগের বরাদ্দকৃত চাল নিজ নিজ ইউপি কার্যালয়ে পৌঁছে গেছে। এ বছর বরিশাল বিভাগের ২ লাখ ১ হাজার ৭৯ পরিবার চাল পাবে। ১ম ধাপে ফেব্রুয়ারি-মার্চ দুই মাস প্রতিটি নিবন্ধিত ও কার্ডধারী জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি হারে (২ মাসে ৮০ কেজি) চাল প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে উপকূলীয় অধিকাংশ জেলে সরকারী চালের দেখা পায়নি। ফলে পটুয়াখালী জেলায় বাউফল উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীকে ঝাটকা ইলিশ রক্ষা করার জন্য অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও দিশেহারা শত শত জেলে নদীতে ইলিশ আহরণের উৎসবে মেতেছে। চর ভেদুরিয়া থেকে চর রুস্তুম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার তেঁতুলিয়া নদীর মোহনা, নিমদি, মমিনপুর, কালাইয়া, চন্দ্রদ্বিপ ও ধুলিয়া এলাকার প্রায় ৪০ কিলোমিটারের সকল স্থানই অরক্ষিত। সরেজমিনে দেখা গেছে শত শত জেলে নৌকা ভাসাচ্ছে তেতুলিয়ার বুকে। এ ব্যাপারে অত্র এলাকার জেলেরা জানান, সরকারের দেয়া ত্রান চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এখন ইলিশ ধরার মৌসূম। এ সময়ই মহাজন ও দেনাদারদের পাওনা পরিশোধ করি। মহাজনের দেনা ও সন্তানদের মুখে একমুঠো ভাত জুটানোর চিন্তা করে জেল জরিমানা মাথায় রেখে ঝুঁকি নিয়েই নদীতে নামতে হচ্ছে। আমাদের নৌকার ৭ জন জেলের মধ্যে ১ জনের নাম চালের তালিকায় আসছে। বাকিরা চাল পায়নি। রাঙ্গাবালী উপজেলার খালগোড়া এলাকার জেলে ইমরান বলেন, দীর্ঘদিন মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু সরকারের জেলে তালিকায় আমার নাম নেই। অনেক জেলে মারা গেছেন তাদের নামে বরাদ্দ আসছে। মাছ ধরা থেকে বিরত থাকার কারণে আমাদের অনেক কষ্টে পরিবার নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। চাল বিতরনের ধীরগতি এবং প্রকৃত জেলেদের নাম তালিকায় না থাকার ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। পটুয়াখালী সদর উপজেলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়েছে স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যানরা যে সকল জেলেদের নামের তালিকা অফিসে জমা দিয়েছে তাদের মাঝে সুষ্ঠভাবে চাল বিতরন করা হয়েছে এবং যে সকল জেলে এখনও চাল পায়নি তাদের তালিকা করে চাল বিতরন করা হবে। অপরদিকে বিভিন্ন উপজেলার ইউপি মেম্বার বলেছেন উর্ধতন কর্মকর্তারা যেভাবে তালিকা করতে বলেছে সেভাবে তারা তালিকা করেছেন। প্রকৃত জেলেরা চাল না পাওয়ার ব্যাপারে দায় এরিয়েছেন ইউপি মেম্বাররা। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, ইলিশ আহরন বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা। মাইকিং এবং লিফলেট বিতরন করে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। যে সকল জেলেরা চাল পেয়েছে তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং যে সকল জেলেরা চাল পায়নি তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সুষ্ঠভাবে চাল বিতরন করা হবে।