রিপোর্ট দেশ জনপদ॥ বরিশালে টপ টেন শোরুমে হামলা ও লুটপাটের মামলায় মাত্র ১৫ হাজার টাকার চুক্তিতে প্রকৃত এক আসামির বদলে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী জেলে আছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ অনুযায়ী, কারাগারে থাকার কথা মাজহারুল ইসলাম সোহানের। কিন্তু শ্রীঘরে আছেন তারই কর্মচারী আল আমিন। তবে কারও যাতে সন্দেহ না হয়, সে জন্য আল আমিনের নামের সঙ্গে সোহান যোগ করে দেয়া হয়েছে।
বরিশালের টপ টেন শোরুমে ৭ মার্চ হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন মামলার নামধারী ২১ আসামির ১৯ জন।
ঘটনাস্থল থেকে ৫ জন গ্রেপ্তার এবং পরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন নামধারী ১৪ আসামি। ১০ মার্চ তাদের জামিন আবেদন করা হলে আদালতের বিচারক আনিছুর রহমান তা নাকচ করেন। আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের একজন নেতা বলেন, ‘টপ টেনে হামলা ও লুটপাটের সিসিটিভি ফুটেজে মাজহারুল ইসলাম সোহানকে স্পষ্টই দেখা যায়। তিনি মামলার অন্যতম আসামি জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মারুফ হাসান টিটুর পাশেই মাস্ক পরা অবস্থায় ছিলেন। মামলায় ২১ নম্বর আসামি হিসেবে সোহানের নামও রয়েছে।’
ওই ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ঠিকানা ও বাবার নাম অজ্ঞাত থাকার সুযোগে সোহান নিজে আত্মসমর্পণ না করে তার ইন্টারনেট ব্যবসার কর্মচারী আল আমিনকে ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে আরও ১৩ আসামির সঙ্গে আত্মসমর্পণ করান।
আরেক নেতা বলেন, আত্মসমর্পণের আগে একটি বৈঠক হয়েছিল। সেখানেই প্রকৃত সোহানের পরিবর্তে তার কর্মচারীর আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আল আমিন আদালতে নিজের নাম উল্লেখ করেন আল আমিন হোসেন সোহান হিসেবে এবং ঠিকানা দেন লুৎফর রহমান সড়ক। এভাবেই সটকে পড়েন মামলার আসামি মাজহারুল ইসলাম সোহান।
সোহান ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের একজন কর্মী। আর ওই হামলায় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা-কর্মীর সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
৯ মার্চ দুপুরে আদালতে ১৪ জন আত্মসমর্পণ করলেও প্রকৃত আসামি মাজহারুল ইসলাম সোহানকে সেদিন সন্ধ্যায় সরকারি ব্রজমোহন কলেজে একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেখা যায়। যা নিশ্চিত করেছেন সেখানে উপস্থিত কলেজছাত্র দিদারুল ইসলাম ও জয়ধর মল্লিক। এ ছাড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিওতে দেখা গেছে সোহানকে।
বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকার দোকানি শাহজাহান ফকির বলেন, ‘মাজহারুল ইসলাম সোহানের বাসা শের-ই-বাংলা সড়কে। তার ইন্টারনেটের ব্যবসা রয়েছে। শুনছি টপ টেনে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় সোহান জড়িত। পেপার পত্রিকায় দেখলাম সোহান জেলে। কিন্তু তারে তো প্রতিদিনই ঘুরে বেড়াতে দেখি।’
গবেষক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, ‘এর আগে পুলিশের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটেছে। ভালো করে তদন্ত করে আসল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। পাশাপাশি নির্দোষ যে ব্যক্তি জেলে রয়েছেন, তাকে মুক্ত করা হোক। পাশাপাশি এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর অর্থাৎ নকল আসামি জেলে যাওয়ায় যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হোক।’ এজাহারে নাম উল্লেখ করা আরও ২ জন এবং অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জন আসামি এখনও গ্রেপ্তার হননি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফুল আলম বলেন, ‘এই ধরনের তথ্য আমাদের কাছে ছিল না। আমি দ্রুত বিষয়টি যাচাইবাছাই করব এবং যদি সোহান নামের যে আসামি বাইরে অর্থাৎ প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর কথা বলছেন, তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।’
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আসামিদের নাম-ঠিকানা যাচাইবাছাইয়ের কাজ কিন্তু চলছে। অপরাধী কাউকেই ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই। নিজের বদলে অন্য কাউকে জেলে পাঠানোর বিষয়টি তদন্ত করা হবে। আর কেউ এই কাজ করে থাকলে, তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’