নগরীতে প্রকাশ্যে চোরাই জুতার রমরমা বাণিজ্য

কামরুন নাহার | ০১:৫১, জানুয়ারি ৩০ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদ ॥ নগরীতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জুতা চোর চক্র। বিগত কয়েকদিন থেকে এই চক্রের উপদ্রপ বেড়েছে ব্যাপক হারে। বিশেষ করে নগরীর বিভিন্ন এলাকার মসজিদে সক্রিয় এরা। চক্রের সদস্যরা চোখের পলকে জুতা চুরি করে উধাও হয়। ভিখারী, স্কুল ছাত্র, এমনকি মুসুল্লীর বেশে এসে জুতা চুরি করছে। গত এক সপ্তাহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার মসজিদ ও বাসা-বাড়ির সম্মূখ থেকে জুতা চুরির এমন বেশ কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসেছে মসজিদের সিসি ক্যামেরা ধারন হওয়া চুরির ফুটেজও পাওয়া গেছে। বিষয়টি জুতা চুরি হওয়ায় সকলে এড়িয়ে যায়। তাই কোন প্রতিকার বা চুরি রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগিরা। ব্যক্তিগত ভাবে সাবধানতার বানী প্রচার ও স্ব-উদ্যোগে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়ার কথা স্মরন করানোর মধ্য সীমাবদ্ধ। যার কারনে বাড়ছে জুতা চুরি। আর এসব চোরাই জুতা আবার বিক্রি হয় প্রকাশ্যে। চোরাই জুতা বিক্রির এমন রমরমা বানিজ্য হয় নগরীর ফজলুল হক এভিনিউ সড়কের নগর ভবনের বিপরীতে। এমন চোরাই জুতা নগদ অর্থে কিনে ফুটপাতে বিক্রি করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্রেতা জানান, শীতের মৌসুমে জুতা চুরির উপদ্রপ বেড়েছে। কারন শীতের সময় সকলেই কম বেশি দামি জুতো ব্যবহার করে। দামী জুতা নিয়ে মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গেলে সুযোগ মতো সময়ে চুরি করে। ছিচকেরা এই চুরিতে জড়িত থাকে। এদের নিয়ন্ত্রনে একটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। ওই চক্র ছিচকেদের দাদন দিয়ে এমন কাজ করায়। অন্যদিকে শীতের মৌসুমে যেমন পুরাতন পেষাকের বাজার বসে ঠিক তেমনি বাজার মেলে এই সকল পুরাতন জুতার। বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি করে আনা জুতা ধৌত করে, রংসহ মেরামত করে চক্রের সদস্যরা ফুটপাতে পুরাতন জুতার বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। এমন তথ্য দিয়ে ওই বিক্রেতা আরও জানান, তারা ব্যবসা তাই লাভের আশায় এ সকল জুতা কিনে থাকেন এবং যেকোন সময় ঝামেলার বিষয়টি মাথায় রেখেই মুলত ভ্রাম্যমান ভাবে বিক্রি করে থাকেন। বর্তমানে এমন এক চোরাই জুতার বাজার সন্ধ্যার পরে জমে ওঠে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ঠিক বিপরীত পাশেই। ওই বিক্রেতা বলেন এক শহরের চোরাই জুতা সবসমই অন্য কোন শহরে এনে বিক্রি করা হয়। তাই এ নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না কাউকেই। আর জুতা চুরি একটি তুচ্ছ ও ব্যাঙ্গাত্বক বিষয় তাই প্রশাসন ও এ নিয়ে মাথা ঘামায় না। এছাড়া ক্রেতারাও কম দামে ভালো জুতা ও চোরাই জেনেও ক্রয় করে বেশ খুশিই হয়। শীতের মৌসুমে চোরাই জুতার এমন কোটি টাকার বাজার প্রকাশ্যেই চলে বলেও জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বিক্রেতা। অন্যদিকে জুতা চুরির মতন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কারও মাথা ব্যাথা না থাকলেও যারা ভুক্তভোগী তারা প্রতিকারে নিচ্ছেন নিজেদের মতন ব্যবস্থা। নগরীর বিভিন্ন এলাকার মসজিদে জুতার বাক্স রাখা হয় সিজদার সামনে। দেয়া হয় বিশেষ এলার্ম (সাবধানি বার্তা)। নগরীর টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ জামে মসজিদের পেশ ঈমাম ও মুসল্লিদের সাথে এই বিষয় আলাপ করলে তারা জানান, গত সপ্তাহে তাদের মসজিদ থেকে এক সাথে ৬ জোড়া জুতা চুরি হয়েছে। পরে তারা সিসি টিভি ফুটেজ চেক করে দেখতে পান এক স্কুল ছাত্র বেশে চোর তার স্কুলের ব্যাগে করে নামাজ চলাকালীন সময় জুতো নিয়ে সটকে পড়ে। তারা জানান জুতা চুরি এমন একটি ব্যাঙ্গাত্বক সমস্যা যা শুধু কপাল দোষে ভোগ ই করতে হয়। যার যায় সে আল্লার ওয়াস্তে ছেড়ে দেন আর এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার মত সময় হয়ত প্রশাসনের নেই। তাই চক্রগুলো তাদের মতই থেকে যায়। ছিচকে কিছু চোর ধরা হলেও হালকা পাতলা গনধোলাইতেই এর সমাধান টানা হয়। তবে তারা প্রতি নামাজে মুসল্লিদের সতর্ক করেন। নামাজের পূর্বে জানান বিশেষ বানী, “দাড়িয়ে কাতার সোজা করুন মোবাইল ফোন বন্ধ করুন দামি অথবা নতুন জুতা নিজ দায়িত্বে সাবধানে রাখুন ”।