দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন…. যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে নির্মানাধীন তিন সেতু

কামরুন নাহার | ০১:৩৯, জানুয়ারি ৩০ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কুয়েত, জাপান এবং চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মানাধীন ৩টি সেতু দক্ষিণাঞ্চলের অর্থ-সমাজিক ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পবির্তন আনতে যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ এসব সেতুর নির্মান কাজ আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ অধিপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। নির্মানাধীন এসব সেতু সর্বদক্ষিনে সাগর পাড়ের পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা ছাড়াও দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা এবং প্রধান স্থল বন্দর বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগকে যথেষ্ট নির্বিঘœ ও সহজতর করবে। পাশাপাশি চট্টগ্রামÑবরিশাল ও খুলনা বিভাগ ছাড়াও মোংলা সমুদ্র বন্দর এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগকেও অনেকটাই সহজতর করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সড়ক অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা/বরগুনা মহাসড়কের লেবুখালীতে এক হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষ নির্মানাধীন ৪ লেনের ‘পায়রা সেতু’ নির্মানে কুয়েত এবং ওপেক উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-ভোলা-লক্ষ্মীপুর-বরিশালÑপিরোজপুর-মোংলাÑখুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশ-চীন অষ্টম মৈত্রী সেতু। প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ এ সেতুটি নির্মানে চীন সরকার সম্পূর্ণ অনুদান দিচ্ছে প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকা। জাপান উন্নয়ন তহবিল-জাইকা’র সহায়তায় বরিশাল-গোপালগঞ্জ-নড়াইল-যশোর-বেনাপোল এবং ভাংগা-ভাটিয়াপাড়া-নড়াইল-বেনাপোল মহাসড়কের কালনা’তে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত হচ্ছে প্রায় প্রায় ৭শ মিটার দীর্ঘ ৬ লেনের একটি সেতু। প্রায় ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ সেতুটির জন্য জাইকা ঋন দিচ্ছে ৭৫৩ কোটি টাকা। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা/বরগুনা মহাসড়কের লেবুখালী এলাকায় পায়রা নদীর ওপর এসেতটিুর নির্মান কাজ ইতোমধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। ১ হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ ও ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থ ৪ লেনের এ সেতুটি নির্মানে কুয়েতের ‘কেএফআইডি’ এবং ‘ ওপেক’ তহবিল সহজ শর্তে ঋন দিচ্ছে প্রায় এক হাজার ৭৯ কোটি টাকা। ২৯৯৮ সালে প্রনীত এ সংক্রান্ত ‘উন্নয়ন প্রকল্প-প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ ২০১২ সালর মে মাসে প্রথমবারের মত একনেক-এর অনুমোদন লাভ করে। তবে ‘এক্সট্রা ডোজ প্রী-স্ট্রেসড বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির নির্মান ব্যয় ইতোমধ্যে তিন দফায় সংশোধন করতে হয়েছে এর নকশা পবির্তনের কারনে। এক হাজার ২৬৮ মিটার সংযোগ সড়ক এবং প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাসন ও টোল প্লাজা সহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৫০%। ৩২টি স্প্যানে ৩১টি পিয়ার ও ২টি এবাটমেন্ট বিশিষ্ট ৪ লেনের পায়রা সেতুটির ওপরে উভয়পাশে ১.১০ মিটার ফুটপাথ থাকছে। ইতামধ্যে সেতুটির ভায়াডাক্ট-এর টেষ্ট পাইল, ওয়ার্কিং পাইল, পাইল ক্যাপ, পীয়ার ও পীয়ার ক্যাপ এবং ১ নং পিএসসি গার্ডারের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া ঐ অংশের ২৮টি ডেক স্লাবের কাজও ৬৫% শেষ হয়েছে বলে জানা গেছে। দুটি এবাটমেন্ট-এর ওয়ার্কিং পাইল, পাইল ক্যাপ ও এবাটমেন্ট ওয়াল-এর কাজও সম্পূর্ণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী আহমদ শরিফ সজিব। এছাড়া সেতুর মূল অংশের ২.৫ ও ৩.৫ মিটার ডায়ার দুটি টেষ্ট পাইল ও ২.৫ মিটার ডায়ার অতিরিক্ত ১টি টেষ্ট পাইল এবং একই অংশের ৫২টি ওয়ার্কিং পাইল এর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। এছাড়া ৫টি পাইল ক্যাপ ও ৫টি পীয়ার ক্যাপ-এর কাজ প্রায় ৭৫% এবং ১৬৭টি বক্স গার্ডার (সেগমেন্ট) এর মধ্যে ৩টির কাজ শেষ হয়েছে। পায়রা নদীর ভাঙন সহ বিরূপ আচরন থেকে সেতুটি রক্ষায় প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী শাসন কাজও শুরু হয়েছে। এছাড়াও সেতুটির বরিশাল ও পটুয়াখালী প্রান্তে প্রায় ১ হাজার ২৭০ মিটার সংযোগ সড়কের নির্মান কাজও চলছে। প্রথমে সেতুটির বরিশাল প্রান্তে টোল প্লাজা স্থাপনের কথা থাকলেও বিশেষ নিরাপত্তার বিবেচনায় তা পটুয়াখালী প্রান্তে নির্মান করতে হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পায়রা সেতু নির্মিত হলে ঢাকা সহ সারা দেশের সাথে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর ফেরি বিহীন সড়ক যোগাযোগে সংযুক্ত হবে। এর ফলে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে কুয়াকাটা পৌছানো যাবে মাত্র ৭ ঘন্টায়। এমনকি সারা দেশের সাথে কুয়াকাটার দুরত্ব হবে কক্সবাজারের প্রায় অর্ধেক। এমনকি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এ সেতু সারা দেশের সাথে সড়ক পথে অতি দ্রুত সংযুক্ত রাখবে বলেও আশা করছেন সড়ক বিশেষজ্ঞগন। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার লক্ষে কাজ করছে চীনা নির্মান প্রতিষ্ঠান, ‘লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড’এর প্রকৌশলীগন। তবে ভুমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া এখনো শেষ না হওয়ায় নদী শাসনের কাজ শেষ করতে হয়ত আগামী বছরের এপ্রিল মাস পেরিয়ে যতে পারে বলে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংযোগ সড়কের জন্য প্রায় ১২ একর এবং নদী শাসন কাজে আরো প্রায় ১৩ একর জমি হুকুম দখল করা হয়েছে। তবে পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি সহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা আরো সুগম ও গতিময় করতে বিশেষজ্ঞন যত দ্রুত সম্ভব ‘ফরিদপুরÑবরিশাল-পটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীত করন প্রকল্প’টি বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন।