নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশালে একটি মানবপাঁচার মামলার প্রধান আসামির স্ত্রী, বাবা ও শ্বশুড়কে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সাথে মামলার অপর দুই আসামিকে স্থায়ী জামিনের আদেশ দেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুরে বরিশাল মানবপাঁচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মঞ্জুরুল হোসেন এই আদেশ দেন।
মামলার প্রধান পলাতক আসামি মো. জসিম উদ্দিনের স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, জসিমের বাবা হারুনর রশিদ এবং তার শ্বশুর কাজী শামসুর রহমানকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জামিনপ্রাপ্ত দুইজন হলেন জসিমের ভাই এনামুল হক ও শ্যালক ইমন কাজী।
এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ট্রাইব্যুনাল এই মামলার পলাতক ৭ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। পরে তারা উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নেন। গত মঙ্গলবার আসামিদের জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বুধবার ধার্য তারিখে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে তারা স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। বিচারক দুই জনের জামিন স্থায়ী করেন এবং অপর তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ২০১৮ সালের মে মাস পর্যন্ত বরিশালের উজিরপুর, বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর ১৬ জনকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে দ্বীপরাষ্ট্র ভানুয়াতুতে অবৈধ পাঁচার করেন বাবুগঞ্জের রাহুতকাঠীর মো. জসিম উদ্দিন, তার স্ত্রী জান্নাতুর রহমান জুথি, ভাই এনামুল হক, বাবা হারুনর রশিদ, শ্বশুর কাজী শামসুর রহমান, শ্যালক ইমান কাজী ও ভোট ভাই পলাশ হাওলাদার। প্রতিশ্রুত দেশে না পাঠিয়ে ভানুয়াতুতে নিয়ে তারা তাদের অনাহারে একটি জাগায় আটকে রাখেন। সেখান থেকে ১২জন পালিয়ে সেদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। সেদেশের শৃঙ্খলা বাহিনী অবৈধ মানব পাঁচারের অন্যতম হোতা পলাশ হাওলদারসহ চারজনকে গ্রেফতার এবং অবৈধ পাঁচারের শিকার সবাইকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ভানুয়াতুতে একটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় পলাশ এখনও ভানুয়াতুর জেলে রয়েছেন।
পরে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেশন (আইওএম) সংস্থার সহায়তায় বাংলাদেশ সরকার ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওই ১৬ জনকে দেশে ফিরিয়ে আনে। পরে তারা টাকা ফেরত চাইলে মানবপাঁচারকারী চক্র উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও চাঁদাবাজি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দুটি মামলা দিয়ে তাদের বিপাকে ফেলেন।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৬ জনের পক্ষে উজিরপুরের মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর বরিশাল মানবপাঁচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মো. জসিম উদ্দিন ও পলাশ হাওলাদারসহ তাদের নিকটাত্মীয় সাতজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট কাইউম খান কায়সার এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।