নগরীতে তালা ভেঙ্গে শিক্ষিকার বাড়ি দখল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:১৩, ফেব্রুয়ারি ১৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে প্রকাশ্য দিবালোকে একজন প্রাক্তন শিক্ষিকার বাসভবনের তালা ভেঙ্গে দখল নিয়েছে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গতকাল কোতয়ালী মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। ঘটনার ২৪ ঘন্ট পার হলেও নিজ বাসভবনে এখনো উঠতে পারেনি ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা। দেড় যুগেরও বেশী সময় ধরে থাকা নিজ বাসায় উঠতে না পেরে নাতি-নাতনী ও মেয়েকে নিয়ে রাতভর থানা পুলিশ আর বাসার সামনে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হয়েছে ওই বৃদ্ধাকে। গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের জনবহুল আবাসিক এলাকা ব্যাপ্টিষ্ট মিশন রোডে আকন ভিলায় ঘটেছে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা। ভুক্তভোগী বৃদ্ধার অভিযোগ, পিছনে থেকে সব কিছুর কলকাঠি নাড়ছেন বাসার ভাড়াটিয়া কোতয়ালী মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এস আই) রিয়াজ উদ্দিন। পুলিশও বলছে তাদের করনীয় কিছু নেই। আদালতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে নগরীর ব্যাপ্টিষ্ট মিশন রোডে জমি ক্রয় করে দুই-তলা ভবন নির্মান করেন সাবেক শিক্ষিকা মমতাজ বেগম। যাতে নেদারল্যান্ড প্রবাসী নিজ মেয়ে ও জামাতার শেয়ার মালিকানা হিসাবে থাকেন এবং মেয়ে জামাতা হোসাইন শহীদের নামে দলিল করেন। মেয়ে জামাতা প্রবাসে থাকায় মমতাজ বেগম ও তার অপর এক মেয়ে এবং নাতনীদের নিয়ে ওই বাস ভবনে বসবাস করতে শুরু করেন এবং অবশিষ্ট বাসা ভাড়া দেন। ভাড়াটিয়াদের মধ্যে একজন রিয়াজ উদ্দিন কোতয়ালী মডেল থানায় কর্মরত উপপরিদর্শক। যিনি ২০১৮ সাল থেকে ওই বাসায় ভাড়া আছেন। ঘটনার সুত্রপাত ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে। হঠাৎ করে এসআই রিয়াজ বাসা ভাড়া বন্ধ করে দেন। এর কারন জানতে চাইলে মমতাজ বেগমকে বলেন, আপনি বৈধ মালিক না। আপনাকে আর ভাড়া দেব না। আপনার মেয়ে জামাতা ও বৈধ মালিকের সাথে আমার কথা হয়েছে। এ ঘটনার পর রিয়াজের বিরুদ্ধে সাধারন ডায়েরীসহ পুলিশ কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছেন মমতাজ বেগম। যদিও অভিযোগের বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। এরপর থেকেই আর ওই বাস ভবনে সুখে স্বাচ্ছন্দে ছিলেন না মমতাজ বেগম। পরে জানতে পারেন এস আই রিয়াজের সাথে আতাত করে প্রবাসী জামাতা ও তার ভাই আবুল কালাম আজাদ তার বাড়িঘর দখলের পায়তারা করছে। কিন্তু কৌশলগত কারনে জামাতা হোসাইন শহীদ প্রকাশ্যে বিরোধে আসেননি। শুধু তাই নয়, সুচতুর জামাতা বাড়িটি সু-কৌশলে তারই ছোট ভাই আবুল কালাম আজাদকে হেবা দানপত্র করে। যাতে আবুল কালাম আজাদ মালিকানা দাবী করে ভূক্তভোগী ওই শিক্ষিকাকে সহজেই ভবন ছাড়া করতে পারে। এরপর থেকেই এস আই রিয়াজকে সাথে নিয়ে বাড়ি দখলের ষড়যন্ত্র শুরু করা হয়। নানাভাবে বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর জুলাই মাসের প্রথম দিকে আবুল কালাম আজাদ একটি দানপত্র প্রদর্শন করে নিজেকে ওই জমি ও বাসার মালিক দাবী করে তা দখলের চেষ্টা করে। যে ঘটনার জের ধরে ৯ জুলাই কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরীও করেন ভুক্তভোগী মমতাজ বেগম। এরপরও একাধিকবার তাকে বাসা থেকে বিতারিত করার চেষ্টা চালিয়েছে এসআই রিয়াজ ও আবুল কালাম আজাদ চক্রটি। সর্বশেষ গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে মমতাজ বেগম বাসার বাহিরে অবস্থান করলে সেই সুযোগে তালা ভেঙে অজ্ঞাত ৭/৮ জন পুরুষ ও মহিলা বাসায় প্রবেশ করে তা দখলে নেয়। খবর পেয়ে মমতাজ বেগম বাসার হাজির হয়ে বাস্তবিক দৃশ্য দেখে কোতয়ালী মডেল থানা ও ট্রিপল নাইনে একাধিকবার কল করেও পুলিশের দেখা পাননি। শেষ পর্যন্ত চাপে পরে বিলম্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে মমতাজ বেগমকে অভিযোগ দেয়ার কথা বলে থানায় নিয়ে আসেন। নানা অজুহাতে ফজর পর্যন্ত তাকে থানায় বসিয়ে রেখে লিখিত অভিযোগ রাখলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি পুলিশ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মমতাজ বেগম বলেন, আদালতে ওই জমি ও বাসা নিয়ে আমার একটি মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া কোতয়ালী থানার সহকারী কমিশনার রাসেল এর কাছেও বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এমন অবস্থায় অপরিচিত কয়েকজন তালা ভেঙে আমার বসত ঘরে প্রবেশ করে দখলে নিয়েছে। পুলিশের কাছে সারা রাত ঘুরেছি কিন্তু কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। তিনি আরো বলেন, যখন লোকজন তালা ভেঙে বাসায় প্রবেশ করে তখন এস আই রিয়াজ বাসায়ই অবস্থান করছিল। কিন্তু তিনি নিরব ভুমিকায় ছিলেন। নেপথ্যে থেকে তিনিই সব কিছু করছেন, যে কারনে আমি থানা পুলিশেরও কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। তাই গতকাল দুপুরে বিষয়টি পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন, গতকাল নিরুপায় হয়ে কোতয়ালী মডেল থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেও বর্তমানে আমার বসতঘরে প্রবেশ করতে পারছি না। তবে এ বিষয়ে এস আই রিয়াজ উদ্দিন বলেন, আমি নির্দোষ। আমাকে অযথা জড়ানো হয়েছে। ভাড়া না দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করে আবুল কালাম আজাদ নামের একজন মালিকানা দাবি করে মমতাজ বেগম কে ভাড়া না দেওয়ার জন্য বলে। তাই আমি মমতাজ বেগম কে ভাড়া নিয়ে আবুল কালাম আজাদকে নিয়মিত ভাড়া প্রদান করছি। বাসা দখলের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। এ ব্যাপারে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) আসাদ বলেন, তারা সকলেই আত্মীয়-স্বজন। আর বাড়িটির মালিকানা ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা নন। কে প্রকৃত মালিক সেই বিষয় আদালত দেখবে, আপনি অভিযোগ পাওয়ার পরও কেন অবৈধ দখলদারদের গ্রেফতার করছেন না? এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তাদের এক আত্মীয় বিষয়টি সমাধানের চেষ্ট করছে। তাহলে ততোদিন ওই বৃদ্ধা কি রাস্তায় থাকবে? তখন বলেন, তাদের বাড়িতে ওঠার ব্যবস্থা করছি। এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার সহকারী কমিশনার মোঃ রাসেল হোসেন বলেন, কাউকে বাড়ি থেকে বের করা বা উঠিয়ে দেওয়া পুলিশের কাজ নয়। তাই আমরা সারা রাত ওই বৃদ্ধার সাথে থেকে প্রয়োজনীয় আইনী সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করেছি। তার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়টি চলমান রয়েছে। যেহেতেু আদালতে মামলা চলমান রয়েছে সেহেতু আদালতই এ বিষয়ে পরবর্তী নির্দেশ প্রদান করবে। পুলিশ আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করবে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেওয়া হলে তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।