দালালরাই চালাচ্ছে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস

কামরুন নাহার | ০১:১৪, জানুয়ারি ২৮ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে সাধারন মানুষদের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলছে। হতদরিদ্র জমির মালিকদের ন্যায় বিচার না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এতে লাভবান হচ্ছে কয়েকজন চিহ্নিত দালাল ও অসাধু কিছু কর্মকর্তা। দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গোটা সেটেলমেন্ট অফিস। সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধারন ভূক্তভোগিদের। কয়েকেজন অসাধু কর্মকর্তা তাদের মনোনিত দালালের মাধ্যমে অর্থ লেন-দেন করে মামলার রায় পক্ষে দিয়ে দিবে বলে এ ধরনের প্রতারনা চালিয়ে আসছে। অভিযোগ রয়েছে, দালালরাই এখন চালাচ্ছে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানায়, সেটেলমেন্ট অফিসের আইনকে তোয়াক্কা না করে এসব জালিয়াতি কর্মকান্ড চালিয়ে লাভবান হচ্ছে কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা। এ কারনে দালাল চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গোটা সেটেলমেন্ট অফিস। ভূক্তভোগীদের অভিযোগ অনুসন্ধানে জানা যায়, সুমন নামে এক দালাল বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে অনেক বছর যাবত দালালি করে আসছে। রিতিমত দালাল সুমন সেটেলমেন্ট অফিসে একটি গ্র“প তৈরি করেছে। আর ওই গ্র“পের সদস্যরা হচ্ছেন ভিআইপি। তারা বিভিন্ন অসহায় মানুষের স্বরলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জিম্মি করে প্রতিমাসে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। সেটেলমেন্ট অফিসের একটি সূত্র জানান, সুমন নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই প্রতারণা চক্রটি চালিয়ে আসছে। তাদের এই প্রতারনার খপ্পরে পরে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে হতদরিদ্র জমির মালিকরা। মামলার শুনানির তারিখ মোতাবেক শুনানি শেষ হলে রায় দেয়া হয় না। বিচারক তিনি রায় ঘোষণা করে বাদী-বিবাদীর উভয়ের উপস্থিতিতে। কিন্তু কিছুদিন পরে দালালদের মাধ্যমে উভয়পক্ষকে ভিন্ন ভিন্নভাবে বাসায় দেখা করার জন্য খবর দিয়ে থাকে কর্মকর্তারা। বাদী বিবাদীর সঙ্গে দর কষাকষি করে হিসাব না মিললে মৌখিকভাবে আবার শুনানির জন্য অফিসে আসতে বলে। তারপর থেকে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকে অফিসে। একাধিকবার শুনানি হলেও লেখা হয় না রায়। তাছাড়া সুমনের চক্রের সদস্য হিসাবে রয়েছে উজিরপুরের র্শীষ দালাল আলাউদ্দিন ও শাজাহান, দেবাশীষ, হালিম ও জোনালের পিয়ন পদে কর্মরত লতিফ গং। এছাড়া সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ভূয়া সাংবাদিকের কার্ড নিয়ে কেডিসি এলাকার সোহেল ওরফে খাট সোহেল, দপদপিয়ার বাদশা, রুপাতলির আরমান, সাগরদির আশিক ও জুয়েলসহ প্রায় এইসব অভিযুক্ত চিহ্নিত দালালদের ছায়া দিচ্ছে কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি। এরা বিভিন্ন রায় ও জাল কাগজ তৈরি করে দিয়ে লোকজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকদিন পূর্বে আশিক ও সোহেলকে চাদাঁবাজির অভিযোগে আটক করতে চেয়েছিল সেটেলমেন্টের কর্মচারীরা। এরা প্রায়ই সেটেলমেন্ট ও এসিল্যান্ড অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের কাছে নিয়মিত চাঁদা ও বখরা আনতে যায় বলে সেটেলমেন্টের কর্মচারিরা অভিযোগ করেছে। তবে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিষয়টি সম্পর্কে জানেনা বলে দাবী করেছে। এ বিষয় উজিরপুরের দালাল শাজাহান বলে, আমি আদালতে মহুরী সমিতির সহ-সভাপতি। আমি জীবনে কত সাংবাদিকদের প্যান্ট খুলছি তার হিসাব নাই। আমার কার্ড আছে আইনজীবি সহকারী, লাইন্সেস করছি তাই দালালি করি। আমি কে তা নিউজের পর জানতে পারবি। এদিকে আইনজীবী সহকারী সমিতি সাধারন সম্পাদক চুন্নু মিয়া বলেন, আমাদের কমিটিতে সহ সভাপতি তিনি না। শাজাহান মিয়া একজন সাধারণ সদস্য। অপরদিকে সুমনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলে, আমি সাংবাদিক পরিচয় দেইনি। কিছু পত্রিকা আমাকে সাংবাদিক বানাবে বলে অফার দিছে। আমি সাংবাদিক না আমি সাংঘাতিক। তবে এ সকল দালালরা সেটেলমেন্ট অফিসের দালালি করে বর্তমানে নিজেদের বানিয়েছে লাখোপতি। এদের সাথে একডজন দালাল রয়েছেন যারা এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। এ বিষয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভূক্তভোগীরা। এ ব্যাপারে বরিশাল জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার মোঃ আহসান হাবিব জানায়, গত কয়েক মাস আগে প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। তারপর দালাল তেমন একটা দেখা যায়নি। এখন আবার দালালদের আখড়া তৈরি হয়েছে। এ বিষয় প্রশাসনকে অবগত করা হবে। অভিযুক্ত দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বরিশাল সেটেলমেন্ট অফিস দালালমুক্ত করা হবে বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানায়, প্রয়োজনে দালালদের নিয়ন্ত্রনে মোবাইল কোর্ট করা হবে। তবে এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত দালালরা সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।