নৌ-দুর্ঘটনা ফান্ডের অর্থ থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ যাত্রীরা

কামরুন নাহার | ০১:০৯, জানুয়ারি ২৮ ২০২০ মিনিট

 মোঃ শাকিল মৃধা ॥ নৌ-দুর্ঘটনা ফান্ডের অর্থ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নৌ-দুর্ঘটনায় আহত কিংবা নিহত অধিকাংশ যাত্রীরা। নৌ-দুর্ঘটনা ফান্ডে যাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যাপারে জানে না দুর্ঘটনায় কবলিত যাত্রীরা। এমন কি এ সম্পর্কিত কোন তথ্যাবলী নেই বরিশাল আধুনিক নৌবন্দরে। যে কারণে অধিকাংশ সময়ই ঢাকা-বরিশাল নৌ-পথে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীরা বরাদ্দকৃত আর্থিক ফান্ড থেকে সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। সুত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নৌ-দুর্ঘটনা ফান্ডের জন্য লঞ্চগুলো থেকে যাত্রী ধারণ ক্ষমতার সংখ্যা অনুযায়ী ১৫ টাকা হারে আদায় করে নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষ। বরিশাল আন্ত:জেলা রুটে একতলা লঞ্চ চলাচল করে ২০/২৫টি এবং বরিশাল-ঢাকা রুটে তিনতলা লঞ্চ চলাচল করে ১৫/২০টি। প্রতি বছর নৌ-বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ নৌযানগুলোকে নবায়ন সনদ নিতে হয়। এর মধ্যে কীর্ত্তনখোলা, সুরভী, সুন্দরবন, মানামি, এ্যাডভেঞ্চার, পারাবত, কুয়াকাটা, টিপু ও কামাল খানসহ ঢাকা রুটের এ লঞ্চগুলোর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রীবহনে প্রতিটি লঞ্চে অনুমোদন রয়েছে ১ হাজার থেকে ১৬শ জন। অপরদিকে বিভিন্ন আন্ত:জেলা রুটে একতলা লঞ্চগুলোর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিটি লঞ্চে যাত্রীবহনে অনুমোদন রয়েছে ১শ থেকে ১শ ৫০ জন। সে হিসেব অনুযায়ী গড়ে ১২’শ যাত্রী ধারণ ক্ষমতা ২০টি তিনতলা নৌযান থেকে প্রায় ৫ লাখ এবং ২৫টি একতলা লঞ্চ থেকে গড়ে ৮০ জন যাত্রী হিসেবে আদায় করে ৩০ হাজার টাকা। নৌ-দুঘর্টনা ফান্ডের আদায়কৃত টাকা দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের প্রয়োজনে ব্যয় করা হয়। কিন্তু নৌ-দুর্ঘটনা ফান্ডে বরাদ্দকৃত টাকার ব্যাপারে না জানার কারনে এ সুবিধা পাচ্ছে না দুর্ঘটনাকবলিত অধিকাংশ যাত্রীরা। সূত্র মতে, গত তিন বছরে ঢাকা-বরিশাল রুটে নৌযানগুলোর মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত হয়েছে অন্তত ৭ জন এবং আহত হয়েছে শতাধিক। গভীর রাতে নৌযানগুলোর অসুস্থ্য প্রতিযোগীতা আর ডুবোচর এবং ঘন কুয়াশাই এই দুঘর্টনার কারন। এ ব্যাপারে বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু বলেন, নৌ-দুঘর্টনা ফান্ডের ব্যাপারটি কেন্দ্রীয় অফিস নিয়ন্ত্রণ করে। এ ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। আর দুঘটনার পর নিহত-আহতদের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ-সহায়তা দেয়া হয়। এদিকে কাগজে কলমে ধারণ ক্ষমতানুসারে নৌ-দুঘর্টনা ফান্ডের টাকা নেয়া হয়। অথচ সরেজমিনে প্রতিটি নৌযান ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুন বেশি যাত্রী বহন করছে। ফলে নৌ-দুঘর্টনার ফান্ডে জমাকৃত টাকা ফাঁকি দিচ্ছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। যা কতৃপক্ষ ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার স্বার্থে দেখেও না দেখার ভান করছে। অপরদিকে দুর্ঘটনা কবলিত যাত্রী আউয়াল সিকদার বলেন, আমি ঢাকা থেকে বরিশাল আসার পথে পারাবত লঞ্চের দুর্টনার শিকার হই। এতে আমার পা হাতে ও পিঠে জখম হয়। কিন্তু আমি জানিনা যে, যাত্রী দুর্ঘটনা ফান্ড আছে। জানলে সহায়তার জন্য দারস্থ হতাম। এতে আমার আর্থিক ক্ষতি কিছুটা হলেও লাঘব হতো। তিনি আরো বলেন, নৌ-বন্দর কতৃপক্ষের যাত্রী দুঘর্টনা ফান্ডের এ বিষয়টি হটলাইন চালুর মাধ্যমে জানানো উচিত। এছাড়া দুঘর্টনার সময় সুরক্ষার জন্য লঞ্চগুলোতে নৌ-বন্দর কতৃপক্ষের কোন যোগাযোগ নাম্বার নেই। এমনকি ফায়ার সার্ভিস বা নৌ-পুলিশেরও কোনো নাম্বার নেই, যে আপতকালীন সময়ে ফোন করে প্রাণে বাঁচার সাহায্য জানাবো। তবে ভুক্তভুগী যাত্রীদের এমন চিন্তার বাস্তবায়ন হয়েছে কিনা জানতে সরেজমিন সুত্রে জানা গেছে, কোন লঞ্চেই এ ধরণের সুবিধা নেই। কেউ হয়তো মোবাইল থেকে অনলাইন সুবিধার মাধ্যমে নৌ-বন্দর কতৃপক্ষ বা ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য মাধ্যমে জানালেও মাঝ নদীতে নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে পারা যায় না। অপরদিকে বরিশাল আধুনিক নৌ-বন্দরে ট্রাফিক বিভাগের কর্তাব্যক্তি ও বন্দর কর্মকর্তা একজন হওয়ায় ট্রাফিক কার্যক্রমে পুরোমাত্রায় বাস্তবায়নে ধীর গতি রয়েছে। যে কারনে ঢাকা-বরিশাল নৌ-পথটি এখন ঝুঁকিপুর্ণ হয়ে উঠছে বলে মনে করনে সচেতনমহল।