শেবাচিম হাসপাতালে ব্রাদার কাদের বেপরোয়া

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৪২, জানুয়ারি ৩১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ফের কাদের যুগের ত্রাস শুরু হয়েছে শেবাচিম হাসপাতালে। রোগী ও সহকর্মীরাও ব্রাদার কাদের এর অনাচারের শিকার হলেও নেই কোন প্রতিকার। শাস্তিমূলক বদলি হওয়ার পর ফের শেবাচিম হাসপাতালে এসে পুরানো ত্রাস কায়েম করেছে বিতর্কিত ব্রাদার কাদের। চাকুরী জীবনের দু’যুগেরও বেশি সময় শেবাচিম হাসাপাতালে পার করার কারণে অনিয়ম আর অনাচারের একটি সিন্ডিকেট তৈরী করেছে এই কাদের। অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, রোগী থেকে চিকিৎসার কথা বলে টাকা হাতানো, বরাদ্দ ছাড়াই কোয়াটার দখল ও সরকারি কোয়ার্টারে নারী কেলেংকারি, সহকর্মীদের সাথে অবৈধ প্রভাব বিস্তার, ডিউটি ফাঁকিসহ নানাবিধ অভিযোগ থাকার পরেও ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় শেবাচিম হাসপাতালে কর্মরত রয়েছে ব্রাদার কাদের। গত বছর ডিসেম্বরের ৩০ তারিখ দুর্ঘটনা কবলিত এক রোগীর ব্যান্ডেজ ও সেলাইয়ের কথা বলে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় ব্রাদার কাদের। আর এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে শেবাচিমে। কারণ ভুক্তভোগী রোগী চুন্নুর এক আত্মীয় মন্ত্রণালয়ে কর্মরত থাকার কারণে এ তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এ তদন্তের দ্বায়িত্বে রয়েছেন ডাঃ সৌরভ সুতার। এ ব্যাপার তিনি বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। এ নিয়ে কথা বলা যাবে না। কিন্তু হাসপাতাল জুড়ে জনশ্র“তি রয়েছে কাদেরের কিছুই হবে না, টাকা দিয়ে তদন্ত কমিটি কিনে নেবে। কারণ বিগত দিনগুলোতে এমনটাই হয়েছে। এদিকে একাধিক ব্রাদার ও নার্স বলেন, ওই রোগীর আত্মীয় মন্ত্রণালয়ে চাকুরীর সুবাধে কাদেরের দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত দেওয়া হয়েছে। তা না হলে দুর্নীতির বিষয়টি কখনোই তদন্তে আসতো না। পূর্বের অনেক দুর্নীতির মতো ধামাচাপা পড়ে যেত। তবে এ ব্যাপারে ব্রাদার কাদেরের সোজাসাপটা কথা আমি কিছুই জানি না। অসৎ এ চরিত্রটির এমন সরল উক্তির কারণ কি খুঁজতে গেলে একাধিক সূত্র জানায়, সে এমন চাতুরতা জানে যে, ওর কোন অপরাধ সহসাই স্পষ্ট হয় না। কুটকৌশলে সবকিছু নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ২০১৫ সালে ব্রাদার কাদেরের এহেন অভিযোগের কারণে শেবাচিম হাসাপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডাঃ সিরাজুল ইসলাম তাকে শাস্তিমূলক সন্দ্বীপ বদলি করেন। আর এ ঘটনায় হাসপাতাল জুড়ে ঈদের আনন্দের মতো মিষ্টি বিতরণ করেন বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কিন্তু ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় ফের শেবাচিম হাসপাতালে আসে কাদের। এদিকে অনুসন্ধানসূত্রে আরো জানা গেছে, ব্রাদার কাদের সার্জারি ও অর্থোপেডিক্স ওয়ার্ডে পরিকল্পিতভাবে ডিউটি নেয়, যাতে রোগীদের সাথে ব্যান্ডেজ ও সেলাইসহ ছোট-খাটো ওটি বাণিজ্য করতে পারে। রোগীদের থেকে এরকম চাঁদাবাজি করতেই কখনো হাসাপাতালের বর্হিঃবিভাগ কিংবা চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডে ডিউটি নেয়। আর অধিকাংশ রোগীরাই অসচেতন হওয়ার কারণে সরকারি হাসপাতালে এ রকম মোটা অংকের টাকা দিতে বাধ্য হয়। আবার রোগীদের মাঝে ব্রাদার কাদের ভীতিকর এমন তথ্য ছড়ায় যে, চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডে শুধু ভর্তি হয়েই থাকতে পারবেন বড় ডাক্তারের দেখাতে পারবেন না। আর অপারেশনের সিরিয়াল পেতে অনেক সময় লাগবে। এতে রোগীর অনেক ক্ষতি হবে। তাছাড়া ডাক্তাররা কায়দা করে আপনাকে বাইরের ক্লিনিকে যেতে বাধ্য করবে এবং ওই সব ক্লিনিকে অপারেশন করাবে। এতে আপনার অনেক টাকা খরচ হবে। এর চেয়ে আমি এ কাজটি অল্প টাকায় করে দিবো। বড় বড় ডাক্তারদের সাথে আমার জানা শোনা রয়েছে। আমি তাদের সাথে কথা বলে অপারেশনসহ সকল চিকিৎসা কম খরচে করিয়ে দিব। হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা সর্ম্পকে রোগীদের না জানার কারণে এ ধরণের চটকদারির ফাঁদে পা দিতে বাধ্য হয়। সুচতুর কাদেরের অনাচার এখানেই শেষ নয়। শেবাচিমের জরুরী বিভাগের ভর্তি ইউনিটে ডিউটিরত থাকাকালীন রোগীদের থেকে সরকারি ভর্তি ফি ২৬ টাকার পরিবর্তে সুযোগ বুঝে বেশী টাকা হাতিয়ে নেয়। তাছাড়া ছোট-খাটো কাটাছেড়া সেলাই দিয়ে রোগীদের থেকে হাজার হাজার টাকা পকেটস্থ করার অভিযোগ তো রয়েছেই। যে কারণে অস্বচ্ছল পারিবারিক অবস্থা থেকে উঠে আসলেও এখন বাকেরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে তৈরী করেছে আলিশান বাড়ি এবং পরিবারের একাধিক সদস্য’র নামেও রয়েছে ভূ-সম্পত্তি। রয়েছে শেবাচিমের সামনে একাধিক ডায়গনস্টিক সেন্টারের মালিকানা। পাশাপাশি নগরীর ১১নং ওয়ার্ডেও ক্রয় করা হয়েছে জমি। অথচ একই পদে চাকুরীরত একাধিক ব্রাদার জানান, ভাই বাসা ভাড়া আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে হিমশিম অবস্থার মধ্যে রয়েছি। আর এই কাদের গংরা রোগীর গলা কেটে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। কই তাদের তো কিছুই হচ্ছে না বরং একই জায়গায় যুগের পর যুগ কর্মরত রয়েছে। আর পত্র-পত্রিকায় ওরে নিয়ে লেখালেখি হয় না এমন কোন মাস নেই। এরপরেও কোন শাস্তি হয়নি। বরং স্বরুপেই এখনো বেপরোয়া সে। তার বিতর্কিত কর্মকান্ড এখানেই শেষ নয়, হাসপাতাল থেকে কোয়ার্টারের কোন প্রকার বরাদ্দ না নিয়েই দখলে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু এনিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একই বক্তব্য খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের এমন বক্তব্যে বছর পর বছর পার হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে সূত্রে জানা গেছে। বরং মিডিয়া থেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে কোয়ার্টার বরাদ্দ’র ব্যাপারে একটি চিঠি তুলে ধরে কাদের। অথচ আদৌ যার কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া কোয়ার্টারে রাতে নারীদের নিয়ে অশালীন আড্ডাও তৈরীর একাধিক ঘটনাও রয়েছে বলে সূত্রে জানাগেছে। অপরদিকে ব্রাদার কাদেরের এমন অনাচারের ব্যাপারে ডিরেক্টর জেনারেল নার্সিং এন্ড মিডওয়াফারি অধিদপ্তরের পরিচালক আব্দুল হাই বলেন, আপনারা যদি উপযুক্ত প্রমাণাদিসহ প্রতিবেদন তৈরী করতে পারেন তাহলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গৃহীত হবে। তাছাড়া এখন শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সেক্টরে এতো টাকা দিচ্ছে এরপর মানুষ হাসপাতালে যেয়ে ভোগান্তিতে পরবে এটা মেনে নেয়া যায় না। তিনি আরো বলেন, এই ধরনের চরিত্রগুলো প্রতিটি হাসপাতালে একটি নিজস্ব বলয় তৈরী করে রেখেছে। আর এর অন্যতম কারণ হলো অনেক বছর ধরে একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা।