ভোরে ভয়ংকর বরিশাল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:০০, জানুয়ারি ৩১ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোর ৬টা। ঢাকা থেকে বরিশাল নদীবন্দরে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো এসেছে অনেক আগেই। লঞ্চ থেকে নেমে নগরীর বৈদ্যপাড়ায় ভাড়া বাসার দিকে রওয়ানা হন শিক্ষক মওসুম আরা। সুনসান নীরবতার মধ্যে রিকশায় যাওয়ার পথে ব্রজমোহন কলেজের সামনে প্রফেসর গলির মুখে তার পথরোধ করে কিশোর ও যুবক বয়সি ছয়জন। দেশীয় অস্ত্র ছিল সবার হাতেই। রিকশা চালককে চড়-থাপ্পড় দেওয়ার পর শিক্ষকের গলায় চাকু ধরে স্বর্ণের চেইন ও আংটিসহ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। ফাঁকা সড়কে মুহূর্তের মধ্যেই উধাও হয়ে যায় ওই চক্র। ঘটনাটি ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত একই সড়কে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৩০টি। এ তথ্য জানিয়েছেন ছিনতাইয়ের পয়েন্ট হিসাবে চিহ্নিত এলাকাগুলোর বাসিন্দারা। বেশির ভাগ ঘটনা থানা পর্যন্ত না গড়ানোয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। ঝামেলা এড়াতে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ পর্যন্তও দেয় না। এমনটাই জানিয়েছেন অনেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বরিশাল নগরীর জেলখানার মোড় থেকে নথুল্লাবাদ সড়কটি বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের মাঝে। এ সড়কের মূলত হাতেগোনা কয়েকটি পয়েন্টে ভোরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। আর এ পয়েন্টগুলোর মূল সড়কের সঙ্গেই সংযোগ সড়কও রয়েছে। আর ওইসব সড়ক থেকে ছিনতাই করে পালায় ছিনতাইকারীরা। পয়েন্টগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জেনারেল হাসপাতালের সামনে, রায় রোডের মুখে, ল-কলেজের সামনে, প্যারাডাইস হোটেলের মুখে, গুপ্ত কর্নার, ইসকন-এর সামনে, ব্রজমোহন কলেজ প্রথম ফটক, প্রফেসর গলির মুখ, মধু মিয়ার পুল গলির মুখ ও বৈদ্যপাড়ার মুখে। একটি সড়কের এ পয়েন্টগুলোই বিপজ্জনক এখন। ডিসেম্বর মাসের ২৯ তারিখ নগরীর ব্রজমোহন কলেজের সামনে ছিনতাইয়ের শিকার মাওলানা আব্দুল্লাহ মামুন জানান, নতুনবাজার থেকে সকালে নথুল্লাবাদের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় প্রফেসর গলির মুখে ছিনতাই চক্রের আক্রমণের শিকার হই। তারা আমাকে মারধর তো করেই সঙ্গে আমার কাছে থাকা তিন হাজার টাকা ও হাত ঘড়ি নিয়ে যায়। মামুন বলেন, পরে আরও ছিনতাইয়ের ঘটনা শুনেছি। আমি থানায় কোনো অভিযোগ দেইনি। নতুন করে ঝামেলা বাড়াতে চাইনি। নগরীর অমৃত লাল দে সড়কের বাসিন্দা সোবাহান সিকদার জানান, ছিনতাইকারীরা ভোর বা সকালকে বেছে নেয়-কারণ সময়টাতে বেশ সুনসান নীরবতা থাকে। এ সময়টাতে পুলিশের তৎপরতাও কিন্তু অনেকটা কম থাকে। আর ঠিক এ সময় বেছে নিয়ে অপরাধ সংঘটিত করে ছিনতাইকারীরা। ছিনতাইয়ের শিকার কলেজ ছাত্র আকাশ ইসলাম বলেন, এ সড়কে ছিনতাইকারীদের তৎপরতা নভেম্বরের মাঝামাঝি বেড়েছে। আমি ছয়-সাতটি ঘটনা শুনেছি। এ ছিনতাইকারীদের টার্গেট লঞ্চ বা বাসের যাত্রী। এর সঙ্গে রিকশা বা অটো চালকরাও জড়িত থাকতে পারে। পুলিশ যদি আরও সতর্ক হয় ভোর থেকে সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত তাহলে ছিনতাইকারীরা দমবে এবং হাতেনাতে আটকেরও সুযোগ হবে। ৯ জানুয়ারি রায় রোডের মুখে ছিনতাইয়ের শিকার হন আরেক লঞ্চ যাত্রী শাওন ইসলাম। তিনি জানান, ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সর্বোচ্চ দুই থেকে আড়াই মিনিটের। দা ঠেকিয়ে টাকা আর মোবাইল নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে চম্পট। খুবই প্রফেশনাল এরা। তা না হলে এমনভাবে ছিনতাই করা অসম্ভব। গবেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক আনিসুর রহমান খান স্বপন বলেন, রাতের শেষ ভাগ থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে ছিনতাই ঠেকাতে। জনগণকে নিরাপত্তা দিতে ছিনতাইয়ের পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সেসব জায়গায় প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সময়ে জোরালো নিরাপত্তা দেয়া যেতে পারে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) মোকতার হোসেন বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ কাজ করছে। টহলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের প্রতি একটা বার্তা থাকবে সেটা হচ্ছে এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে যাতে আমাদের সঙ্গে সঙ্গে জানায়। তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব। মানুষ সচেতন হলে এবং তারা যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমাদের কাজ করতে আরও সুবিধা হবে।