দেশের দ্বিতীয় প্রাচীন পৌরসভায় নেই কোন বিনোদন কেন্দ্র

কামরুন নাহার | ০০:৩০, জানুয়ারি ২৭ ২০২০ মিনিট

মো. সোহেল রানা, নলছিটি ॥ ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৬৫ সালে। জানা যায়, ১৮৬৪ সালে ঢাকা পৌরসভা গঠন করার পরের বছর বাংলার কোলকাতা খ্যাত বাণিজ্য বন্দর নলছিটিকে পৌরসভা হিসেবে ষোষণা করা হয়। প্রতিষ্ঠার দিক থেকে এ পৌরসভাটি দেশের অতি প্রাচীন । প্রতিষ্ঠার ১৫৪ বছর অতিবাহিত হলেও নানা সংকটে ভূগছে পৌরবাসী। নাগরিক সুবিধার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত এ আদি পৌরসভার কয়েক হাজার বাসিন্দা। অদ্যাবধি এই পৌরসভাটিতে গড়ে ওঠেনি কোন বিনোদন কেন্দ্র বা পার্ক। নেই কোন আধুনিক হোটেল-রেস্তোরা, কমিউনিটি সেন্টার, দৃষ্টিনন্দন দালান-কোঠা। নলছিটি পৌরসভাকে দেশের বুকে পরিচয় করার মত যেসব স্থাপনা, নিদর্শন ও দর্শনীয় স্থান ছিল তাও আবার সংস্কারের অভাবে জড়ার্জীণ অবস্থায় পড়ে আছে। কিছু কিছু নিদর্শনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। বাকিগুলো অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। ফলে পৌরবাসীর ঘুরে দেখার মত তেমন কোন জায়গা নেই । পিকনিক স্পট তো দূরের কথা নেই কোন নিরিবিলি বসে গাল-গল্প-আড্ডা দেয়ার মত পরিবেশ। যদিও মেয়র দাবি করেছেন ফেরিঘাট সংগলœ এলাকায় একটি পৌরপার্ক স্থাপন করার জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। সরে জমিনে দেখা গেছে, কয়েক বছর আগে উপজেলা পরিষদ চত্বর সংলগ্ন নিবার্হী কর্মকর্তার বাসভবনের সামনে প্রায় ৪ শতাংশ জমির উপর একটি মিনি শিশু পার্ক গড়ে ওঠে। তাও আবার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রতিষ্ঠার কয়েকমাস পর খেলার সরঞ্জামাদিগুলো ভেঙে যায়। পরে বর্তমান উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নিজ উদ্যোগে কোন মতে খেলার সরঞ্জামাদিগুলো সংস্কার করে পুনঃরায় শিশু পার্কটি চালু করা হয়। এখানে একটি দোলনা, ওজন মাপা গেমস রয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা পরিষদের পুকুরটিরও যৌবন হারিয়ে গেছে। এছাড়া পৌরসভার মেয়র বাসস্ট্যান্ড চত্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সম্বলিত বিজয় উল্লাস-৭১ নামে একটি মুর‌্যাল তৈরি করে। এতে পৌর ও উপজেলাবাসীর ছবি তোলার কিছুটা খোরাক জোগায়। বধ্যভূমির নবনির্মিত স্তম্ভ হলেও শহরের এক কর্নারে হওয়ায় তা জনমূখী হিসেবে প্রকাশ পায়নি। আরো দেখা গেছে, ফেরীঘাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানায় একটি দর্শনীয় আলিশান বাড়ী। এটিকে স্থানীয়দের কাছে বাংলো বাড়ি হিসেবে পরিচিত। বাড়িটি স্থানীয় এক ব্যবসায়ী শখের বসে তৈরি করলেও বর্তমানে এটিই একমাত্র বিনোদনের স্থান। সেখানে কিছু ফুলগাছ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বসার জায়গা এবং কয়েকটি হরিণ রয়েছে। যা বিনোদন পিপাসুদের জন্য যথেষ্ট নয়। ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা সরকারি নলছিটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা বলেন, অন্যান্য জেলা- বিভাগ থেকে নলছিটিতে বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজনদের ঘুুুরে দেখানোর মতো কোন জায়গা নেই। কোথাও বসে উন্নত মানের ভালো খাবার-দাবার করারও কোন ব্যবস্থা নেই। নাম মাত্র পৌরসভায় বাস করছি আমরা। নলছিটি নাগরিক ফোরামের আহবায়ক হাসান আলম সুমন বলেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতায় নলছিটিতে গড়ে ওঠেনি কোন বিনোদন কেন্দ্র। ফলে নলছিটির মানুষ ঝালকাঠি, বরিশাল সহ অন্যান্য জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা একদিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি আরেকদিকে নলছিটিবাসীর জন্য লজ্জার ব্যাপার। স্থানীয় সাংস্কৃতিজন তপন কুমার দাস বলেন, নলছিটি পৌরসভা দেশের একটি প্রাচীন পৌরসভা। সে অনুযায়ী এখানে কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। নেই ঘুরে দেখার মত কোন জায়গা আর পরিবেশ। নলছিটির ইতিহাস ঐতিহ্য ফিরে আনতে প্রশাসন ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানায় তিনি। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলে, ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরপুর উপজেলার নাম নলছিটি। সে অনুুযায়ী ইতিহাসের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি। গড়ে ওঠেনি তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র। উপজেলা চত্বরে গড়ে ওঠা মিনি শিশু পার্কটিও ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। জরাজীর্ণ সামগ্রী সংস্কার করে পার্কটিকে ব্যবহার উপযোগী করবেন বলেও জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা। নলছিটি পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ তছলিম উদ্দিন চৌধুরী জানায়, নলছিটি শহরকে বসবাস উপযোগী করার লক্ষে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে নলছিটি পৌরসভার প্রতিষ্ঠার পর কোন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেনি। কিন্তু ইতোমধ্যে শহরের পাশে সুগন্ধা নদীর পাড় ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় ২৬ শতাংশ জমির উপরে একটি পার্ক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে নলছিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। বাজেট অনুযায়ী বরাদ্দ শুরু হবে বলেও জানায় মেয়র।