ব্যাপক অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতায়….. মুখ থুবড়ে পড়েছে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন চালুর প্রকল্প

কামরুন নাহার | ০০:২৫, জানুয়ারি ২৭ ২০২০ মিনিট

মোঃ শাকিল মৃধা ॥ ব্যাপক অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার কারনে মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন চালুর প্রকল্প। ডিউটি ফাঁকি দিতেই বরিশালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বায়োমেট্টিক হাজিরা স্থাপনে গড়িমসি স্কুল কর্তৃপক্ষের। ডিজিটাল হাজিরার এ প্রকল্পটিতে রয়েছে দুর্ণীতিও। গত বছর শুরু হওয়া এ প্রকল্পটির শুরুতে ৪০/৫০ হাজার টাকা স্কুলে দেয়া হয়। কিন্তু নিন্মমানের বায়োমেট্টিক ডিভাইস স্থাপনের কারনে অকেজো হয়ে পড়ায় পুরানো হাজিরা পদ্ধতিই অনুসরণ করছে স্কুলগুলো। শুধু তাই নয়, বায়োমেট্টিক মেশিনের ক্রয় বাবদও স্কুল কর্তৃপক্ষের দুর্ণীতির কারণে প্রকল্পটি থেকে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলায় দু’শ তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দুধাপে ১শ ৯টি স্কুলে স্থাপন করা হয়েছে বায়োমেট্টিক হাজিরা। তবে এরমধ্যে বায়োমেট্টিক হাজিরা নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা দপ্তরে সার্ভার স্টেশন দেয়া হয়নি। যেকারণে বায়োমেট্টিক হাজিরা চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, এরমধ্যে কতিপয় স্কুলের মেশিন অকেজো হয়ে গেছে। কিন্তু বায়েমেট্টিক হাজিরা কার্যক্রম এখনো কেন চালু করা যাচ্ছে না জানতে চাইলে বরিশাল সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, সার্ভার বসানো হলেই বায়োমেট্টিক হাজিরা কার্যক্রম পুরোমাত্রায় জবাবদিহীতায় আনা সম্ভব হবে। কারণ এটি ছাড়া এর কার্যক্রম পুরোমাত্রায় চালু করা সম্ভব নয়। তবে কবে নাগাদ এ সার্ভার স্থাপন করা হবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, এনিয়ে আলোচনা চলছে যেহেতু প্রকল্পটি স্থগিত রয়েছে তাই স্পষ্ট করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। আর সম্প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্কুলগুলোকে নিজ উদ্যোগে বায়োমেট্টিক হাজিরা স্থাপন করার জন্য। কিন্তু অর্থের যোগান কি হবে তাও নির্দেশনা দেয়া হয়নি। যে কারণে স্কুলগুলোও তেমন কিছুই করতে পারছেনা। এদিকে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, স্কুলগুলোতে ডিজিটাল এ হাজিরা পদ্ধতি পুরোপুরি চালু হলে স্কুলের সকল জনবলের ডিউটি ফাঁকি বন্ধ হবে। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্কুলগুলোতে হাজিরা চালু থাকবে। ফিঙ্গার প্রিন্ট স্ক্যানের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রত্যেকের হাজিরা লিপিবন্ধ হয়ে যাবে । যেকারণে স্কুল কর্তৃপক্ষও বায়োমেট্টিক হাজিরা স্থাপনে গড়িমসি করছে। অভিযোগ উঠেছে, নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে নিম্নমানের এ মেশিন কেনার ‘নির্দেশনা’ দেয়া হয়। ‘নির্দেশনা’ পেয়ে যেসব বিদ্যালয় মেশিন কিনেছে, তাদের অধিকাংশই এখন অকেজো হয়ে পড়েছে। প্রতিটি মেশিন কেনা-বাবদ ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকার অবৈধ‘বাণিজ্য’ হয়েছে। অর্থাৎ প্রকল্পটি থেকে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকা। অসাধু এ চক্রের নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের এক উপ-পরিচালকসহ অনেকে রয়েছেন বলে জানা গেছে। অনৈতিক ‘বাণিজ্যের’ বিষয়টি জানাজানি হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আর কোনো ডিজিটাল হাজিরা মেশিন না কিনতে নতুন করে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেকারণে যেসব বিদ্যালয় আগেই কিনেছে, সেখানেও বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন ব্যবহার হচ্ছে না। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের জন্য বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন ক্রয়ের নির্দেশনা দেয় সরকার। সে অনুযায়ী, গত বছরের ২৮ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর থেকে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের (ডিপিইও) চিঠি দেয়া হয়। প্রথম ধাপে গত বছরের ২৬ জুন স্পেসিফিকেশন নির্ধারণ করে সারাদেশে নির্দেশনা পাঠানো হয়। ১৩ অক্টোবর আবারও নতুন করে স্পেসিফিকেশন দেয়া হয়। চিঠিতে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি- ৪) স্লিপ ফান্ড থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বায়োমেট্টিক হাজিরা নিশ্চিত করতে ডিভাইস (ডিজিটাল হাজিরা মেশিন) কিনতে বলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারদর অনুযায়ী স্পেসিফিকেশন অনুসরণ করে কেনার নির্দেশ উপেক্ষা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের একটি অসাধু চক্র অতিরিক্ত দামে ওই মেশিন কিনতে তৎপর হয়। এ চক্রই নিম্নমানের মেশিন কিনতে বাধ্য করে অনেক বিদ্যালয়কে। অধিকাংশ স্কুলে এ মেশিন কিনে দিয়েছে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এটিইও), উপজেলা শিক্ষা অফিসার (টিইও) বা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা (ডিপিইও)। ফলে অনেকে বাধ্য হয়েই দ্বিগুণেরও বেশি দামে ওই মেশিন কিনেছেন। মেশিন কেনা নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠায় পরবর্তীতে গত ২৩ ডিসেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন না কিনতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা জারি হয়। এরপর থেকে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন কেনা বন্ধ রয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে এ মেশিন কেনা হয়েছিল সেগুলোও অকেজো করে রাখা হয়েছে। গত ২৩ ডিসেম্বর এ মেশিন ক্রয় না করতে নির্দেশ দেয়ায় বর্তমানে নতুন করে আর কোন বিদ্যালয়ে কেনা হচ্ছেনা। যেসব বিদ্যালয়ে মেশিন কেনা হয়েছিল সেগুলোও আর ব্যবহার হচ্ছে না।