বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ফুটপাত দখল করে চাঁদা বাণিজ্য
দেশ জনপদ ডেস্ক|০১:৪১, জানুয়ারি ২৭ ২০২১ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর কেডিসি এলাকার রাস্তার দুই-পাশের ফুটপাত দখল করেছে সাবেক কাউন্সিলর জয়নালের ভাই আয়নাল। নগরীর ১০নং ওর্য়াডের কেডিসি ঢোকার পথে সড়কের দু-পাশের ফুটপাত দখল করে ছোট ছোট দোকান বসিয়ে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে আয়নালের বিরুদ্ধে।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যাপক সফলতা দেখালেও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠা ভাসমান স্থাপনার বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযান দেখা যায়নি সিটি কর্পোরেশন থেকে। যে কারণে নগরীর অধিকাংশ রাস্তার ফুটপাতের উপর গড়ে উঠেছে এসকল অবৈধ ভাসমান স্থাপনা। আবার দোকানের বিভিন্ন মালামাল রাখা হয় সড়কের অর্ধেকটা জুড়ে এতে সাধারণ পথচারীদের পথচলতে বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া প্রতিদিনই ওই সড়ক দিয়ে ভারি ভারি ট্রাক ও তেলের লড়ি আসা-যাওয়া করে।
শুধু তাই নয়, সরকারি গুদামে বীজ ও সার সংরক্ষনের জন্য কেডিসি এলাকায় প্রতিনিয়ত আসা-যাওয়া করে বিভিন্ন ধরনের পরিবহন। আর এধরনের ব্যস্ত সড়কের ফুটপাতটি দখল হওয়ার কারণে প্রায় প্রতিদিনই তৈরী হয় নানামুখী জনদুর্ভোগ। ঘটছে ছোট-খাটো একাধিক দুর্ঘটনা।
এ ব্যাপারে ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল্লাহ কবির বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে বিসিসি থেকে মাইকিং করা হয়েছিল কিন্তু এরপর আর কোন পদক্ষেপ দেখিনি। এ ধরনের অবৈধ স্থাপনার ব্যাপারে বিসিসিতে লিখিত কিংবা মৌখিক জানানো হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একাধিকবার জানানো হয়েছে। তাছাড়া একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে অবৈধ দখলদারকে নিষেধ করতে পারি কিন্তু উচ্ছেদ করার ক্ষমতা আমার নেই। এটা বিসিসি’র উচ্ছেদ শাখার দায়িত্ব।
এছাড়া বিসিসি’র সংশ্লিষ্ট সড়ক পরিদর্শককেও জনানো হয়েছে। এরপরেও যদি ফুটপাত দখলমুক্ত না হয় সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’র ব্যাপার, তারা আপনাকে ভলো বলতে পারবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের একক ক্ষমতাধর বিসিসি।
সরেজমিনসূত্রে জানা যায়, কেডিসি ঢোকার শুরুতেই সড়কটির দুপার্শ্বে প্রায় অর্ধশত দোকানঘর রয়েছে প্রায় এক যুগ ধরে। তখন থেকেই ওই দোকানগুলো দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হতো। যা ধারবাহিকভাবে এখনও চলছে। আগে চাঁদার ধার্য্য কম থাকলেও এখন দ্বিগুন হারে প্রত্যেকটি দোকান থেকে প্রতিদিন ১শ’/৩শ’ টাকা আদায় করে আয়নাল গং’রা। আয়নালের ভাই পরপর দু’বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাস্তার দুপাশের ফুটপাত দুটি দখল করে নিয়েছে তারা। এরপর থেকে আর কখনোই দখলমুক্ত করা হয়নি।
ফুটপাতের একাধিক দোকানি নাম অপ্রকাশের শর্তে বলেন, আমরা সারাদিন বেচাকেনা করে দোকান ভাড়া বাবদ দৈনিক আয়নাল ভাইকে টাকা দিয়ে দেই। এর বেশি আমরা কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু তিনি তো ফুটপাত দখল করে এই দোকান তুলেছেন এবং আপনাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসময় দোকানীরা বলেন, ভাই আমাদের তো কিছু করার নেই। দোকান করি পেট চালাই। আর সিটি কর্পোরেশনের স্যারেরা এই দোকানগুলো অনেক আগেই দেখছে, কই কেউ আইয়া তো ভাইঙ্গা দেয় নাই। তাহলে আপনারা কেনো এতো কথা বলেন। যা লেখার লেখেন, আয়নাল ভাইর ক্ষমতাও কম না। কিছুই হবে না। আমরাতো এখানে নতুন দোকান করি না। কিছুইতো হয় নাই।
এ নিয়ে অত্র এলাকার একাধিক জনগন জানায়, কেডিসি বস্তি এলাকায় নগরীর কোন হুকুম তামিল না হলেও আয়নাল গংদের কথাই শেষ কথা। যে কারণে জবরদখল করে ফুটপাতসহ বিভিন্ন জায়গা দখল করে প্রায় এক যুগ ধরে চাঁদা আদায় করছে। এ যেনো চাঁদাবাজির এক রামরাজত্ব।
তবে এমন চাক্ষুস চাঁদাবাজির ব্যাপারে কেডিসি এলাকার সড়ক পরিদর্শক মোঃ সাব্বির বলেন, আমি ১০নং ওয়ার্ডে সদ্য দ্বায়িত্ব পেয়েছি। তাই দোকানগুলো কার মালিকানাধীন বলতে পারবো না। আর আমার কাছে উচ্ছেদের কোন চিঠিও কর্পোরেশন থেকে দেয়া হয়নি। যদি এ সংক্রান্ত কোন চিঠি পাই তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাহলে আপনিতো দেখেছেন ফুটপাত দখল হয়ে আছে তাহলে কি আপনার দপ্তরে প্রতিবেদন দিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।
তবে এ ব্যাপারে একাধিক সূত্রে জানায়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভালই জানে কিন্তু মাসতুতো ভাই সম্পর্কে নিরব ভূমিকা পালন করছে। কারণ দখলের বিষয়টি সরল চোখেই দৃশ্যমান।
এদিকে এ ব্যাপারে বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চলছে। আর বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আরআই’র সাথে যোগাযোগ করে যথাযথ বিভাগে জানানো হবে এবং অবশ্যই পরবর্তী ব্যবস্থা গৃহীত হবে।