নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ পুরোমাত্রায় অবৈধভাবে ব্যস্ত মহাসড়কের ফুটপাতে স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন দিয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। যদিও এর আগে সিটি কর্পোরেশন থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ওই জায়গার সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এবার সেই ফুটপাতেই স্থাপনা নির্মাণের জন্য নকশা অনুমোদন দেয়া হয়েছে নাছির নামে এক প্রবাসীকে। এর আগে ওই একই ব্যক্তিকে মহাসড়কের ফুটপাত হিসেবে ব্যবহ্নত ওই জমিটুকু লিজ দিয়েছে বরিশাল জেলা পরিষদ।
সূত্রে জানা গেছে, ‘নগরীর পূর্ব বগুড়া রোডের আনোয়ার মঞ্জিলের বাসিন্দা মৃত আব্দুস ছাত্তার মিয়ার ছেলে সুইডেন প্রবাসী নাসির আহম্মেদকে গত বছর ২৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পরিষদ থেকে ২২ নং ওয়ার্ডের নবগ্রাম রোডের খান বাড়ির প্রধান রাস্তা সংলগ্ন ৫৬০ বর্গফুট (১.২৯ শতাংশ) জমি লীজ দেয়া হয়। কিন্তু উক্ত লীজকৃত জায়গাটি বিসিসি’র প্রধান সড়কের ফুটপাত দখল করে রয়েছে। সেক্ষেত্রে বিসিসি’র নির্মাণ বিধান অনুযায়ী সড়কের প্রয়োজনে ফুটপাতের জায়গা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হলেও জনস্বার্থে ফুটপাত হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তাছাড়া বিগত দুই যুগ ধরে স্থানীয়দের চলাচলের জন্য লীজকৃত ওই জায়গা ফুটপাত হিসেবে উন্মুক্ত রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করেই জেলা পরিষদ ও সিটি কর্পোরেশন’র এমন সিদ্ধান্তে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮ মোতাবেক জমির পরিমাণ যদি ১৩৪ বর্গ মি. বা ইহার নিচে অর্থাৎ ৩.৩০ শতাংশ বা ইহার নিচে হয় তাহলে জমির সম্মুখে ১.৫০ মিটার (প্রায় ৫ ফুট), পশ্চাতে ১.০০ মিটার (৩.২৮ ফুট) এবং প্রতি পাশে ০.৮০ মিটার (২.৬ ফুট) করে দূরত্ব রেখে জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। তাছাড়া জমির পাশে যদি প্রধান সড়ক হয় সেক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের ক্ষেত্রে জমির সম্মুখে সংলগ্ন রাস্তায় ফুটপাথ বর্তমান না থাকিলে কর্তৃপক্ষ আদেশ করিলে আবেদনকারীকে উহা তৈরী ও রক্ষণাবেক্ষণ করিতে হইবে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় প্রণালী এবং পরিমাপ প্রদান করবে। অথচ উক্ত নকশা অনুমোদনে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। এ যেনো চাক্ষুস দু’নম্বরির জলজ্যান্ত প্রমাণ।
এ ব্যাপারে বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন বলেন, ফুটপাতের উপর স্থাপনা নির্মাণ অনুমোদনের কোন সুযোগই নেই। বিসিসি’র নির্মাণ আইনানুযায়ী স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ফুটপাতের জায়গা রেখে স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু আপনাদের কর্পোরেশন কিভাবে এ ধরনের অবৈধ অনুমোদন দিয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, হয়তো কোন ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে এ ধরনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে বিসিসি’র নকশা অনুমোদন বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী হৈমন্তি শুকলা বলেন, আমরা জেলা পরিষদের অনাপত্তির ভিত্তিতেই কমিটির মাধ্যমে নকশা অনুমোদন দিয়েছি। বিসিসি’র আইনানুযায়ী প্রধান সড়কের পাশে ফুটপাতের জায়গা যদি কোন ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের হয় তাহলে তো অবমুক্ত করা হয়। কারন সড়কের শর্তাবলী স্থিতিশীল রাখার জন্য এবং জনগনের চলাচলের কোন বিঘ্নিত না হয়। তাহলে বিসিসি’র নির্মাণ ও সড়ক আইন অমান্য করে কিভাবে ফুটপাতে স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, স্থানীয় ওর্য়াডের রোড ইনসপেক্টরের সরেজমিন প্রতিবেদন এবং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যদি বিসিসি উদ্যোগ নেয় ফুটপাত অবমুক্ত করা হবে তাহলে ফুটপাতে বিসিসি’র অনুমোদিত নকশায় তৈরী স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে কমিটির মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে পুনুরায় জানান।
তবে এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পরিষদ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মানিকহার গত দু-সপ্তাহ আগে জানিয়েছিলেন, যদি শর্ত ভঙ্গ করে লীজ দেয়া হয় তাহলে খতিয়ে দেখে সত্যতা পেলে লীজ বাতিল হতে পারে। তবে এখনো মেলেনি তার কথার সত্যতা। তাই পুনরায় উল্লেখিত বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মানিকহার বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তাহলে তদন্তাধীন বিষয়ে বিসিসিকে কিভাবে আপনারা অনাপত্তি (NOC) পত্র দিয়েছেন নকশা অনুমোদনের জন্য। এমন প্রশ্নে ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বরিশাল জেলা পরিষদ’র ৫৬০ বর্গফুটের লীজকৃত ওই জায়গাটির অধিকাংশই প্রধান সড়কের ফুটপাতের মধ্যে রয়েছে, যা খোলা চোখেই দৃশ্যমান। এতে কোন প্রকার কাগজ-পত্র ঘাটাঘাটির প্রয়োজন হয়না। বিসিসি কিভাবে ফুটপাতে স্থাপনা নির্মাণের নকশা অনুমোদন দিলো এমন প্রশ্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ নিয়ে জনশ্র“তিও রয়েছে যে, তাহলে কি ম্যানেজ প্রক্রিয়া বিসিসিতে শুরু হয়ে গেছে।