নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর ১৪টি পয়েন্ট থেকে বিট দিয়ে চলছে টোকেন বিহিন অবৈধ অটোরিক্সা। যা নিয়ন্ত্রণ করছে শ্রমিক নেতা নামধারী ১৫ জন ব্যক্তি। তবে নগরীর বেশ কিছু পয়েন্টে নামমাত্র অভিযান করেছে ট্রাফিক পুলিশ। এর মধ্যে ১০টি পয়েন্টে তেমন কোন অভিযান হয়নি। জানাগেছে, ২ হাজার ৬১০টি অটোরিক্সার লাইসেন্স (টোকেন) দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। কিন্তু বর্তমানে অটোরিক্সার সংখ্যা ৭ হাজারের বেশি বলে দাবি করেছে ট্রাফিক বিভাগ।
তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, মাসের শুরুতে স্থান ভেদে টোকেন বাবদ ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা করে আদায় করছেন শ্রমিক নামধারী নেতারা। অটোরিক্সা মালিক ও শ্রমিকরা জানিয়েছেন, নগরীর বেলতলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চঘাট রুটে অন্তত ১০০ অবৈধ অটোরিক্সা চলছে। যা নিয়ন্ত্রণ করছে পলাশপুরের লাবলু। সিএনবি ১নং পোল থেকে ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৪০টির অটোরিক্সা থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার টাকা করে প্রায় ৪০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় ২৩নং ওয়ার্ডের সভাপতি দাবীদার সোহেল বিশ্বাস। জিয়া সড়ক নথুল্লাবাদ পোল থেকে লোহার পোল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই স্থান থেকে প্রতি মাসে ৩২ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় কথিত শ্রমিক লীগ নেতা কবির। হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা থেকে টিয়াখালী পর্যন্ত ৭০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১২শ’ টাকা করে প্রায় ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় শ্রমিক লীগ নেতা দাবীদার রয়েল ওরফে টাক রয়েল ও আফজাল মজুমদার। শায়েস্তাবাদ থেকে তালতলী পর্যন্ত প্রায় ৪৫টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই লাইন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় শহিদুল ইসলাম। ধান গবেষণা রোড থেকে খেয়াঘাট পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ি থেকে ২৪নং ওয়ার্ডে আ’লীগের এক নেতা ১২শ’ টাকা করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায়। কাশিপুর বাজার থেকে বারৈজ্যার হাট-রায়াপুর পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা থেকে প্রতি মাসে ১২শ’ টাকা করে প্রায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় বাজার কমিটির সভাপতি কবির, মুন্না ও রিপন ওরফে অটো রিপন।
মড়কখোলার পোল থেকে লাকুটিয়া সড়কে প্রায় ১৪০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতিমাসে ১৫শ’ টাকা করে প্রায় ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় স্থানীয় যুবলীগ দাবীদার তারেক, মোখলেছুর রহমান ও শাহজাহান সহ সহযোগীরা। কালিজিরা বাজার থেকে ২৫টি অটোরিক্সা থেকে ১২শ’ টাকা করে প্রায় ২৭ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় সুমন সিকদার নামে এক ব্যক্তি। রুপাতলী থেকে প্রায় ২৭টি অটোরিক্সা থেকে জামাল গাজী ও লেদু সিকদার প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা চাঁদা উঠায়। দপদপিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে থেকে দিনারের পোল ও চৌমাথা পর্যন্ত ৬৫টি অটোরিক্সা থেকে প্রতি মাসে শ্রমিকলীগ নেতা পরিমল দাসের নামে প্রায় প্রতি মাসে ৭৫ হাজার টাকা চাঁদা নেয় কথিত আ’লীগ নেতা নেতা মঈদুল মুন্সি ও শংকর। সোনামিয়ার পোল থেকে প্রায় ৪০টি অটোরিক্সা থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৪৫হাজার টাকা চাঁদা উঠায় হাবুল ওরফে অটো হাবুল। সাগরদী বাজার থেকে কারিকর বিড়ি ব্রাঞ্চ হয়ে টিয়াখালী পুল পর্যন্ত প্রায় ৩০টি অটোরিক্সা চলাচল করে। এই লাইন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা উঠায় সুমন ওরফে অটো সুমন। একাধীক অটোচালকরা জানান, প্রতি মাসে প্রতিটি লাইনে টাকা দিয়ে অটো চালাতে হয়। টাকা দিলে অটো চলে, না দিলে তাদের নির্যাতন ও মারধরের শিকার হতে হয়। সূত্র জানায়, নগরীতে ধানগবেষনা থেকে সাবেক খেয়াঘাট, সাগরদী বাজার থেকে কারিকর বিড়ি ব্রাঞ্চ হয়ে টিয়াখালী পুল পর্যন্ত, বাস টার্মিনালে ট্রাফিক বক্স সংলগ্ন গোল চত্ত্বর থেকে সাবেক দপদপিয়া ফেরীঘাট, রূপাতলীর একই স্থান হতে কালিজিরা বাজার পর্যন্ত, দপদপিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর সামনে থেকে দিনারের পোল ও চৌমাথা, কাশিপুর বাজার থেকে বারৈজ্যার হাট-রায়াপুর, মড়কখোলার পোল থেকে লাকুটিয়া, সায়েস্তাবাদ থেকে তালতলী, হাতেমআলী কলেজ চৌমাথা থেকে টিয়াখালী, জিয়া সড়ক নথুল্লাবাদ পোল থেকে লোহার পোল, বেলতলা খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ, সিএনবি ১নং পোল থেকে ঠাকুর বাড়ি পর্যন্ত
এসব পযেন্ট থেকে প্রায় ৮শ অবৈধ অটোরিক্স থেকে চাঁদাবাজি করছেন এসব কথিত শ্রমিক নেতারা। কয়েকজন শ্রমিক নেতা নাম প্রকাশে না করার শর্তে বলেন, যারা রুট নিয়ন্ত্রণ করছেন তারাই মাসের শুরুতে বিশেষ বিট দিয়ে ট্রাফিক বিভাগ ও সাংবাদিকদের নামে মাসোহারা আদায় করছে। তবে এ টাকা শেষ পর্যন্ত ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছায় কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত নন শ্রমিকরা। এদিকে আরো অভিযোগে জানাযায়, শুধু বিট না অবৈধ টোকেন বানিজ্যের থেকেও ২ হাজার করে টাকা চাঁদা উঠায় কাউনিয়ার মিজান ওরফে টোকেন মিজানের একটি চক্র। অপরদিকে অটো শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান বলেন, ৪টি লাইন তাদের। ৪টি লাইনে ট্রাফিক বিভাগের অভিযান হলেও মড়কখোলার পোল, কাশিপুর, সিএন্ডবি ১নং পোল, বিশ্ববিদ্যালয় রোড, জিয়া সড়ক, নথুল্লাবাদ, বাঁশের হাটখোলা, সাগরদি বাজার, ধান গবেষণা রোডে কোন অভিযান হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গত বছরে অটোরিক্সা মালিক সমিতির নাম ভাঙিয়ে একই ভাবে বিট বানিজ্য করছিলেন সংগঠনটির সভাপতি নিজাম উদ্দিন নিজাম ও সাধারণ সম্পাদক মোর্শেদ আলম। পরে তাদেরকে ধরে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছিলেন বর্তমান মেয়র। এর ফলে কিছুদিন বিট বাণিজ্য বন্ধ ছিলো। পরবর্তী সময়ে নিজাম ও মোর্শেদদের মত করেই পুনরায় বিট বাণিজ্য শুরু করে একটি মহল। ২৪নং ওয়ার্ড এর আ’লীগের নেতা বলেন, আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি কোন টাকা উঠাই না। গরিব মানুষ বলে ফি করে দিছি লাইন। তবে চাঁদা উঠানোর বিষয় স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয় রোডের শংকর, সোনামিয়ার পোলের হাবুল ও সাগরদি রোডের সুমন। তাদের দাবি পুলিশ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের দপ্তরে ম্যানেজ করেই বিট চালাতে হয়। এ বিষয় অটো চালকদের দাবি ট্রাফিক বিভাগ বাকি ১০টি লাইনে অভিযান চালালে বাকি চাঁদাবাজদের থেকে মুক্তি পেতাম।