নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে করোনা সংক্রমনের প্রভাব কিছুটা কমতে শুরু করলেও কোচিং ব্যবসায়ীদের লোভে হুমকির মুখে রয়েছে শতশত শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে ও শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয় চিন্তা করে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও নগরীতে পুরোদমে চলছে কোচিং বানিজ্য। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বরিশাল নগরীর কোচিং মালিকরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কোচিং বাণিজ্য। চলতি বছরের গত ১৪ জানুয়ারি শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইনে একটি সভায় জানানো হয় ফেব্র“য়ারি থেকে খুলে দেয়া হবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমন খবরে নগরীর সব কোচিং সেন্টারগুলো ইতিমধ্যে খুলে দিয়েছে। তবে কয়েকটি কোচিং সেন্টার দুই-তিন মাস আগে থেকেই নিয়মিত তাদের পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এরমধ্যে নগরীর বগুড়া রোডে তৃপ্তি ও প্রাইমেট কোচিং সেন্টারে সরজমিনে দেখা গেছে, নেই কোন সামাজিক দুরত্ব। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে তাদের পাঠদান কার্যক্রম। প্রত্যেক বেঞ্চেই গাদাগাদি করে চার-পাঁচজন বসিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে ওই দুই কোচিং সেন্টারের শত-শত শিক্ষার্থী করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত শনিবার ১৬ জানুয়ারি দুপুরে প্রাইমেট কোচিং সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর শিক্ষার্থীর ভিড়। যারা ক্লাস করার জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকেরই মুখে মাস্ক নেই। পরে কোচিং সেন্টারের উপরের তলায় উঠে দেখা যায় প্রায় তিন চারটি কক্ষে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করছেন কয়েকজন শিক্ষক। এদের কারো মুখেই মাস্ক দেখা মেলেনি। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে অনেকটা ঘাবড়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তাদের। এ সময় কথা হয় এক শিক্ষকের সাথে মাস্ক না থাকার কারন জানতে চাইলে বলেন, ভাই অনেকক্ষন যাবত ক্লাস নেওয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তাই একটু খুলে রেখেছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে বলেন, এতোদিন বন্ধের পর খুলেছি তাই একটু চাপ বেশি। স্কুল বন্ধ তাই পড়াশোনা চালু রাখতে কোচিংয়ের দিকে শিক্ষার্থীরা ঝুকে পড়েছে। যাতে স্কুল বন্ধকালীন সময় বাচ্চারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জনসমাগম এড়াতে যেখানে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখানে সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং সেন্টার খোলা রাখার বিষয়ে কোচিং সেন্টারের পরিচালক মেহেদি হাসান ইমন বলেন, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা বজায় রেখে ও তাদের শিক্ষার কথা ভেবে শেষ ক্লাস নিচ্ছি। তবে জানা গেছে, প্রাইমেট কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে এর আগেও সরকারের নির্দেশনা অমান্য করার অভিযোগ রয়েছে। অপরদিকে তৃপ্তি কোচিং সেন্টারেও দেখা গেছে একই চিত্র। কোচিং সেন্টারের বাইরে ও ভিতরে অসংখ্য শিক্ষার্থীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। বাইরের শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে পরবর্তী ব্যাচে পড়ানোর জন্য, আর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি ব্যাচের শিক্ষার্থী। প্রতিদিনই প্রায় তিনশ শিক্ষার্থীর ক্লাস নেওয়া হয়। যেখানে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরিভাবে উপেক্ষিত। এব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ক্লারা তৃপ্তি বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধে খুলেছি। কিন্তু হঠাৎ করে এতো শিক্ষার্থীর চাপ হবে বুঝতে পারেনি। তবে চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাযথভাবে ক্লাস নেওয়ার। ক্লাস নেওয়ার কিংবা কোচিং খোলার অনুমতি কি আপনার আছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, কি করব শিক্ষার্থীদের কথা ভেবেই খুলেছি। তাহলে সরকার শিক্ষার্থীদের কোন কথা চিন্তা করেনা, আপনারা কোচিং ব্যবসায়ীরাই কেবল শিক্ষার্থীদের কথা ভাবেন এমন প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারেনি। বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, কোচিং সেন্টার খোলা রেখে ক্লাস চালানোর বিষয়টি তিনি অবগত নন। তিনি জানান, নিষেধ অমান্য করে এমনটি কেউ করে থাকলে সেটি বেআইনি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।