ফের বিতর্কে জড়ালেন এসআই রিয়াজ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ০১:০৫, জানুয়ারি ১৯ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ফের বির্তক দেখা দিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশে। অতি সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মহিউদ্দিনের নির্যাতনে বরিশাল আদালতের এক শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যুর অভিযোগ নিয়ে মামলাসহ নানান প্রশ্ন দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি করে। কিন্তু সে বির্তক কাটতে না কাটতেই ফের বির্তক তৈরী হয়েছে স্কুল শিক্ষিকার জমি দখলকে কেন্দ্র করে। সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এসআই রিয়াজ উদ্দিন নামের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ব্যাপটিস্ট মিশন রোডের এক স্কুলশিক্ষিকার ভবন পুলিশী প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক দখল রাখার অভিযোগ উঠেছে। এবং গত ৭/৮ মাস ধরে ভাড়া পরিশোধ করা তো দূরের কথা, বাসার মালিক স্কুল শিক্ষিকা মমতাজ বেগম নামের ষাটোর্ধ্ব নারীকে বাড়ি ছাড়া করার পায়তারায় লিপ্ত হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনৈতিকভাবে প্রভাব বিস্তারসহ অভিযোগের ফিরিস্তি তুলে ধরে বিষয়টির প্রতিকার এবং সুবিচার চেয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করেন ওই স্কুলশিক্ষিকা। এসআই রিয়াজের এই দখল প্রক্রিয়া দীর্ঘদিনের হলেও বিষয়টি এতদিন আলোচনায় আসেনি বা বাসা মালিক আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খোলেননি। সর্বশেষ পুলিশ কর্মকর্তার সেচ্ছাচারিতায় ওষ্ঠাগত হয়ে স্কুল শিক্ষিকা গতকাল পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায় এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে অভিযোগের কপি মিডিয়াপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তুমুল সমালোচনার সৃষ্টি করে। গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা মহিউদ্দিনের হাতে শিক্ষানবিশ আইনজীবীর মৃত্যুর অভিযোগের মাঝে নতুন করে কোতয়ালি পুলিশের এসআইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করা নিয়ে পুলিশের শীর্ষমহলে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে, অনেকে রীতিমত বিব্রতও। অভিযোগে নারী উল্লেখ করেন, পুলিশ কর্মকর্তা রিয়াজ বছর দুয়েক পূর্বে তার সাথে ৮ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে বাসায় ওঠেন। এক বছরের অধিক সময়ে যথারীতি ভাড়া পরিশোধ করলেও গত ৭/৮ মাস পূর্বে তিনি তা বন্ধ করে দেন এবং পরবর্তীতে ভাড়া চাইতে গেলে বলতে শুরু করেন বিদেশে থাকা আপনার মেয়ে মনজিলা সুলতানা দেওয়ানের দেবর আবুল কালাম আজাদের সাথে ভাড়ার ব্যাপারে কথা হয়েছে। এরপরে আর ভাড়া পরিশোধ করেনি এবং অপর ভাড়াটিয়াদের ভাড়া পরিশোধ করতে নিরুৎসাহিত করে। এর প্রতিবাদ করায় পুলিশ কর্মকর্তা নারীকে ভয়ভীতি দেখানোসহ কখনও কখনও বাসাটি তার বলে বিভিন্নজনের কাছে পরিচয় দেওয়া শুরু করে। এমনকি ভবনের এক ভাড়াটিয়া সুমনা বড়ালের কাছ থেকে ৩ মাসের ১৬ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নিজেই আত্মসাৎ করেন। স্কুলশিক্ষিকার ভাষায়, তার মেয়ের দেবরের সাথে একত্রিত হয়ে ভাড়া আত্মসাৎ শেষে তাকে ভবন থেকে নামাতে পুলিশ কর্মকর্তা নতুন নতুন ছক আটেন এবং তাকে হুমকি-ধামকি প্রদান করে। এতে ভীতিগ্রস্ত নারী বাধ্য হয়ে কোতয়ালি পুলিশে সাধারণ ডায়েরি করাসহ পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ তুলে ধরলেও সেই দফা তেমন কোনো সুফল পাননি। বলা চলে ক্ষমতাধর এসআই রিয়াজের প্রভাবের কারণে বিষয়টি আর বেশিদুর আগায়নি। নারীর অভিযোগ, বিতর্কিত এসআই রিয়াজের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে তাকে বাড়ি ছাড়তে বলা হলেও তিনি জোরপূর্বক দখলে রাখাসহ হয়রানি করতে থাকেন। এমনকি সে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় তার সংযোগ ওজোপাডিকো বিচ্ছিন্ন করে দিলে পার্শ্ববর্তী একটি মিটার থেকে জোরপূর্বক সংযোগ নেয়। এই বিষয়টির প্রতিবাদ করায় সে সময়ও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। সর্বশেষ প্রভাব খাটিয়ে নতুন একটি মিটার লাগিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। এতে সহযোগিতা দেয় মেয়ের অপর দেবর আবুল কালাম আজাদ। অভিযোগে জানা যায়, ভাড়ি ভাড়া প্রদান না করায় এসআই রিয়াজ উদ্দিনকে ২০২০ সালের ২২ অক্টোবর একটি আইনি নোটিশও পাঠিয়েছিলেন স্কুলশিক্ষিকা। কিন্তু তাতে কর্ণপাত না করে উপরন্ত পুলিশ কর্মকর্তা নারীকে চাপের মুখে ফেলে দেয়। বাসা মালিক মমতাজ বেগম অভিযোগ করেন, একদিকে বাসা দখলে রেখে, অন্যদিকে তার বিদেশে থাকা মেয়ে জামাইকে নানান নেতিবাচক খবর পৌঁছে দিয়ে পরিবারে ভাঙন ধরিয়েছে। এখন তার মেয়ের সাথে স্বামীর সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন। এছাড়া নানানভাবে হয়রানি করছে। অভিযোগে এমন ফিরিস্তি তুলে ধরে স্কুলশিক্ষিকা বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ শাহাবুদ্দিন খানের কাছে সুবিচার চেয়েছেন। তবে এব্যপারে বিএমপি পুলিশ কমিশনার দেশ জনপদকে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে সেক্ষেত্রে কে পুলিশ সদস্য তা দেখা হবেনা। এদিকে, এসআই রিয়াজ উদ্দিনের মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই স্কুলশিক্ষিকা প্রকৃত বাড়ির মালিক নয়। তাই কেন আমি তাকে ভাড়ার টাকা দিব? গত দুই বছর যাবত কাকে ভাড়ার টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অকপটে স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ ওই স্কুল শিক্ষিকাকে দিয়েছি। তবে যখন জেনেছি তিনি বাড়ির মালিক নয়, তখন থেকে বন্ধ করে দিয়েছি। ওই স্কুলশিক্ষিকা যে বাড়ির মালিক নয় এ ব্যাপারে কেউ কি আপনাকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জানতে চাইলে বলেন, না। তবে তার এক আত্মীয় যিনি বাড়ির মালিক দাবী করেন, তিনি আমাকে ভাড়া দিতে নিষেধ করেছেন। বাসা ভাড়া নেওয়ার সময় ওই স্কুলশিক্ষিকার আত্মীয়র সাথে কথা বলে ভাড়া নিয়েছিলেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মাঠ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগের মধ্যে আরেক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানোর খবর নেহাত অস্বস্তিদায়ক বলে মন্তব্য পাওয়া গেছে। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা এই অভিযোগসমূহ অস্বীকার করলেও উর্ধ্বতন কর্তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।