ভোলার আলতু বাহিনীর তান্ডবে নিঃস্ব অসংখ্য পরিবার

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:১৭, জানুয়ারি ১৭ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ভোলার কুখ্যাত দস্যু আলতু বাহিনী ও লক্ষীপুরের হারিস শাহজালাল বাহিনীর সম্মিলিত সন্ত্রাসী হামলায় ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব ভোলার চরের অসংখ্য পরিবার। সন্ত্রাসীদের এমন নারকীয় তান্ডব লীলা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। কোটি টাকার অধিক মূল্যের গবাদিপশু লুটপাটের পর আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রটি শতশত একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়ে ক্ষান্ত হয়নি বরং অসংখ্য নীরিহ পরিবারকে উৎখাত করার চূড়ান্ত নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে। তারই ফলশ্র“তিতে চরবাসীর শেষ আশ্রয়স্থল মাথা গোঁজার ঠাঁই বসতবাড়ি ভেঙ্গে চুরে লুটে নিয়ে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করেছে। তবে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মোঃ এনায়েত হোসেনের রহস্যময় ভূমিকার কারণে আলতু বাহিনীর নারকীয় তান্ডবের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। তাদের অভিযোগ আলতু বাহিনীর প্রধান আলতু ডাকাতের সাথে ওসি মোঃ এনায়েত হোসেনের সখ্যতা রয়েছে। এমনকি মামলার প্রধান আসামী থাকার পরও আলতু ও তার বাহিনীর একাধিক সদস্যদের রয়েছে থানায় অবাধ বিচরণ। তাদের গ্রেফতার না করার ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ ফরিদ জানান, তারা আগাম জামিনে আছেন। কিন্তু জামিনের স্বপক্ষে কোনো প্রকার তথ্য দিতে পারেনি। এদিকে আন্তঃজেলা সন্ত্রাসী চক্রের সম্মিলিত নৃশংস হামলার শিকার হয়ে নিগৃহীত ভোলার চরের অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে খোঁজ নিয়ে জানাযায়, আলতু বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ বেড়ী বাঁধের উপরে টং-ঘর পেতে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নিজস্ব টর্চার সেলে অসংখ্য নিরীহ জেলে ও সাধারণ কৃষকদেরকে আটক করে নির্যাতনের পর মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। আর ওই জনপদে কেউ আলতু বাহিনীর বিরুদ্ধে গেলেই তার উপর নেমে আসে হামলা-মামলাসহ নানান নির্যাতন। কে এই আলতু? এক সময়ে নৌকার মাঝি হিসেবেই বেশ পরিচিতি থাকলেও মেঘনা নদীতে মাছ আরোহণকারী জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিতেন। পরে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও লুটপাটই যেন তার পেশা হয়ে উঠে। মেঘনার নিরীহ জেলেদের নিকট এখন এক আতংকিত নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে আলতু বাহিনী। জবর-দখল করে নিয়েছে ভোলার চরের অসংখ্য নীরিহ পরিবারের শতশত একর জমি। বসতবাড়ি লুটপাট করে বিরাণ ভূমিতে পরিণত করেছে। বনে গেছেন কোটি টাকার মালিক। তার নিকট থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণকারী শহরের কর্তাবাবুরা কেউ কেউ তাকে মাদবর সাহেব বলেও ডাকেন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে অসংখ্য জেলে ও চরবাসী মিলিত হয়ে আলতু ডাকাতকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ভোলা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। নেয়া হয়নি কোন প্রকার কার্যকরী ব্যবস্থা। আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে নিজের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে মেঘনার বুকে ভাসমান এসব চরাঞ্চলগুলোকে। আর তার এই সন্ত্রাসীর পালে হাওয়া দেন রাজাপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ওহাব আলী চৌকিদার। তারই পুত্র সাদ্দাম সাম্প্রতিক আলতু বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেছে। এদিকে ভোলার চরাঞ্চলের এক ভুক্তভোগী খান এগ্রো ফার্ম লিমিটেডের স্বত্ত্বাধিকারী মাহমুদুল হক রাসেল খান বলেন, গত বছর ১৭ই জুলাই ভোলার আলতু বাহিনী এবং লক্ষীপুরের হারিস ও শাহজালাল বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আমাদের গরুর খামার, মাছের আড়ৎ ও মুদি দোকানে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করে। সে সময় আমার ভাই শাহিন খান, মিন্টু খান ও আমাদের কর্মচারী করিমকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে নগদ টাকা মালামাল ও ১৫টি গরু লুঠ করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় মামলা করতে গেলে ওসি মোঃ এনায়েত হোসেন রহস্যময় কারণে মামলা রুজু না করায় বাধ্য হয়ে আমার ভাই শাহিন খান বাদী হয়ে ভোলার বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওসি ভোলাকে এফ আই আর গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। যাহার নং জি আর ৪৬৩/২০। একই সাথে এমন লোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় মামলা রুজু না করায় ওসি ভোলাকে সতর্ক করেন। এরপরেও থানা পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উল্টো আলতু বাহিনীর এক সদস্য আলতু ফরাজীর দায়ের করা মিথ্যা ডাকতি মামলায় পুলিশ আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে। যাহার নং জিআর ৪৫০/২০। আলতু ফরাজীর দায়ের করা মিথ্যা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মিন্টু খানকে। অথচ মামলায় দেখানো ঘটনার তারিখ ২১ জুলাই ২০২০, মিন্টু খান বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। সর্বশেষ গত বছর ২৩ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা পুনরায় পরিকল্পিতভাবে চরে বসবাসকারী অসংখ্য পরিবারের উপরে হিংস্র হায়েনার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। নৃশংস হামলা চালিয়ে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ একাধিক ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। গবাদি পশু ও মালামাল লুটপাট করে। এমন আলোচিত ঘটনায়ও পুলিশ ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে কোন মামলা নেয়নি। ভুক্তভোগী রাসেল খান ২৩ নভেম্বর আলতু বাহিনীর সন্ত্রাসী হামলার বর্ণনা দিয়ে আরো বলেন, ওই দিন আমি ঢাকাতে ছিলাম। ঢাকা থেকে ওসি ও এসপি স্যারদের সাথে একাধিকবার কথা বলে সাহায্য চেয়েছি। বলেছি। কিন্তু কোন সাহায্য পাইনি। সন্ত্রাসীরা আমার মা, ভাই মিন্টু খান, বোন এবং আমাদের খামারের তত্ত্বাবধায়ক আঃ কাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে অচেতন অবস্থায় ভোলা সদর হাসপাতাল ভর্তি করান। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের অবস্থার অবনতি হলে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে সন্ত্রাসী আলতু বাহিনীর বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে গেলে ওসি মামলা নেয়নি বরং সন্ত্রাসীদের সাথে যোগসাজোশ করে আমাকে প্রধান আসামি করে আমাদের চার ভাইয়ের নামে মিথ্যা অপহরণ মামলা রুজু করে। আমি যে ঘটনার দিন ভোলার চরে ছিলাম না, তা স্থানীয় সিসি টিভির ফুটেজ আমার কাছে রয়েছে। পরবর্তীতে যাবতীয় প্রমাণাদিসহ আদালতে পেশ করব। সর্বশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীরা চরবাসীদের মাথা গোঁজার ঠাঁই বসত ঘরগুলো লুটপাটের পরে ভেঙে চুরমার করে দিয়ে উচ্ছেদ করে দিয়েছে। যেখানে মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল অথচ এর সবকিছু আজ বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এমন অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিরাপদে নিশ্চিন্তে বসবাস করার নিশ্চয়তা চেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।