সিনিয়র ছাত্রদের হাতে নির্যাতনের শিকার জুনিয়র ছাত্র
কামরুন নাহার|০০:৩১, জানুয়ারি ২৫ ২০২০ মিনিট
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ছাত্রী র্যাগিংয়ের ঘটনার রেশ না কাটতেই বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ্ টেকনোলজীতে (আইএইচটি) এবার হলের সিট দখল নিতে সিনিয়র ছাত্রদের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে এক জুনিয়র ছাত্র। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসে ডেন্টাল বিভাগের ওল্ড ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র সালাউদ্দিনকে নির্যাতনের পরে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে রুমের মধ্যে আটকে রাখে সাতজন সিনিয়র ছাত্র। নির্যাতনকারী সকলেই ছাত্রলীগের অনুসারী বলে জানাগেছে। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন সহযোগিতা চাইলে থানা পুলিশ এসে শিক্ষার্থীকে উদ্ধারের পর চিকিৎসার জন্য শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। তাছাড়া এ ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে সিনিয়র শিক্ষক হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে অধ্যক্ষ বরাবর রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আহত সালাউদ্দিন বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ৮ টার দিকে দ্বিতীয় বর্ষের দুই বড় ভাই দেবজিৎ ও ইমন আমার ৪১৩ নম্বর রুমে প্রবেশ করে। আমি তার কিছুক্ষন আগে রক্ত দান করে এসে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। যে কারনে সালাম দিতে পারিনি। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়। সালাউদ্দিন বলেন, ‘দুই বড় ভাই আমাকে আমার হোস্টেলের সিট ছেড়ে দিতে বলে। আমার সিটে অন্য এক ছাত্রকে ওঠাবে বলে জানায়। এতে রাজি না হলে তারা আমাকে লাঠি দিয়ে এলোপাথারি পোটানো শুরু করে। সালাউদ্দিন বলেন, ‘তারা দু’জন চলে গেলে আমি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে ট্রিপল নাইন (৯৯৯) নম্বরে কল করে পুলিশের সহযোগিতা চাই। ঠিক সেই মুহুর্তে ইমন ও দেবজিৎ আরও ৫/৭ জন সিনিয়র নিয়ে এসে আমাকে দরজা খুলতে বলে। এক পর্যায় তারা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আমার ওপর অমানসিক নির্যাতন করে। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন জুনিয়র শিক্ষার্থী সালাউদ্দিন। পরে রাত ১১টার দিকে কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। সালাউদ্দিনের অভিযোগ, ‘ঘটনার সময় নিচ তলায় একজন সহকারী হোস্টেল সুপার ছিলেন। তিনি মারধরের সময় বা তার পরবর্তী দুই ঘন্টায়ও আমার খোঁজ নিতে আসেননি। তবে পুলিশ যখন আমাকে উদ্ধার করে তখন তাদের সঙ্গে সহকারী সুপারকে দেখা যায়। এদিকে সমস্যা আচ করতে পেরে রাতেই মারধরকারীরা গিয়ে সালাউদ্দিনকে হাসপাতাল থেকে হোস্টেলে নিয়ে আসে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সালাউদ্দিন বলেন আমাকে তারা জোর করে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমার চিকিৎসারও কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। জানতে চাইলে সহকারী হোস্টেল সুপার ডাঃ মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার সময় আমি হোস্টেলের বাইরে ছিলাম। রাত ১০ টার দিকে হোস্টেলে ফিরি। তখন আমাকে কোন পক্ষই কিছু জানায়নি। ওইদিন রাত ১১ টার দিকে পুলিশ আসলে আমি ঘটনাটি জানতে পারি। এক প্রশ্নের জবাবে সহকারী হোস্টেল সুপার বলেন, ‘যে সব ছেলেরা রাজনীতির সাথে জড়িত তাদের সাথে সিনিয়র শিক্ষকরা লিয়াজু করে চলে। তাই অনেক অন্যায় কর্মকান্ড হলেও তার কোনটিরই বিচার হয় না। তাই এসব ঘটনা কখনো বন্ধও হচ্ছে না। অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, ধারনা করছি ডাইনিং এর আধিপত্য ধরে রাখার জন্য সিনিয়র ছাত্ররা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে অণ্য কিছুও হতে পারে। ঘটনা যাই হোক সিনিয়র ছাত্ররা অপরাধ করেছে। ইতিপূর্বে র্যাগিংয়ের ঘটনায় ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে অধ্যক্ষ বলেন, ‘ তখন বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে উভয় পক্ষকে ছাড় দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এবার বিন্দু মাত্র ছাড় নয়। কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে একটি উদাহরন সৃষ্টি করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। উল্লেখ্য গত বছরের শেষের দিকে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী হোস্টেলে সিনিয়র ছাত্রীদের র্যাগিংয়ের শিকার হয় অপর এক ছাত্রী। এজন্য সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনাটি বেশ আলোচনার সৃষ্টি করে। বিষয়টি নিয়ে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করে। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও ওই ঘটনার কোন বিচার হয়নি। বরং উভয় পক্ষকে ডেকে ঘটনা মিমাংশা করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমন পূর্বের ঘটনার বিচার হয়নি বলেই আইএইচটিতে পুনরায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। আর এর দায় দায়িত্ব ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে বলেন তারা।