নগরীর হালিমা খাতুন স্কুলে ভর্তি ফি নৈরাজ্য

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২৩:৫৫, জানুয়ারি ১৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাউশির নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভর্তি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন নগরীর হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। বছরের শুরুতেই স্কুলটিতে ভর্তি, টিউশন ফি, সেশন ফি, বেতন ও এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এ নিয়ে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না প্রতিষ্ঠানটি। নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করছে। শুধু অভিভাবকদের প্রতিবাদই নয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়ার পরও নিয়েছে বাড়তি ফি। সূত্রমতে, বরিশাল ঐতিহ্যবাহী হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চলতি বছরের শিক্ষাবর্ষে ৩ জানুয়ারি থেকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা হয়। এতে প্রতি জন শিক্ষার্থীর ৩য় শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির ক্ষেত্রে ৩ হাজার ১শ’ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল ১৩ জানুয়ারি সকালে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান হঠাৎ করে নতুনভাবে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নোটিশ জারি করেন। নোটিশে জানানো হয়, প্রতি শিক্ষার্থী’র ভর্তিতে ২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং পূর্বের নির্ধারিত ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ হাজার টাকাতেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এমন সিদ্ধান্তের খবর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ জানায়। এবং বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ব্যাপারে একাধিক সূত্র জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটির দোহাই দিয়ে নিজের ইচ্ছেমতো ফি আদায়, সেশন চার্জসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিশৃঙ্খলা করে চলছে। এতোদিন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নানান অজুহাতে ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়েছে এখন অভিভাবকদের চাপে কমালোও তা শেষ পর্যন্ত নিজের পকেটস্থ করার পাঁয়তারা করছে। তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আলতাফ হোসেন বলেন, আমার মেয়েকে এই স্কুলে ৩১শ’ টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়েছি। এখন স্কুল কর্তৃপক্ষ নতুন আইন জারি করে ২ হাজার টাকায় ভর্তি করাচ্ছে। এতে আমাদের প্রতি মারাত্মক অন্যায় করা হচ্ছে। এভাবে অধিকাংশ অভিভাবকরাই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ভর্তি করার ব্যাপারে মাউশি’র ডিও মোঃ আনোয়ার হোসেন জানান, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা দেয়া আছে। বর্তমানে করোনাকালীন সময় কোন ক্লাশ হয়নি তাই ভর্তির ক্ষেত্রে শুধু মাত্র সেশন চার্জ নিতে হবে। কোন প্রকার অতিরিক্ত টাকা নেয়া চলবে না। কিন্তু হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যে প্রথমে ৩ হাজার পরে ২ হাজার টাকা নিচ্ছে সে ব্যাপারেও ডিও আরো বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তৃতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা কোন আদেশ বলে নেয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, ৩ জানুয়ারি থেকে ৩ হাজার টাকায় ভর্তি করা শুরু করেছি। গতকাল সকাল থেকে ২ হাজার টাকা করে ভর্তি করাই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যেকোন বিভাগীয় শহরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নিতে পারবে সেই আইনও রয়েছে। কিন্তু করোনায় অভিভাবকদের অনুরোধে এক হাজার টাকা কমিয়ে মাত্র ২ হাজার টাকায় এখন ভর্তি করানো হচ্ছে। তাহলে ৩ জানুয়ারি থেকে ৩ হাজার টাকা ভর্তিতে নিয়েছেন কেন? এর উত্তরে তিনি বলেন, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে নেওয়া হয়েছিল। তবে অভিভাবকদের অনুরোধে এখন ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। এখন এই সিদ্ধান্তই বলবৎ থাকবে। বর্তমান শিক্ষাবর্ষে বাড়তি টাকা আদায় করে ভর্তি করার ব্যাপারে মাউশির পরিচালক মোঃ আব্বাস হোসেন বলেন, হালিমা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে এ অভিযোগ আমার কাছে একাধিকবার এসেছে। বিষয় খতিয়ে দেখে অচিরেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে হালিমা খাতুন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ আলমগীর খান আলো’র মোবাইলে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নগরীর অপর একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো ফি আদায়ের সুযোগ পেয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেপরোয়া হচ্ছে। এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিয়ে বিশৃঙ্খলার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ অতিরিক্ত ফি শিক্ষার্থী বা তাদের অভিভাবকদের ফেরত দিতেও স্কুলগুলোকে বাধ্য করার দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।