নগরীতে কমিটির মাধ্যমে করোনার টিকাদান কার্যক্রম শুরু

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৪৫, জানুয়ারি ১৩ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জাতীয়ভাবে টিকাদানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক মানুষদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকাদের অগ্রাধিকার দিয়ে ভ্যাকসিন বন্টন করা হবে। সেই লক্ষ্যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠনের মাধ্যমে করোনা টিকা বাস্তবায়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু করা হয়েছে। এগারো সদস্যর এই কমিটিতে সভাপতি থাকবেন ওয়ার্ডগুলোর স্ব-স্ব কাউন্সিলর। একই সাথে বিসিসির মূল কমিটিতে সভাপতি থাকবেন বসিসি মেয়র এবং অন্যান্য সদস্য থাকবেন বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য পরিচালক, পুলিশ কমিশনার, সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসক। কিভাবে করোনা ভ্যাকসিন নাগরিকদেরকে মধ্যে প্রদান করা হবে জানতে চাইলে বিসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, টিকাদানের ক্ষেত্রে দুই জন টিকাদানকর্মী ও চার জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে মোট ছয় জন করে একেকটি দল তৈরি করা হবে যারা এই টিকাদান কর্মসূচী মাঠ পর্যায়ে পরিচালনা করবেন। প্রতিটি দল প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনকে টিকা দিতে পারবে বলে ধরা হয়েছে। ছয় জনের দলগুলোতে এক জন নারী ও একজন পুরুষ টিকাদান কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে কমপক্ষে এক জন নারী থাকবেন। আর টিকাদানের প্রথমেই থাকবে কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় সরাসরি নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী, সম্মুখ সারিতে থাকা কর্মী এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল যেসব রোগী তারা। দ্বিতীয় ধাপে থাকবে বয়স্ক, স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন বয়স্ক মানুষ, শিক্ষাকর্মী, গণপরিবহনের কর্মীরা। এছাড়াও অসুস্থ্য কিংবা যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদেরও তালিকা করা হবে ভ্যাকসিনের জন্য। ইতিমধ্যে এই মর্মে ওয়ার্ডগুলোতে তালিকা তৈরীর জন্য কাজ শুরু হয়েছে এবং পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তা প্রেরণ করা হবে। কিন্তু কি পরিমাণ ভ্যাকসিন দেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে এবং উক্ত চিঠিতে বলা হয়নি যে কি পরিমাণ ভ্যাকসিন দেয়া হবে শুধুমাত্র তালিকা এবং অবকাঠামোসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ভ্যাকসিন প্রদাণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার জন্য। এদিকে করোনার ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের ব্যাপারে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ বাসুদেব বলেন, আমাদেরকে এখনো কোন রুপরেখা দেয়া হয়নি কারণ আমরা বরাবরই ভ্যাকসিন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করি। এছাড়া ভ্যাকসিন প্রদাণের জন্য আমাদের জনবলদেরকে প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো চিঠি আসেনি তবে ২/১ দিনের মধ্যে নির্দেশনা এসে যাবে। তবে বরিশাল বিভাগে ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৪ জনকে টিকা দেয়া হবে। কিন্তু ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য কি যথেষ্ট অবকাঠামো রয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, আমাদের জেলা ও বিভাগীয় সদরে বিশেষ স্টোরেজ রয়েছে ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য এবং এই স্টোরে প্রয়োজন অনুযায়ী ভ্যাকসিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এসময় তিনি আরো বলেন, জেলায় জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং সংক্রমণের হার বিবেচনায় কোন কোন জেলায় কত সংখ্যক ভ্যাকসিন যাবে তাও নির্দিষ্ট করে দেয়া হবে। অপরদিকে সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসের ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যেই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন আমদানি করা হবে প্রথম ধাপে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা আসবে। প্রথম ধাপেই প্রতিটি জেলাতেই ভ্যাকসিন প্রদাণ কার্যক্রম শুরু করা হবে এবং প্রথম ডোজ দেয়া হবে ৫০ লাখ নাগরিককে। উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ইউনিয়ন পরিষদ, সদর হাসপাতাল, সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, পুলিশ-বিজিবি হাসপাতাল ও সিএমএইচ, বক্ষব্যাধি হাসপাতালে টিকা দেওয়া হবে। এদিকে বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতালের বাইরে কোন টিকা প্রদান করা হবে না। আর টিকা দেয়ার পর ৩০ মিনিট হাসপাতালে অপেক্ষমান থাকতে হবে এবং টিকা গ্রহণকারীর টিকা নেয়ার পর কোন প্রকার সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের একটি মেডিকেল টিম সার্বক্ষনিক প্রস্তুত থাকবে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা প্রদানের জন্য। কিন্তু ভ্যাকসিন প্রয়োগবিধির জন্য কি প্রয়োজনীয় জনবল প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, গতকাল আন্তজার্তিক স্বাস্থ্য সংস্থার জনবলদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে এখন আমাদের কাছে হয়তো আগামীকালই চিঠি এসে যাবে প্রশিক্ষণের ব্যাপারে। আর ভ্যাকসিন প্রাপ্তি কিভাবে ঘটবে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন বলেন, অনলাইনে তালিকাভুক্তিকরণের মাধ্যমে ভ্যাকসিন দেয়া হবে এবং যেদিন যেই হাসপাতালে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। তার আগের দিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং করা হবে। তালিকার বাইরের সরাসরি এসে কেউ ভ্যাকসিন নিতে পারবেনা এবং হাসপাতালে ও নির্দিষ্ট জনবল ছাড়াও কেউ ভ্যাকসিন দিতেও পারবেনা। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া বাকি দিনগুলোতে সকাল ৯টা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত টিকাদান কর্মসূচী চলবে। সরকারি ছুটির দিনে বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় নির্ধারিত কিছু টিকাদান কেন্দ্রে সন্ধ্যায় টিকা দেয়া হবে। উল্লেখ্য, ভ্যাকসিনগুলোকে জাতীয় পর্যায় থেকে জেলা পর্যায় এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রেফ্রিজারেটর ট্রাকে করে পরিবহন করবে ইপিআই। সারা দেশে তিনটি পর্যায়ে মোট ৫ ধাপে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজারের বেশি মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। এবং প্রায় ৮০ শতাংশ জনগনকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে ১৯২ দিন সময় লাগবে বলে পরিকল্পনায় বলা হয়েছে।