বরিশালে বরাদ্দ ছাড়াই সরকারি কোয়ার্টার দখল

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:৫৬, জানুয়ারি ১২ ২০২১ মিনিট

এ এইচ মাহমুদ ॥  বরিশাল গণপূর্ত’র অধীনে সরকারি কোয়ার্টাগুলোতে বরাদ্দ ছাড়াই বসবাস করছে বিভিন্ন দপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর সরকারী কর্মচারীরা। বসবাসের অযোগ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকি দেখিয়ে বরাদ্দ না দিলেও সরোজমিনে দেখা গেছে কোয়ার্টাগুলোর প্রত্যেকটিতে বসবাস করছে বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মচারীরা। আর এই সুযোগে ভাড়া বাণিজ্য করছে গণপূর্ত অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা। আবাসিক ভবনগুলো দেখভাল ও বরাদ্দ গণপূর্ত’র প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে হয়ে থাকে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলার জন্য বাসা বরাদ্দে অনিয়মের ঘটনা ঘটছে। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বরিশাল নগরীতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি সরকারি কোয়ার্টার। সূত্র মতে, নগরীর আমতলী পানির ট্যাংকি এলাকা সংলগ্ন আলেকান্দায় রয়েছে প্রায় আটটি (০৮) ভবন। এর মধ্যে (০৬) ছয়টি তিন তলা ও দুইটি (০২) দুই তলা ভবন। আলেকান্দা এলাকার নূরিয়া স্কুল সংলগ্ন রয়েছে দুইটি সরকারি আবাসন (কোয়ার্টার) ভবন। এছাড়াও বরিশালের গণপূর্ত অধিদপ্তর সংলগ্ন ভাটার খাল এলাকায় রয়েছে আঠারো (১৮) টি একতলা টিনসেড ভবন। যার মধ্যে সাতটি (০৭) টি গণপূর্ত বিভাগের আওতাধীন ও এগারোটি (১১) টি রোডস্ এন্ড হাইওয়ে দপ্তরের আওতাধীন। বিধি মোতাবেক এসব ভবনে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীদের নিজ নিজ পরিবার নিয়ে বসবাস করার কথা থাকলেও বরাদ্দকৃত ভবনে নিজেরা না থেকে অন্যদের বসবাসের সুযোগ করে দিয়ে ভাড়া বাণিজ্য করছেন। বরিশাল গণপূর্ত অফিসের প্রধান সহকারী বাদল মিয়া ওরফে বড় মিয়া গণপূর্ত অফিস সংলগ্ন ভাটার খাল এলাকার টিনসেড বিল্ডিং-এ নিজে বসবাস না করে ভাড়া দিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কোয়াটার মাস্টার জনাব মাসুম রেজার কাছে। অথচ অফিসিয়াল কাগজপত্রে বরাদ্দের কোন কথা উল্লেখ না করে খালি দেখানো হয়েছে। সরজমিনে তথ্য সংগ্রহে গেলে ভাড়াটিয়া মাসুম রেজার স্ত্রী জানায়, মাসিক সাত হাজার টাকা ভাড়ার বিনিময়ে ওই ঘরে তারা অনেকদিন যাবত বসবাস করে আসছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত অফিসের প্রধান সহকারী বাদল মিয়া ওরফে বড় মিয়া অকপটে বলেন, এসব বিল্ডিং এ বসবাসরত প্রায় প্রত্যকেই একরুম দুই রুম করে ভাড়া দিয়ে কিছু বাড়তি আয় করছেন। তাহলে সরকারি বিধি মোতাবেক আপনার নামে কোন বরাদ্দ নাই কেন? এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর না দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, পরিত্যাক্ত থাকায় কর্মকর্তাদের অনুমতি সাপেক্ষে খুবই কম টাকায় ভাড়া দিয়েছি। টিনসেড বিল্ডিং এর আরেক ঘরে থাকেন গণপূর্ত বিভাগের মেডিক্যাল কোয়ার্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত স্টেজিং হার্ট জনাব আবুল কালাম আজাদ। আবুল কালাম আজাদের নামে সরকারি বরাদ্দকৃত ঘরে মাসিক তিন হাজার টাকায় এক রুমে স্ত্রী সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকেন মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মোঃ ইমরান হোসেন নামে জনৈক এক ব্যক্তি। অথচ অফিসিয়াল কাগজপত্রে তার নামেও নেই কোন বরাদ্দ। এ বিষয়ে জনাব আবুল কালাম আজাদের মুঠোফোনে জানতে চাইলে, তার সঙ্গে প্রতিবেদককে দেখা করতে বলেন। অপরদিকে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন নগরীর আলেকান্দা এলাকায় স্বাধীনতা পরবর্তীকালে নির্মিত আটটি সরকারি আবাসন ভবনের প্রায় ছয়টি ভবনের প্রায় প্রত্যক ইউনিটে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সপরিবারে বসবাস করতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ড্রাইভার মিজানুর রহমান ও রাসেল মিয়া, একই দপ্তরের কম্পিউটার অপারেটর রকিবুল হাসান, জেলা পুলিশ জনাব নজরুল ইসলাম, বিভাগীয় জজ আদালতের এমএলএসএস মনিরুজ্জামান, গণপূর্ত'র পাম্প চালক মেহেদী হাসান ও ইলেকট্রিশিয়ান কুতুবউদ্দিন হাওলাদার, জোন কর্মকর্তার পি এ সাইফুল ইসলাম, পাম্প অপারেটর ইসমাঈল হোসেন, পিওন সবুজ ও হাসান হাওলাদার সহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মচারীগণ বসবাস করছেন। অথচ উল্লেখিত কারো নামেই সরকারিভাবে কোন ভবনের কোন ইউনিট বা রুম বরাদ্দ হয়নি। এমনকি গণপূর্ত অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগের দাপ্তরিক নথিভুক্ত তালিকায় তাদের নাম নেই। এ বিষয়ে পাম্প অপারেটর ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা আমাদের স্যারদের (নিজ অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ) জানিয়েই এখানে বসবাস করছি। এদিকে সি এন্ড বি রোড সংলগ্ন আমতলা পানির ট্যাংকির পার্শ্বে অবস্থিত সরকারি কোয়ার্টারে অবস্থানরত কর্মচারীদের বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বরিশাল বিভাগের সাব ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, দপ্তরে তিনি নতুন যোগদান করেছেন তাই উল্লেখিত বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে সেখানে কারো নামে বরাদ্দ রয়েছে কিনা তা পরে জানানো যাবে। এদিকে গণপূর্ত বিভাগ বরিশালের প্রধান সহকারী বাদল মিয়া ওরফে বড় মিয়া বলেন, কোয়ার্টারের গেইট, দরজা, জানালাসহ লোহার তৈরি বিভিন্ন ঘরোয়া সামগ্রী চোরের হাত থেকে রক্ষার্থে ও মাদকসেবীদের আড্ডা এড়াতে গণপূর্ত দপ্তরের কয়েকজন কর্মচারিদের কোয়ার্টারে থাকার মৌখিক অনুমতি দেওয়া হয়। উল্লেখ্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে বরাদ্দকৃত বাসায় তাদের বসবাস নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি বাসা বরাদ্দ নেয়ার পরও যারা সেখানে বসবাস না করে অন্যত্র বাসা ভাড়া করে থাকেন তাদের বাড়ি ভাড়া বাবদ প্রদত্ত টাকা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ডিসেম্বর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।