অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারে পড়াশোনায় অমনোযোগী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা

কামরুন নাহার | ০০:২৩, জানুয়ারি ২৪ ২০২০ মিনিট

রিপোর্ট দেশ জনপদ ॥ ডিজিটাল টেকনোলজির মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শিক্ষার্থীদের পড়ার ইচ্ছা কমিয়ে দিচ্ছে। ইন্টারনেট আসক্তি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার বিষয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলছে। শুধু তা-ই নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিঃসঙ্গতা-একাকিত্বের অনুভূতিও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড লার্নিং জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ফিল রিড বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের অতিরিক্ত নেশা আছে, তারা পড়াশোনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলার তীব্র ঝুঁকিতে রয়েছেন। ইন্টারনেট আসক্ত শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পারফরম্যান্সও খুবই দুর্বল। একাডেমিক ফলাফল বিবেচনায় দেখা যায়, ইন্টারনেট আসক্তরা শিক্ষাগত যোগ্যতার মানে পিছিয়ে থাকছেন। গবেষণায় ২৮৫ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কোর্সের শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন। গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে তাদের ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, অধ্যয়নের দক্ষতা, পড়াশোনার আগ্রহ, উদ্বেগ ও একাকিত্বসহ আরো কিছু বিষয় মূল্যায়ন করা হয়েছিল। পরিশেষে দেখা যায়, অতিরিক্ত ইন্টারনেটের আসক্তি পড়ুয়াদের পড়াশোনাবিমুখ করে তুলছে। পড়াশোনার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও দক্ষতা দুটোই কমিয়ে দিচ্ছে। গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, ইন্টারনেট আসক্তরা তাদের পড়াশোনার কাজ গুছিয়ে করে উঠতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাভীতি কাজ করার কথা না থাকলেও ইন্টারনেট আসক্তির কারণে অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষাকে বেশ ভয় পাচ্ছেন এবং বিষয়টি নিয়ে তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন থাকছেন। যে কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাকিত্ব বাড়ছে, যা পড়াশোনাকে আরো কঠিন করে তুলছে। গবেষণাটিতে অংশ নেওয়া ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ৪ ঘণ্টার বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন। বাকিরা ১ থেকে ৩ ঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন। জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ জানায়, তারা বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া সাইট ব্যবহার করতেন। এছাড়া ৩০ শতাংশ জানায়, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানতে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছেন। বিশ্বব্যাপী শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট আসক্তিকে দায়ী করেছেন গবেষকরা। তাদের দাবি, ইন্টারনেট আসক্তি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনীহার প্রধান কারণ। এর ফলে বাড়ছে একাকিত্ব, যা হতাশাগ্রস্ত করছে শিক্ষার্থীদের। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক শিক্ষার ওপর। গবেষকরা বলছেন, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু ইন্টারনেট আসক্তির কারণে সামাজিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে উঠছে শিক্ষার্থীরা। উচ্চশিক্ষার জন্য পড়াশোনার প্রতি ভালোবাসা, ইতিবাচক চিন্তাভাবনা তৈরি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ গুণাবলি না থাকা খুব একটা ভালো ফল বয়ে আনবে না। সম্প্রতি কানাডার ম্যাকমাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দিনে যারা অতিরিক্ত সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তাদের মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে। গবেষকরা কলেজ শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে মানসিক সমস্যার সম্পর্ক বুঝতে দুটো স্কেল ব্যবহার করেন। প্রথমটি ইন্টারনেট অ্যাডিকশন টেস্ট (আইএটি)। ১৯৯৮ সাল থেকে এ স্কেলের ব্যবহার চলে আসছে। দ্বিতীয়টি নতুন স্কেল, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন বুঝতে তৈরি করা হয়েছিল। ঐ গবেষণার প্রধান গবেষক মাইকেল ভ্যান আমেরিনজেন বলেন, গত দুই দশকে ইন্টারনেটে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ অনলাইনে কাজ করছেন, মিডিয়া স্ট্রিমিং করছেন এবং সোস্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছেন। তবে ইন্টারনেটের নেতিবাচক দিকগুলো নিয়ে এখনই সচেতন হতে হবে।