সড়ক ও ফুটপাত লীজ দিয়েছে বরিশাল জেলা পরিষদ

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২১:৪৯, জানুয়ারি ০৭ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীর জিয়া সড়ক সংলগ্ন নবগ্রাম রোডের পিয়ন বাড়ী এলাকায় নিয়ম ভঙ্গ করে প্রধান সড়কসহ ফুটপাত লীজ দিয়েছে জেলা পরিষদ। যার নামে ওই ফুটপাতের জমি লীজ দেয়া হয়েছে তার কোন মালিকানা জমি নেই ওই লীজকৃত জমির চারপাশে। অথচ লীজকৃত জমির পিছনেই রয়েছে ভুক্তভোগী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের পৈত্রিক জমি। এ নিয়ে অত্র এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর তুলকালাম কান্ড তৈরী হওয়ায় তোপের মুখে পিছু হটেছে জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের পৈত্রিক জমির সামনে নবগ্রাম রোডের প্রধান সড়কের পাশেই প্রায় সোয়া ১ শতাংশ (দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট ও প্রস্থ ১৪ ফুট) জমির মালিক জেলা পরিষদ। বিগত দুই যুগ ধরে জেলা পরিষদের ওই সোয়া ১ শতাংশ জমি স্থানীয়দের চলাচল ও ফুটপাতের জন্য ব্যবহার হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করেই জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ নাছির নামে এক প্রবাসীর কাছে ওই ফুটপাতের জমি লিজ দেয়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ে এলাকাবাসীসহ ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের পরিবারের লোকজন। কারণ যুগযুগ ধরে ফুটপাতের ওই জায়গা এলাকাবাসী এবং আমিনুল ইসলামের পরিবারের লোকজনের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত ছিল। তাছাড়া জেলা পরিষদের লীজকৃত ওই জমির পিছনেই ভুক্তভোগী ইঞ্জিনিয়ার আমিনুল ইসলামের পৈত্রিক জমি হওয়ায় তাদের চলাচলের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এভাবে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা তৈরী করে অপর এক ব্যক্তিকে কিভাবে জেলা পরিষদ জমি লীজ দেয় এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সূত্রে জানা যায়, জেলা পরিষদ থেকে লীজ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান সড়কের পর নূন্যতম ১৮ ফুট জায়গা থাকতে হবে এবং তা কোনভাবেই ফুটপাত কিংবা সড়কের জায়গা দখল করে নয়। তবে এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মানিকহার বলেন, যদি শর্ত ভঙ্গ করে লীজ দেয়া হয় তাহলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কি ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে লীজ বাতিল হতে পারে। এদিকে সরেজমিনসূত্রে দেখা গেছে, বিসিসির আইন ভঙ্গ করে প্রধান সড়কের সাথেই লীজকৃত জমির পিলার স্থাপন করা হয়েছে। বিসিসির আইনানুযায়ী প্রধান সড়ক থেকে কমপক্ষে ৭/৮ফুট জায়গা বাদ দিয়ে স্থাপনা করতে হবে। এক্ষেত্রে কোন জায়গা না ছেড়েই ফুটপাত দখল করেই সীমানা পিলার বসানো হয়েছে। এছাড়াও জায়গাটির উত্তর পার্শ্ব দিয়ে আরো একটি সংযোগ সড়ক গিয়েছে। তাহলে দু’পাশ থেকে উক্ত জায়গা কমে গিয়ে যে অবস্থান তৈরী হয় তাতে লীজ দেয়ার উপযোগী থাকে না। সূত্রে আরো জানা গেছে, লীজ দেয়ার শর্তানুসারে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে কোন প্রকার লীজ দেয়া যাবে না। এছাড়াও যদি কোন বসতির সামনে সরকারি জায়গা থাকে তাহলে চলাচলের জন্য ঐ বসতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। অথচ জেলা পরিষদের অবৈধ এ লীজ প্রক্রিয়ার কারণে আমিনুল ইসলামসহ এলাকাবাসীর চলাচল ব্যহত হচ্ছে বিষয়টি জেনেও কেনো লীজ দেয়া হলো বিষয়টি অনুসন্ধানসূত্রে জানা গেছে, নিয়ম ভঙ্গ করে লীজ হাতানো গ্রহীতা প্রবাসী নাসিরের বোন জামাই ডা: রবের বাসায় ভাড়া থাকেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আর সেই সুবাধেই নিয়ম ও প্রথা এড়িয়ে লীজ দেয়া হয়েছে। আর এতে উভয় পরিবারের মধ্যে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। এ নিয়ে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিসিসি থেকেও এর আগেও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে ঐ জায়গার স্থাপনা ভেঙে দেয়া হয়েছে। এরপরও জেলা পরিষদ কিভাবে লীজ বহাল রাখে জানি না। শুধু তাই নয়, একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ রেখে অন্যকে লীজ দেয়াও লীজ প্রথার ব্যতয়। অপরদিকে এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক মোঃ জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, কোনভাবেই সড়ক কিংবা ফুটপাত লীজ দেয়া যায় না কারণ জনস্বার্থ বিঘিœত হয় এমন জায়গা লীজ দেয়া যায় না। এদিকে ভুক্তভোগী আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বসত বাড়ির সামনের জায়গা লীজ পাওয়ার অগ্রাধিকার আমার। কারণ লিজের ওই জায়গাটুকু না পেলে আমার জমি থেকে বের হবার কোন জায়গা থাকে না। সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদ কিভাবে নাছিরকে লীজ দিলো আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এমনকি জেলা পরিষদে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুরাহা পাইনি এবং এহেন কর্মকান্ডের ব্যাপারে কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছি। এদিকে পারিবারিক সূত্রমতে, জমির মালিক ইঞ্জিনিয়ার কে. এম. আমিনুল ইসলামের চাচাতো বোন সুরাইয়া আক্তার জোসনাকে বিয়ে করেন সুইডেন প্রবাসী নাসির আহমদে। তার চাচা সেকেন্দার আলী নিজ কন্যা প্রবাসী নাসির আহমদে’র স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার জোসনার নামে ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ জমির দলিল দেন। তবে দলিলে জমির যে দাগ উল্লেখ করে ভোগদখলের কথা বলা হয়েছে, তা আগেই সেকেন্দারের অন্য ওয়ারিশদের মধ্যে হেবা ঘোষণাপত্র (নিজস্ব আত্মীয়দের মধ্যে) দলিল দেয়া হয়েছে। আর তারা প্রত্যেকেই দলিল মোতাবেক ভোগদখলে আছেন। ফলে অতিরিক্ত জমির যে দলিল তার কন্যা প্রবাসী নাসিরের স্ত্রী জোসনাকে দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্য জমি থেকে কোন জমি নেই তাদের। তবে তা মানতে নারাজ প্রবাসী নাসির। সম্প্রতি নাসির সুইডেন থেকে এসে ওই জমি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের অবৈধ পন্থা অবলম্বন করছে নাসির। জমি না থাকা সত্ত্বেও মেয়ের জামাই নাসিরকে জমির দলিল দিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে আতংকের মধ্যে রেখেছেন তার চাচা। এখন নাছির তার স্ত্রীকে দেয়া ওই জমি (নাসিরের শ্বশুর কর্তৃক প্রদেয় জমি) দখল করার পায়তারা করছে। যে কারণে নাসির জেলা পরিষদের লীজকৃত উক্ত জমির পিছনে নিজের স্ত্রী’র মালিকানা জমির দাবি করে জেলা পরিষদকে বুঝিয়েছে যে, উক্ত জমির লীজ পাওয়ার অগ্রাধিকার তার রয়েছে। কিন্তু আদৌ তা সঠিক নয় বলে সূত্রে জানা গেছে।