নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীতে প্রায় ২০ লাখ টাকার সরকারি গাছ পানির দরে বিক্রি করে দিয়েছে বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কর্র্তপক্ষ। প্রায় দুই যুগেরও আগে রোপণ করা ওই গাছগুলো মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। মাসতুতো ভাই সম্পর্কে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে ওই ইনস্টিটিউটের একুশে ছাত্রাবাসের গাছগুলো। তবে পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষের দাবী, যথাযথ নিয়ম মেনেই টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছেই বিক্রি করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পরশ সাগর মাঠ সংলগ্ন একুশে ছাত্রাবাসের পুরাতন ভবন ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য গাছ বিক্রির দরপত্র দিয়েছিল পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে ওই ছাত্রাবাসের জায়গায় বিভিন্ন জাতের প্রায় ৬৮টি গাছের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে মেহেগিনি, রেইনট্রি, কড়াই ও চাম্বলসহ অধিকাংশ গাছই বিশাল আকৃতির। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফায়দা ভাগাভাগির সুবিধার্থে ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজোশে পানির দামে বিক্রি করা হয়েছে গাছগুলো।
যেখানে বাজার দর ২০ লাখ টাকার বেশি, সেই গাছ মাত্র ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন পলিটেকনিক কর্তৃপক্ষ। দরপত্রে উল্লেখ নেই এমন গাছও কেটে নেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে দরপত্র লাভকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মানহা ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী পলাশ বলেন, আমি যে টাকায় দরপত্র নিয়েছি, সেই দামেও বিক্রি করতে বেগ পেতে হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে কাঠ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায় তেমন গতি না থাকায় ক্রেতা সংকটও রয়েছে। অপরদিকে এই গাছগুলো কেউ ব্যক্তিগত প্রয়োজনেও কিনবে না কারণ গাছের পরিমাণ বেশি। তাছাড়া আমার পক্ষে খুচরাও বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনের কাজ শুরু করবে ঠিকাদার।
যে কারণে গাছগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বিক্রির ব্যাপক তাগিদও রয়েছে। এ কারণেই লোকসানের পরার সম্ভাবনাও বেশি। এছাড়া গাছগুলো কাঠ ব্যবসয়ীদের কাছে বিক্রি করা ছাড়া উপায়ও নেই। ইতিমধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছে তারা সব গাছ দুই লাখ টাকার বেশি বলছে না। অথচ আমার ভ্যাট-ট্যাক্স, অফিস ও শ্রমিক খরচসহ প্রায় এর কাছাকাছি হবে। সেক্ষেত্রে তেমন কোন লাভ থাকবে না। এদিকে স্থানীয় একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীসূত্র জানায়, প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রোপন করা মেহগিনি ও রেইনট্রি গাছ রয়েছে অর্ধেকেরও বেশি। খোলা চোখে একেকটি মেহেগিনি গাছের আনুমানিক বাজার দর রয়েছে প্রায় ৩০/৩৫ হাজার টাকা। আর একই বয়সের প্রতিটি রেইনট্রি গাছের দাম রয়েছে প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা এবং প্রতিটি ২০/২৫ হাজার টাকা মূল্যের কড়াই গাছও রয়েছে প্রায় ৭/৮টি। পাশাপাশি অন্যান্য গাছ তো আছেই। তাহলে এতো কমমূল্যে কিভাবে এসব মূল্যমানের গাছের দরপত্র দেয়া হয়েছে? স্থানীয়দের এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে পলিটেকনিক ইনস্টিউটের অধ্যক্ষ মোঃ তানভির এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে।
যে ঠিকাদার সর্বোচ্চ মূল্য বলেছে সেই দরপত্র পেয়েছে। এখানে নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই কারণ কমিটির মাধ্যমেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে এবং উক্ত দরপত্র প্রচারের মাধ্যমেই আহবান করা হয়েছে। অপরদিকে অনুসন্ধানসূত্রে নগরীর চাঁদমারী এলাকার একাধিক কাঠ ব্যবসায়ী বলেন, রেইনট্রি গাছের সিএফটি বাজারদর হলো ৭শ’ টাকা, মেহেগিনি গাছের সিএফটি ১ হাজার টাকা, চাম্বল ৩শ’ টাকা এবং কড়াই গাছের ১২/১৬শ’ টাকা সিএফটি। এভাবে গাছের বর্তমান যে বাজারদর রয়েছে, তাতেও স্পষ্ট মাসতুতো ভাই সম্পর্কে ঠিকাদারকে কম মূল্যে দরপত্র পাইয়ে দেয়া হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ রাজনৈতিক নেতা জানায়, গাছগুলো তড়িঘরি করে কেটে রাতের আঁধারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং মাটির নিচের শিকড়ও উপড়ে ফেলা হয়েছে। যাতে বোঝা না যায় একেকটি গাছ কতটুকু পরিমাণে মোটা ছিলো।
এভাবে সরকারি গাছগুলো এতো কম মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে কার স্বার্থে কিসের স্বার্থে তা খতিয়ে দেখা উচিত। সরকারি সম্পদ এভাবে লুটপাট করায় রাজস্ব ফাঁকিরও অভিযোগ উঠেছে।