কলাপাড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১ পরিবার পাচ্ছে পাকা ভবন থাকছে সকল সুবিধা

দেশ জনপদ ডেস্ক | ২২:২৩, জানুয়ারি ০৬ ২০২১ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে লোন্দা, নিশানবাড়িয়া মৌজায় ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক দ্বিতীয় তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট আগামি ২০২৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে চালুর পরিকল্পনার কথা জানালেন নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠান রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। পরিকল্পনা রয়েছে ওই বছরের আগস্ট মাসে দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর। প্রকল্প বাস্তবায়নের সবচেয়ে জটিল কাজ জমি অধিগ্রণের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাঁচটি ধাপে এ পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভূমি উন্নয়নের কাজ প্রায় ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া যেসব পরিবারের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে; এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত ২৮১টি পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আধুনিক পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে। এখন চলছে বিউটিফিকেশন এর কাজ। পুনর্বাসিত এসব মানুষের সকল সুবিধা নিশ্চিতের লক্ষ্যে ২৫ একর জমিতে বাড়ি ছাড়াও মসজিদ, স্কুল, ক্লিনিক, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, সাইক্লোন শেল্টার, খেলার মাঠ, কবরস্থান, বাউন্ডারি দেয়াল, ভূমি সুরক্ষা, পুকুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খুব শীঘ্রই এসব বাড়ি হস্তান্তর করা হবে বলে জানালেন আরপিসিএল কর্তৃপক্ষ। পুনর্বাসন প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে ১৩২ কোটি টাকা। রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁদের প্রকল্প এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিফিং করে। লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন, পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পের (আরএনপিএল) প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ তৌফিক ইসলাম। এসময় সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কথা বলেন, প্রকল্প পরিচালক (ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও পুনর্বাসন) মোঃ সেলিম ভুইয়া। এখন অধিগ্রহণকৃত জমির বাড়ি-ঘর হারা মানুষগুলো পুনর্বাসনের পাকা ঘর বুঝে নেয়ার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুণছেন। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের তিন গুণ টাকা জমির মালিকদের প্রদানের বিষয়টিও জেলা প্রশাসনের এলএও শাখার মাধ্যমে চলমান রয়েছে। আরপিসিএল এবং চীনের নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ৫০ ভাগ মালিকানায় এই পাওয়ার প্লান্টটি নির্মিত হচ্ছে। বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এসময় আরএনপিএল এর নির্বাহী পরিচালক কিউইউই, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইপিসির প্রতিনিধি লিফুডং, প্রকল্প ব্যবস্থাপক মিঃ মিং প্রমূখ। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৯ হাজার দুইশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজির মাধ্যমে এ বিদ্যুত প্লান্টটি নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৬৯ কোটি টাকা ব্যয় (বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে) অধিগ্রহন, ভূমি উন্নয়ন, ভূমি সুরক্ষা, আবাসন, বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষের পথে। এ বিদ্যুত প্রকল্পের জন্য লোন্দা, ধানখালী ও নিশানবাড়িয়া মৌজায় মোট ৯১৫ দশমিক ৭৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। আরপিসিএল এর নির্বাহী পরিচালক, মোহাম্মদ সেলিম ভূইয়া নিশ্চিত করেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে গৃহপুনর্বাসনের কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য এক হাজার ৫০ বর্গফুট আয়তনের নির্দিষ্ট বাউন্ডারি ঘেরা পাকা ঘর তোলা হয়েছে। প্রত্যেক ঘরে তিনটি বেডরুমের পাশাপাশি খাবার ও রান্নাঘর রয়েছে। থাকছে বিদ্যুৎ সুবিধা। নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা, সড়ক বাতি, লেক। রয়েছে ড্রেনেজ ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা। সাত হাজার তিন শ’ ১৬ বর্গফুট এলাকা নিয়ে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মিত হয়েছে কবরস্থান, পুকুর। দুই হাজার দুইশ’ ৫৯ বর্গফুট এলাকায় একটি মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। থাকছে স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ। স্কুলসহ নির্মাণ হয়েছে বহুমুখি ব্যবহারের জন্য আটত্রিশ হাজার সাতশ’ ৩৬ বর্গমিটার এলাকায় একটি কমিউনিটি হল কাম আশ্রয়কেন্দ্র। রয়েছে খেলার মাঠ, মিনি পার্ক। থাকছে চার হাজার নয়শ’ বর্গমিটার এলাকা নিয়ে পুকুর। এছাড়া বিদ্যুৎ প্লান্ট এরিয়ার অবকাঠামোসহ রাস্তাঘাট উন্নয়ন এবং এখানকার মানুষের জীবন মান উন্নয়নে প্রকল্প থেকে উৎপাদিত প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ থেকে তিন পয়সা করে উন্নয়ন তহবিলে জমা হবে। যা ব্যয় হবে পুনর্বাসিত মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে। এছাড়াও এ প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণকৃতরা যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। বর্তমানে পাইলিংসহ মালামাল হ্যান্ডলিং জেটি, একসেস রোডসহ প্রকল্পের অফিস ও আবাসন সুবিধা নিশ্চিতের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের সামগ্রিক অগ্রগতি ২৬ দশমিক ৫৩ ভাগ। ব্রিফিং এ জানানো হয়েছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি ব্যবহার করা হবে। যাতে কয়লা পোড়ানোর ফলে ক্ষতিকর পদার্থের নিঃস্বরণ তুলনামূলক কম হবে। এছাড়া এফজিডি ও ইএসপি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে তৈরি করা হবে। এর কোন ছাই বা ধোঁয়া পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কারণ সরকারের নির্দেশনা অনুসারে ২২০ মিটার উচ্চতার চিমনির ব্যবহার থাকছে। এছাড়াও থাকবে এ্যাশপন্ড, যেখানে ৯৯ ভাগ ফ্লাইএ্যাশ বয়লার টিউবের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হবে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মিত হলে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন এবং নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুত সরবরাহে বিরাট ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বাসিন্দা শিক্ষক মোঃ ইকবাল বাহাদুর জানান, ক্ষতিগ্রস্তরা তিনগুণ পরিমাণ ক্ষতিপুরণের টাকা পাচ্ছেন এবং পুনর্বাসনে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করলে কোন সমস্যা নেই। তবে একাধিক জমির মালিকরা অভিযোগ করেন এলএও অফিসের জটিলতায় তারা হতাশ। এই টাকা তোলাকে কেন্দ্র একটি মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে উঠেছে। এই দালাল চক্রের সঙ্গে রয়েছে এলএও অফিসের একটি চক্রের যোগসাজোশ।