হাজিরা ফাঁকি দিতেই বায়োমেট্টিক মেশিন অকেজো

কামরুন নাহার | ২৩:৪৭, জানুয়ারি ২৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর সরকারি প্রতিষ্ঠানে হাজিরা ফাঁকি এবং ব্যবহারবিধি না জানায় অকেজো হচ্ছে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন। আবার ডিউটি ফাঁকি দিতে ইচ্ছেকৃতভাবে ভুলভাল টিপ দিয়ে মেশিন অকেজো করে রাখা হয়। এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ নিন্মমানের মেশিন দেয়ায় মেশিনটি বারবার হ্যাং হয়ে থাকে। এরপর ঠিক করতে আবার মাস পেরিয়ে যায়। এনিয়ে সদর হাসপাতালের পরিসংখ্যান কর্মকর্তা (বায়োমেট্টিক দেখভালকারী) সঞ্জয় বলে, ২০১৯ সালের শেষের দিকে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন স্থাপন করা হয়েছে এবং এর মাস খানেক পরে অকেজো হয়ে যায়। পরবর্তীতে চলতি মাসের তিন তারিখ ঠিক করা হয়। কারণ হিসেবে তিনি আরো বলে, কতিপয় জনবল না বুঝে আঙ্গুলের স্ক্যান করা স্থানটি অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করে যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে ফেলে, যার ফলে মেশিনটি অকেজো হয়ে যায়। আর আঙ্গুল স্ক্যান করার ক্ষেত্রে একটু সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে যেমন আঙ্গুলটিতে ময়লা থাকলে স্ক্যান হয়না এরপর পানি দিয়ে আঙ্গুলটি পরিস্কার করে নিলে তখন বায়েমেট্টিকে স্ক্যান হয়। কিন্তু এ কাজটি অনেকে না করে বারংবার স্ক্যানের উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে এবং এতেই বিপত্তি ঘটে। অথচ হাসপাতালটির একাধিক হাজিরা প্রদানকারী জানায়, একবারে আঙ্গুল স্ক্যান হয়না মেশিনে, তখন বারবার দিতে হয়। আবার কয়েকবার দিতে থাকলে হ্যাংও হয়ে যায়। এদিকে বায়োমেট্টিক হাজিরা পদ্ধতি হওয়ায় দেরীতে উপস্থিত হওয়া ও কর্মঘন্টার আগেই চলে যাওয়ার পুরানো সংস্কৃতি টানতে না পারায় অনেকেই ইচ্ছেকৃতভাবে এ হাজিরা অকেজো করে রাখে বলে সুত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক বরিশাল জেলা সিভিল সার্জন ডা: মনোয়ার হোসেন বলেন, বায়োমেট্টিক হাজিরার কক্ষে অচিরেই সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে আর এতে আরো স্পষ্ট হবে কিভাবে হাজিরার এ মেশিন অকেজো হয়। তবে এখন ডিজিটাল এই হাজিরা সচল রয়েছে। এনিয়ে তিনি আরো বলেন, বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিনের সাধারন কোন সমস্যা হলে অল্প টাকায় স্থানীয়ভাবে মেরামত করে থাকি। আর যদি অসম্ভব হয় তখন ঢাকা এমআইএস শাখায় পাঠানো হয় এরপর তারা রিপ্লেস করে দেয়। অপরদিকে দখিন জনপদের সর্বোচ্চ চিকিৎসাস্থল শেবাচিম হাসপাতালেও বায়োমেট্টিক হাজিরার মেশিনও একইভাবে বিকল হয়। কিন্তু হাসপাতালের কম্পিউটার অপারেটররা তা ৪/৫ ঘন্টার মধ্যেই ঠিক করে দেয়। এনিয়ে হাসপাতালটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম অপ্রকাশের শর্তে বলে, বায়োমেট্টিক মেশিনে দৈনিক ২/৩ হাজার হাজিরা গ্রহনের সক্ষমতা থাকলেও তা ২/৩শ হাজিরা নেয়ার পরপরই হ্যাং হয়। এরমধ্যে ইন্টারনেট সংযোগের বিঘœতাও রয়েছে বলে ভুক্তভোগীসুত্রে জানা গেছে। এনিয়ে হাসপাতালটির পরিচালক ডা: বাকির হোসেন বলে, মন্ত্রণালয় থেকে বায়োমেট্টিক হাজিরা মেশিন সেট করে দিয়েছে এবং এটির কোন সমস্যা হলে তাদের উদ্যোগেই মেরামত করা হয়। আর যেহেতু এটি আমাদের জনবলদের কাছে নতুন পদ্ধতি তাই পুরোপুরি অভ্যস্থ হয়ে গেলে বায়োমেট্টিক নিয়ে যে সমস্যা তা থাকবেনা। আর এধরণের সমস্য তেমন জটিল নয়। শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও অফিস স্টাফসহ প্রায় ৩ শতাধিক জনবল রয়েছে। দৈনিক তিন সিফটে হাজিরা দিতে হয় হাসপাতালটির জনবলদের। এরমধ্যে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে রাত হয়ে পরেরদিন সকাল পর্যন্ত। কারণ ২৪ ঘন্টাই হাসপাতালে ডিউটিরত থাকে চিকিৎসক নার্স ও অন্যান্য জনবল। এদিকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতেও বায়েমেট্টিক হাজিরা বসানোর কাজ চলছে এবং এরমধ্যে এ মেশিন স্থাপনের পর যে সমস্যা তৈরী হচ্ছে তা এ নতুন প্রযুক্তির সাথে ক্রমশ অভ্যস্ততা হওয়ায় তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছে বলে সুত্রে জানা গেছে। নগরীর পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, ডিসি অফিস, গণপুর্তসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে হাজিরা ফাঁকি রুখতে বায়োমেট্টিক হাজিরা স্থাপিত হয়েছে।