নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে রুপাতলী হাউজিং কর্তৃপক্ষের জায়গা দখল করে অনুমতি ছাড়াই গড়ে উঠেছে শতাধিক দোকানের বাজার। প্রতিদিনই বাজারের দোকানগুলো থেকে ইজারা আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। সূত্রে জানাযায়, করোনা মহামারীর শুরুর দিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাজার চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে তৎকালীন সময়ে পুলিশ এসে ফুটপাত থেকে বাজারটি স্থানান্তর করে হাউজিংয়ের জায়গায় বসিয়ে দেয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অল্প কিছু দোকান স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু পরবর্তীতে হাউজিংয়ের ওই জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয় মাছ, মাংস, সবজিসহ নিত্য পণ্যের শতাধিক দোকানের একটি পূর্ণাঙ্গ বাজার। এখন স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রতিদিনই ওই বাজার থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। এদিকে স্থানীয় ওই প্রভাবশালী মহলের দাবী, তারা বাজারের ওই জায়গা সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়েছে। অপরদিকে হাউজিং কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা হাউজিংয়ের কোন জমি বাজারের জন্য কাউকে ইজারা দেয়নি। এমনকি দোকানীদের কাছ থেকে ইজাড়া আদায়ের ব্যাপারটি জানে না দপ্তরটি।
এ নিয়ে ইজাড়াদার ও হাউজিং কর্তৃপক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য মিলেছে। এ নিয়ে ২৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিস শরিফ বলেন, হাউজিংএ ঢুকতে ডান পার্শ্ব লাগোয়া যে বাজারটি গড়ে উঠেছে তা হাউজিং কর্তৃৃপক্ষের সুপার মার্কেটের অংশ এবং তারা এখন পর্যন্ত ইজাড়া দেয়নি। তাহলে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে উক্ত জায়গা ইজাড়া দিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাউজিংয়ের জায়গা কিভাবে বিসিসি ইজারা দেয় আমার বোধগম্য নয়। এদিকে এ নিয়ে বিসিসির হাট বাজার শাখার কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, মহানগরের আওতায় যে জায়গা রয়েছে তা সিটি কর্পোরেশন ব্যবহার করতে পারবে। শুধু তাই নয়, সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে যেখানেই বাজার মিলবে তা ইজারা নিয়ে চালাতে হবে।
অপরদিকে রুপাতলী হাউজিং দপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, ওই স্থানটিতে একটি সুপার মার্কেট করার জন্য আমাদের একটি পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে সে লক্ষ্যে ঢাকা থেকে একটি কমিটি এসে পরিদর্শনও করে গেছে এবং সীমানা প্রাচীর নির্মাণেরও কাজ শেষের দিকে। তাহলে ওই মাছ বাজারটি কি ইজাড়া দেয়া হয়েছে এসময় তিনি বলেন, আমাদের দপ্তরের পক্ষ থেকে কোন ইজাড়া দেয়া হয়নি কারণ দেশের অন্যান্য হাউজিংয়ের মতো এখানেও একটি হাউজিং সুপার মার্কেট নির্মিত হবে। আর সেলক্ষ্যে ইতিমধ্যে দাপ্তরিক কার্যক্রমও অনেক দূর এগিয়েছে।
কিন্তু উক্ত ভাসমান বাজারটি থেকে দৈনিক যে চাঁদা আদায় হয়, তা কি আপনার দপ্তরে রাজস্ব হিসেবে জমা হয় কিনা জানতে চাইলে উপ-সহকারি প্রকৌশলী বলেন, ওই বাজার থেকে কোন রাজস্ব আমাদের দপ্তরে জমা হয় না। কে বা কারা টাকা উঠায় তাও আমরা জানি না এবং এতে আমাদের দপ্তরের কেউই জড়িত নয়। তাহলে আপনাদের জায়গা দখল করে যে বাজার গড়ে উঠেছে এবং সেখান থেকে দৈনিক যে চাঁদা আদায় করা হয় সেক্ষেত্রে আপনাদের কি করনীয় জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীর সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য পুলিশ কমিশনার এবং ডিসির নির্দেশে বাজারটি হাউজিংয়ের জায়গায় স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকেই বাজারটি ওখানে বসছে। তবে চাঁদা উত্তোলনের ব্যাপারটি আমার জানা নেই। শীঘ্রই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আনা হবে। সরেজমিন সূত্রে জানা গেছে, হাউজিং সুপার মার্কেটের জায়গায় গড়ে ওঠা বাজারের প্রতিটি দোকান থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন হারে চাঁদা উত্তোলন করা হয়।
বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা, গোশতের দোকান থেকে ২০০ টাকা, মুরগির দোকান থেকে ১৫০ টাকা, মুদির দোকান থেকে ১০০ টাকা, তরকারির দোকান থেকে ১০০ টাকা এবং চায়ের দোকান থেকে ৫০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হয়। আর এই চাঁদা আদায় করেন ওই বাজারের স্থানীয় মাংস ব্যবসায়ী ফিরোজ। তিনি বলেন, আমি এই বাজার থেকে ইজারা বাবদ টাকা উঠায় কিন্তু আমি ইজারাদার না। ২৫নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি মাসুম ভাই, সাধারণ সম্পাদক রনি ভাই ও মহানগর আলীগ নেতা মনির মোল্লা ভাইয়ের নির্দেশে বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করি। পরে সব টাকা কালেকশন করা হলে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেই।
এ নিয়ে উক্ত ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মাসুম বলেন, বাজারের বিষয়টি আমি ভালো বলতে পারবো না। ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক রনি বিষয়টি জানে। আপনি তার সাথে যোগাযোগ করুন। এ বিষয়ে ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রনি বলেন, এই বাজারটি সিটি কর্পোরেশন থেকেই আমরা ইজারা নিয়েছি। কিন্তু বাজারের জায়গা তো সরকারি হাউজিং কর্তৃপক্ষের তাহলে আপনারা ইজারা নিলেন কিভাবে? এসময় তিনি আরো বলেন, বিসিসি আমাদেরকে কিভাবে দিয়েছে তা আমরা জানি না। সেটা বিসিসি’র কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমরাতো টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। এদিকে নাম না প্রকাশের শর্তে ওই ভাসমান বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানায়, আমাদের কাছ থেকে ইজারার নামে যে টাকা নেয়া হচ্ছে তা দিতে হিমশিম খাচ্ছি কারণ করোনার মধ্যে বেচাকেনা কম।
এর মধ্যে প্রতিদিন ১৫০/২০০ টাকা দেয়া খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়াও ইজারার টাকা বাদে বিভিন্ন ধরনের টাকা দিতে হচ্ছে এলাকার অনেক বিষয়েই। এ থেকে যদি পরিত্রাণ পাওয়া যেতো তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে দুটো ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারতাম নতুবা দিনদিন ঋণের বোঝা ভারীই হয়ে যাচ্ছে।