আন্ডার মেট্রিক ব্যক্তি হলেন স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি

কামরুন নাহার | ২৩:৩১, জানুয়ারি ২৩ ২০২০ মিনিট

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সভাপতি হতে নূন্যতম স্নাতক পাশ বাধ্যতামুলক। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখালেন বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের ১৬৮ নং খয়েরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শত আপত্তি থাকা সত্যেও মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরানো ব্যক্তিকে করা হয়েছে ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। অভিযোগ উঠেছে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক তড়িঘরি করে বাদশা হাওলাদার নামের ব্যক্তিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মনোনিত করা হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি তুলেছেন মাধ্যমিকের গন্ডি না পেরানো ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে সু-শিক্ষিত ব্যক্তিকে সভাপতি করার। জানাগেছে, ২০১৭ সালের ৩১ অক্টোবর খয়েরদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন রুস্তম আলী ফরাজী। ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর তার মৃত্যুতে শূণ্য হয়ে সভাপতি পদ। এজন্য চলতি বছরের গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সভাপতির শূণ্য পদ নিয়ে চলছিলো ম্যানেজিং কমিটির কার্যক্রম। গঠাৎ করেই গত দু’দিন পূর্বে স্কুলের শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় অভিভাবকরা জানতে পারেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জাগুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার বাদশা হাওলাদারকে। স্কুলের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ছালেক সরদার বলেন, ‘সভাপতির মৃত্যুর পরে গত ১৮ জানুয়ারি ম্যানেজিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ক্রীড়া অনুষ্ঠান, মিড ডে মিল এজেন্ডা নিয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভার মাধ্যমে কমিটির সহ-সভাপতি, ইউপি সদস্য এবং ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সভাপতি বাদশা হাওলাদারকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বলেন, ওই সভায় ম্যানেজিং কমিটির ১১ জন সদস্য’র মধ্যে ৬ জন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া দু’জন অনুপস্থিত থাকলেও তারা মুঠোফোনের মাধ্যমে বাদশা হাওলাদারকে সভাপতি করার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। তাই চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত তাকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য শহীদুল হক চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, ‘অনেকটা লুকোচুরি করে ম্যানেজিং কমিটির সহ-সভাপতি বাদশা হাওলাদারকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমি ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য হওয়া সত্যেও তাকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে আমার মতামত গ্রহন করা হয়নি। এমনকি মিটিং করা হয়েছে বলে দাবি করা হলেও সেখানে আমাকে ডাকও হয়নি। বিষয়টি জানার পরে প্রধান শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর দিতে পারেনি। স্থানীয় অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ‘যাকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করা হয়েছে তার শিক্ষগত যোগ্য নেই। তিনি মাধ্যমিকের গন্ডিও পেরুতে পারেননি। তিনি এক সময় গরুর কারবারি ছিলেন। শুধু তাই নয়, তার চারিত্রিক বৈশিষ্টও ভালো নয়। অথচ তাকে সভাপতি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকেও বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, ‘স্কুলটিতে মোট ৫ জন শিক্ষক। এর মধ্যে একজন পিটিআইতে আছেন। আরেকজন আছেন ছুটিতে। তিন জনের মধ্যে প্রধান শিক্ষক হেনারা পারভীন নিয়মিত স্কুলে আসেন না। বাকি দু’জন শিক্ষকের উপর ভর করে চলছে ৮৭ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান। স্থানীয়দের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব অবহেলার কারণে স্কুলটির শিক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পড়েছে। শুধু তাই নয়, অশিক্ষিত ব্যক্তিকে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করেও তিনি আর্থিক সুবিধা ভোগ করেছেন বলে অভিযোগ অভিভাবক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক হেনারা পারভীন বলে, ‘এখানে কোন অবৈধ লেনদেন বা অনিয়ম হয়নি। শিক্ষা অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শ অনুযায়ী বাদশা হাওলাদারকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমান দিতে পারলে তার যে শাস্তি তা মেনে নিবো। তিনি বলেন, ‘যে সদস্য অভিযোগ করেছেন তার মোবাইল নম্বর আমার কাছে ছিলো না। তাই তাকে ম্যানেজিং কমিটির সভায় ডাকা সম্ভব হয়নি। এটা আমার ব্যর্থতা সেটা মেনে নিচ্ছি। তাছাড়া যেহেতু সভাপতিকে নিয়ে অভিযোগ উঠেছে এখন আমাদের নির্বাচন নিয়ে ভাবতে হবে। আগামি দুই মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।